Advertisement
E-Paper

যাদবপুরে বহুত্ববাদের ঐতিহ্য স্মরণ করিয়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা! হিজাব বির্তকের মাঝে বার্তা উপাচার্যের

সমাবর্তন অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় বিতর্ক। গত ৩০ ডিসেম্বর রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের সদস্যেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কথা বলেন উপাচার্য-সহ অন্য শিক্ষক-আধিকারিকদের সঙ্গে। দেওয়া হয় একগুচ্ছ প্রস্তাব।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:৫৫
Jadavpur University

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত।

হিজাব বিতর্কে টালমাটাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। তারই মধ্যে বর্ষশেষে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বহুত্ববাদের মর্যাদা রক্ষায় দায়বদ্ধ থাকার কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য। বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও অন্য সদস্যদের উদ্দেশে এক বার্তায় তিনি নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান। সেই সঙ্গে তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ঐতিহ্যের প্রসঙ্গ। কোনও রকম প্ররোচনায় পা দেওয়া থেকেও সকলকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন।

মনে করা হচ্ছে, যাদবপুরে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হিজাব বিতর্কের প্রেক্ষিতেই এই বার্তা দিলেন উপাচার্য। যদিও তাঁর লেখনীতে কোথাও স্পষ্ট হয়নি সাম্প্রতিক প্রসঙ্গটি। এ দিন উপাচার্য লেখেন, “জ্ঞান, যুক্তিবাদ এবং জনসেবার আদর্শে উদ্বুদ্ধ এই বিশ্ববিদ্যালয় বহু কাল ধরেই বিভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি, ভাবনা ও বিশ্বাসের মিলনক্ষেত্র। এই বহুত্ববাদের ঐতিহ্য একদিনে গড়ে ওঠেনি, বরং এই শক্তি আমাদের দীর্ঘ চর্চার ফল।”

গত ২২ ডিসেম্বর ইংরেজি তৃতীয় বর্ষের এক ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছাত্রীকে পরীক্ষা চলাকালীন পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে কথা বলেন বিভাগীয় প্রধান। কর্তৃপক্ষের তরফে জানা গিয়েছে, ওই পরীক্ষায় বার বার নকলের অভিযোগ উঠছিল বলেই কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বিভাগীয় প্রধান এবং এক মহিলা গবেষকের উপস্থিতিতে ওই ছাত্রী নিজেই মাথার কাপড় খুলে দেখান তাঁর কাছে কোনও বৈদ্যুতিন যন্ত্র নেই। তার পর বিভাগীয় প্রধান ছাত্রীর কাছে দুঃখপ্রকাশ করে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেন। অতিরিক্ত ১০ মিনিট সময়ও দেওয়া হয় তাঁকে।

প্রাথমিক ভাবে কোনও আপত্তি তোলেননি ছাত্রী। কিন্তু ২৪ ডিসেম্বর সমাবর্তন অনুষ্ঠানের পর কিছু পড়ুয়া বিক্ষোভ দেখান এই ঘটনার প্রেক্ষিতে। যদিও তাঁরা কেউ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র নন। অভিযোগ দায়ের হয় রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনে। ৩০ ডিসেম্বর কমিশনের সদস্যরা এসে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছেন। যদিও তার আগেই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন কর্তৃপক্ষ। ইংরেজির বিভাগীয় প্রধানকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠেছে বার বার। এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গিয়েছে কর্তৃপক্ষের তরফে।

বুধবার উপাচার্য অবশ্য অতিরিক্ত কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের কথাই মনে করিয়ে দিতে চাই আমরা। আর কিছু নয়।” এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গড়া তদন্ত কমিটিতে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দেবব্রত দাস ও যাদবপুরের অধ্যাপক কামরান মণ্ডলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে আচার্য মনোনীত প্রতিনিধি কাজী মাসুম আখতারকে নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন ইংরেজি বিভাগের পড়ুয়াদের একাংশ। শুধু তা-ই নয়, কমিটিতে ছাত্রছাত্রীদের তরফে প্রতিনিধি রাখারও কথা জানানো হয়েছে। লিখিত বার্তায় উপাচার্য জানিয়েছেন, কথাবার্তায় সহানুভূতি ও সংযমের মাধ্যমে নিজেদের ভাবনাচিন্তার পার্থক্য বুঝিয়ে দিতে হবে। ভুয়ো খবর এবং প্ররোচনায় পা না দেওয়ার আবেদনও করেন তিনি। লেখেন, “যে কোনও ভাবেই হোক গোঁড়ামি, প্ররোচনা এবং ভুয়ো তথ্যকে অস্বীকার করতে হবে। শিক্ষার স্বাধীনতা বজায় থাকে কেবলমাত্র পারস্পরিক শ্রদ্ধার পরিবেশে। তাই মতানৈক্যের মধ্যেও সভ্যতা ও পারস্পরিক সম্ভ্রম রক্ষা করা প্রয়োজন। এই বোধের চর্চা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নয়, সর্বত্রই হওয়া উচিত।”

Jadavpur University Chiranjib Bhattacharjee JU Controversy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy