কলকাতা, যাদবপুরের মতো রাজ্যের ১৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের মধ্যে মতভেদ হওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি উদয়উমেশ ললিত কমিটিকে ভার দেওয়া হয় উপাচার্য নির্বাচনের। সেই মতো মঙ্গলবার তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় আট জন উপাচার্য পদের প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করল ওই কমিটি।
কলকাতার ইএম বাইপাসের একটি পাঁচতারা হোটেলে ১৯ থেকে ২১ অগস্ট অগস্ট পর্যন্ত চলবে এই সাক্ষাৎকার পর্ব। মঙ্গলবার মূলত তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যদের ডাকা হয়েছিল। তাঁর মধ্যে অন্যতম ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদের জন্য উপস্থিত ছিলেন আশুতোষ ঘোষ, দেবতোষ গুহ। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য পদের জন্য তিন জন উপস্থিত ছিলেন। প্রণব ঘোষ, ওমপ্রকাশ মিশ্র এবং অমিতাভ দাস। মাকাউটের উপাচার্য পদের জন্য উপস্থিত ছিলেন রেশমি ভরদ্বাজ, তাপস চক্রবর্তী এবং বঙ্কিমচন্দ্র রায়।
আরও পড়ুন:
বুধবার আরো ছ’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদপ্রার্থীদের সাক্ষাতের জন্য ডাকা হয়েছে। সেগুলি হল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, বাবাসাহেব আম্বেদকার বিশ্ববিদ্যালয়, নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় এবং উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
এই সাক্ষাৎকার পর্বের কারণ ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো ক্রমতালিকায় প্রথম স্থানে থাকা নামে আপত্তি তুলেছিলেন রাজ্যপাল। সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পাঠানো তালিকার দ্বিতীয় স্থান ও আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে তৃতীয় স্থানে থাকা নামগুলিকে উপাচার্যপদে উপযুক্ত বলে মনে করেছিলেন আচার্য। অপর দিকে এই তালিকায় নতুন নাম দেওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। এই বিরোধ মেটাতেই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ললিতের কমিটির উপর আস্থা রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ললিতের নেতৃত্বে সার্চ কাম সিলেকশন কমিটি ইতিমধ্যে আবেদনকারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা ও অন্যান্য বিষয়গুলি খতিয়ে দেখেছে প্রথম পর্বে। দ্বিতীয় পর্বে এই কমিটি প্রধানকেই উপাচার্য বাছাই করার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্ট তার নির্দেশে উল্লেখ করেছে এই দ্বিতীয় পর্বে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপাল উভয়ের মতামতকে যেন গুরুত্ব দেয় এই কমিটি। উপাচার্য পদে আগে যে তিন জনকে ডাকা হয়েছিল তাঁদেরই এই দ্বিতীয় সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হবে। তবে বেশ কয়েকজন উপাচার্যের নাম প্রথম তালিকায় দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ইতিমধ্যে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় নিযুক্ত হয়ে গিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে তিন জন নয়, যে দু’জন পড়ে থাকছেন সেই দুজনকে ডাকা হচ্ছে।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ললিতের কমিটি উপাচার্য পদের নাম ঠিক করে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পেশ করবে। ২৬ শে সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের পরে রাজ্যের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯টিতে উপাচার্য নিয়োগ হলেও ১৭টিতে জট ছিল। শেষ শুনানিতে দু’টিতে জট কেটেছে। উপাচার্য নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের মতান্তরের জেরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি উদয় উমেশ ললিতের নেতৃত্বে ‘সার্চ ও সিলেকশন’ কমিটি তৈরি করে দিয়েছিল। নির্দেশ ছিল, কমিটি তিন জনের নাম বেছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠাবে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেদের পছন্দের ক্রমানুসারে নামের তালিকা সাজিয়ে রাজ্যপালের কাছে পাঠাবেন।
শেষ শুনানির দিন সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যপালের হয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল আর বেঙ্কটরমণি জানান, রাজ্যপাল মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই মত দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ রায় দিয়েছে, ললিতের কমিটি এ বার উপাচার্য পদে প্রার্থীর নাম যোগ্যতার ক্রমানুসারে সাজিয়ে আদালতকে দেবে।