Advertisement
E-Paper

সদর্থক

ইরানের পরমাণু জ্বালানি তৈয়ারির ক্ষমতা নির্দিষ্ট সীমায় বাঁধিয়া রাখার জন্য সম্পাদিত চুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস সম্প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা। বিশ্বের ছয় শক্তিধর রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি ও চিন বিগত কয়েক বছর যাবত্‌ই ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে মারণাস্ত্র নির্মাণের অভিমুখ হইতে নিরস্ত করিতে আলোচনা চালাইতেছে।

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৪ ০০:০০

ইরানের পরমাণু জ্বালানি তৈয়ারির ক্ষমতা নির্দিষ্ট সীমায় বাঁধিয়া রাখার জন্য সম্পাদিত চুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস সম্প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা। বিশ্বের ছয় শক্তিধর রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি ও চিন বিগত কয়েক বছর যাবত্‌ই ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে মারণাস্ত্র নির্মাণের অভিমুখ হইতে নিরস্ত করিতে আলোচনা চালাইতেছে। তুমুল দরকষাকষির মধ্য দিয়া ইরানকে পরমাণু জ্বালানি তৈয়ারির ক্ষমতা হ্রাস করিতে বাধ্য করিয়া বিনিময়ে তাহার উপর জারি আর্থিক নিষেধাজ্ঞা অংশত শিথিল করার চুক্তিটি ছয় মাসে আগের। এমন একটি চুক্তি ইরানকে পরমাণু বোমা বানাইতে ছাড়পত্র দেয়, এই যুক্তিতে মার্কিন সেনেটে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ইতিপূর্বে তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হইতে হইয়াছে। তথাপি তিনি ইরানকে নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত রাখার প্রচেষ্টা চালাইয়াছেন। ইরানও ছয় দেশের আবেদনে সাড়া দিয়া তাহার কর্মসূচিতে অন্তত সাময়িক ভাবে নিয়ন্ত্রণ জারি করিয়াছে। ছয় মাস পর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করিতে ভিয়েনায় যে বৈঠক হইতেছে, সেখানেও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার উপরেই উভয় পক্ষ জোর দিয়াছে।

ইহা একটি সদর্থক ঘটনা, বিশেষত পশ্চিম এশিয়ায় সাম্প্রতিক পরিস্থিতির নিরিখে। বিশেষত ইরাক ও সিরিয়ায় শিয়া জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সুন্নি জেহাদিরা যে গণহত্যা অভিযান চালাইতেছে, তাহাতে ইরানের পক্ষে যুদ্ধপ্রক্রিয়ায় জড়াইয়া পড়ার সমূহ আশঙ্কা। লেবাননও যখন ইজরায়েলের গাজা অভিযান দুর্বল করিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করিয়াছে, তখন হুমকি অপেক্ষা শান্তি বৈঠকের আবশ্যকতা বেশি। ইরানকে যদি নিরস্ত্রীকরণের আলোচনায় ব্রতী রাখা যায়, তাহার উপর হইতে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা ক্রমে শিথিল করিয়া আন্তর্জাতিক মঞ্চে সমমর্যাদায় টানিয়া আনা যায়, তাহাতে বিশ্বশান্তির স্বার্থই সিদ্ধ হইবে। সিরিয়ায় যেমন চাপ সৃষ্টি এবং বহুপাক্ষিক আলোচনা, উভয় পদ্ধতিরই মিলিত সুফলে বাশার-আল-আসাদের অস্ত্রাগার হইতে রাসায়নিক মারণাস্ত্র উদ্ধার করিয়া ধ্বংস করিয়া ফেলার দুরূহ কাজটি সিদ্ধ হইয়াছে।

মার্কিন বিদেশ সচিব জন কেরি এবং ইরানি বিদেশমন্ত্রী মহম্মদ জাভেদ জারিফ যে অন্য পাঁচ দেশের প্রতিনিধিদের সহিত বৈঠকে পরমাণু জ্বালানি উত্‌পাদনের ক্ষেত্রে সীমিত ক্ষমতায় আপাতত তুষ্ট থাকার ঐকমত্যে পৌঁছাইতে পারিয়াছেন, ইহা কম কথা নয়। একটা সময় তো দুই পক্ষের মুখ-দেখাদেখিও বন্ধ ছিল। কেবল পারস্য উপসাগরে মার্কিন নৌবহরের জোরালো উপস্থিতি আর তেহরানকে আক্রমণের হুমকি এবং ইরানি প্রত্যাঘাতের পাল্টা হুঁশিয়ারিতেই পশ্চিম এশিয়া জর্জরিত হইতেছিল। কোরীয় উপদ্বীপে যেমন উত্তর কোরিয়ার স্বৈরশাসক কিম-জং-আন এই মুহূর্তে নিজে দাঁড়াইয়া থাকিয়া একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র উত্‌ক্ষেপণ পরীক্ষা করিতেছেন দক্ষিণের সমুদ্রসীমার কাছেই। তাঁহার পরমাণু মারণাস্ত্র তৈয়ারির কর্মসূচিও অব্যাহত, যেমন অব্যাহত ঘন-ঘন আস্ফালন ও হুমকি সঞ্জাত উত্তেজনা। তুলনায় পারস্য উপসাগর এখন শান্ত, ইরান এখন আর জর্জ ডব্লিউ বুশ-এর ‘শয়তানি অক্ষ’ ভুক্ত নয়। দরকষাকষির মধ্য দিয়া উভয় পক্ষই নিজ-নিজ অধিকার ও এক্তিয়ারের সীমা প্রসারিত করিতে চাহিবে। রাতারাতি কোনও সমাধানের আশা এ ক্ষেত্রে মূঢ়তা। আলোচনা চলিতে থাকুক এবং ইরানকে চুক্তির আওতায় রাখিয়া স্থিতাবস্থা বজায় রাখার সুযোগ দেওয়া হউক।

anandabazar editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy