তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় ক্রমশ বাড়ছে মানুষের ইন্টারনেট-নির্ভরতা। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৬৮ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন। ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইট অথবা সমাজমাধ্যমেই বেশির ভাগ সময় কাটান তাঁরা। পড়াশোনা, চাকরি, খবর, বিকিকিনির মতো একাধিক বিষয় নিয়ে অবিরাম স্ক্রোলিং, ক্লিক হয়েই চলেছে।
এই সমস্ত বিষয়ের তথ্য ২ কোটিরও বেশি ওয়েবসাইট ঘেঁটে জেনে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সংস্থাগুলির লক্ষ্যই হল তাদের ওয়েবসাইটে গ্রাহক আকর্ষণ করা। মানুষ যাতে সহজে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন, বা আরও বেশি সময় কাটান, তার জন্যই একে আকর্ষণীয় ভাবে সাজানো হয়ে থাকে। এই বিশেষ ভাবে ডিজ়াইন করার কাজটি করে থাকেন ওয়েবসাইট ডিজ়াইনার।
কী কাজ করেন তাঁরা?
বিষয়ের নিরিখে কোন ওয়েবসাইটে কেমন ছবি থাকবে, কোন রঙ দিয়ে সাজালে ব্যবহাকারীদের বেশি আকর্ষণীয় মনে হবে, তথ্যভিত্তিক পেজের ক্ষেত্রে কোন কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিএমএস) যথোপযুক্ত হতে পারে— এ সমস্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করেন ওয়েবসাইট ডিজ়াইনাররা।
এই পেশায় আসতে আগ্রহীদের প্রথমে বেশ কিছু কোর্স করতে হবে। তবেই কাজের সুযোগ মিলতে পারে। কোথায়, কী কোর্স করানো হয়ে থাকে, তারই খোঁজ রইল—
ব্যবহাকারীদের কথা মাথায় রেখে ওয়েবসাইট ডিজ়াইনের কাজটি করতে হয়। প্রতীকী চিত্র।
দ্বাদশের পর প্রস্তুতি:
সিবিএসই বোর্ডের অধীনে কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি বিষয়টি পড়ানো হয়ে থাকে। তারই অধীনে এইটিএমএল, সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট শেখানো হয়, যা ওয়েবসাইট তৈরি করতে এবং সাজাতে কাজে লাগে। উল্লেখ্য, এই সবই হল ওয়েবসাইট তৈরির বিশেষ ‘ল্যাঙ্গুয়েজ়’। এই ভাষায় সড়গড় হতে পারলেই শুরুটা সহজ।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়ন সংসদ, সেন্টাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওপেন স্কুলিং-এর তরফে উল্লিখিত বিষয়টি বৃত্তিমূলক কিংবা ইলেক্টিভ বিষয় হিসাবে পড়ানো হয়ে থাকে।
উচ্চশিক্ষার সুযোগ:
- নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ‘ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডিজ়াইন’ বিষয়ে এক বছরের একটি ডিপ্লোমা কোর্স রয়েছে। ওই কোর্সটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ভোকেশনাল স্টাডিজ়-এর অধীনে করানো হয়।
- কেন্দ্রীয় বৈদ্যুতিন এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘ফিউচারস্কিলস প্রাইম’-এর তরফে ওয়েবসাইট তৈরি করা এবং সাজানোর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য তাঁদের ওই ওয়েবসাইট মারফত নাম নথিভুক্ত করে নিতে হবে।
- স্কিল ইন্ডিয়া ডিজিটালে ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের তরফে ওয়েব ডিজ়াইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক একটি অনলাইন কোর্স করানো হয়। এই কোর্সটি যে কোনও ব্যক্তি করার সুযোগ পেতে পারেন।
- ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং-এর ওয়েব ডিজ়াইনিংয়ে ডিপ্লোমা কোর্সটি করতে পারবেন দ্বাদশ উত্তীর্ণেরাও।
- এ ছাড়া, রাজ্য-সহ দেশের বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ব্যাচেলর অফ কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন (বিসিএ) ডিগ্রি এবং মাস্টার অফ কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন (এমসিএ) ডিগ্রির অধীনে ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট ডিজ়াইন সংক্রান্ত বিষয়গুলি পড়ানো হয়ে থাকে।
ওয়েবসাইট ডিজ়াইন বিষয়টি আলাদা করে সে ভাবে কোনও সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয় না। প্রতীকী চিত্র।
কোর্স ফি:
সরকারি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে বিসিএ এবং এমসিএ ডিগ্রি কোর্সের জন্য মোট ১০ হাজার টাকা থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ফি লাগতে পারে।
বেসরকারি ক্ষেত্রে ডিগ্রি কোর্সের জন্য ১ লক্ষ টাকা থেকে ৪ লক্ষ টাকা প্রতি বছরে খরচ করতে হবে।