দেশের সেরা ‘স্টেট পাবলিক ইউনিভার্সিটি’ হিসাবে প্রথম স্থান দখল করল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশনাল র্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্ক’-এর (এনআইআরএফ) তালিকা প্রকাশ করেন। তারই মধ্যে দেশের সেরা ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নবম স্থানে এবং সেরা ১০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৮তম স্থানে জায়গা করে নিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।
২০২৫-এর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশনাল র্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্ক (এনআইআরএফ) অনুযায়ী সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। চলতি বছরে সংশ্লিষ্ট র্যাঙ্কিং-এর জন্য ১৪,১৬৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নাম নথিভুক্ত করেছে। তার মধ্যে সার্বিক ভাবে সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে নির্বাচিত হয়েছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি), মাদ্রাজ। সেই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স, বেঙ্গালুরু। ষষ্ঠ স্থানে আইআইটি খড়্গপুর। ১৮তম স্থানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। ৪৭ তম স্থানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৬৭তম স্থানে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার), কলকাতা রয়েছে।
অন্য দিকে সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে নির্বাচিত হয়েছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স, বেঙ্গালুরু। ওই তালিকার নবম স্থানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, ৩৯ তম স্থানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
এ দিনের অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান অবশ্য ‘নাক’, ‘এনআইআরএফ’-এর মতো মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ত্রুটি রয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, “বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির গবেষণা ও পেশাদার কর্মপদ্ধতি যদি মূল্যায়নের মানদণ্ড হতে পারে, সে ক্ষেত্রে নতুন উদ্যোগপতিদের উত্থানের বিষয়টিও এর আওতায় আনা উচিত।”
এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিং ব্যবস্থা দ্রুত চালু করার কথাও জানান শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, “সমস্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির কার্যক্রম ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান ডেটা’ হিসাবে মূল্যায়ন করা হবে।”
রাজ্যের সেরা কারা?
দেশের সেরা কলেজের তালিকায় প্রথম ১০-এ কলকাতার দু’টি প্রতিষ্ঠান, রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ সেন্টেনারি কলেজ (ষষ্ঠ স্থান) এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ (অষ্টম স্থান), জায়গা করে নিয়েছে। একই ভাবে, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সেরার তালিকায় ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজেমেন্ট (আইআইএম), কলকাতা সপ্তম স্থানে রয়েছে।
আর্কিটেকচার অ্যান্ড প্ল্যানিং বিভাগে সারা দেশে আইআইটি খড়্গপুর তৃতীয় স্থানে এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইআইইএসটি), শিবপুর চতুর্থ স্থানাধিকার করেছে। সেরা আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় চতুর্থ স্থানে জায়গা করে নিয়েছে কলকাতার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ জুরিডিক্যাল সায়েন্সেস।
কী ভাবে তথ্য সংগ্রহ করে এনআইআরএফ?
সর্বভারতীয় এই র্যাঙ্কিং-এর মাধ্যমে দেশের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সূচকের ভিত্তিতে সেরার সেরা তালিকায় স্থান দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের উদ্যোগে এই বিশেষ র্যাঙ্কিং দেওয়া হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানগুলির শিক্ষাদান, শেখার পদ্ধতি ও শিক্ষা সম্পদ, গবেষণা ও পেশাদার কর্মপদ্ধতি, স্নাতকের ফলাফল, প্রসার ও অন্তর্ভুক্তি এবং বোঝার ক্ষমতা বা উপলব্ধি— এই সমস্ত ক্ষেত্রের খুঁটিনাটি তথ্য যাচাই করে তালিকা পেশ করে এনআইআরএফ।
কেন্দ্রের বিচারে ‘স্টেট পাবলিক ইউনিভার্সিটি’গুলির মধ্যে সেরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়! ছবি: সংগৃহীত।
নতুন নিয়ম:
২০২৫-এ ‘গবেষণা ও পেশাদার কর্মপদ্ধতি’ মাপকের ক্ষেত্রে কোনও প্রতিষ্ঠান যদি তাদের কোনও গবেষণাপত্র প্রত্যাহার করে, তার ভিত্তিতে নেগেটিভ মার্কিং করা হবে বলে জানানো হয়েছিল।
চলতি বছরে ‘সাস্টেনেবেল ডেভেলপমেন্ট গোল’ বা সুস্থায়ী উন্নয়ন সংক্রান্ত আরও একটি মাপক যোগ করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলি সুস্থায়ী পরিকাঠামো কী ভাবে মেনে চলছে, লিঙ্গসাম্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পড়াশোনার দিকে কতটা জোর দিচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।
বিতর্ক:
২০১৫ সালে দেশের শিক্ষা মন্ত্রকের তরফে কেন্দ্রীয় ভাবে এই র্যাঙ্কিং ব্যবস্থা চালু করা হয়। তবে এই এনআইআরএফ র্যাঙ্কিং ঘিরে নানা সময়ে বিতর্কও দানা বেঁধেছে। ২০১৭ সালের মাদ্রাজ হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলাতেও প্রশ্ন ওঠে, র্যাঙ্কিং তালিকা প্রকাশের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলি নিজেরাই সমস্ত তথ্য অনলাইনে জমা দেয়, সে ক্ষেত্রে সেই তথ্য দ্বিতীয় বার যাচাই না হওয়ায় অনেক জালিয়াতিরও সুযোগ রয়ে যায়, তা হলে এই তালিকাকে মান্যতা দেওয়ার অর্থ কী?
যদিও কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের সচিব বিনীত জোশী জানিয়েছেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে যে তথ্য পাঠিয়েছে, তা এ বার ত্রিস্তরীয় পদ্ধতিতে যাচাই করে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও অফলাইনে নথি পাঠিয়ে প্রতিষ্ঠানের কাজ সম্পর্কে তথ্য যাচাই করা হয়েছে। তিনি এ-ও বলেন, “পড়ুয়াদের সঠিক দিশা দেখাতেই এই বিশেষ তালিকা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। অথচ, একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপনের মতো ব্যবহার করে চলেছে, যা অনৈতিক।”
তালিকা তৈরির পদ্ধতি:
যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান এই তালিকায় যুক্ত হওয়ার জন্য নাম নথিভুক্ত করেছে, কেন্দ্র তাদের কাছ থেকেই তথ্য সংগ্রহ করেছে। পাশাপাশি একটি সমীক্ষাও চালানো হয়েছে বলে দাবি। সংগৃহীত তথ্য এবং সমীক্ষা রিপোর্টের ভিত্তিতেই বিভিন্ন সূচকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানগুলিকে। আবার সার্বিক ভাবে ওই প্রতিষ্ঠানগুলির উৎকর্ষের বিচারে একটি ক্রমাঙ্ক তৈরি করা হয়। এই দু’টিকে মিলিয়েই বিষয় এবং শাখাভিত্তিক সেরা প্রতিষ্ঠানগুলির তালিকা তৈরি করা হয়।