সারা রাজ্যে দু’হাজারেরও বেশি প্রাথমিক স্কুল ভুগছে শিক্ষক শূন্যতায়। এ বার এ বিষয়ে পদক্ষেপ করতে চলেছে স্কুল শিক্ষা দফতর। সম্প্রতি ডিস্ট্রিক প্রাইমারি স্কুল কাউন্সিল বা ডিপিএসসি-র তরফে পাওয়া তথ্য প্রকাশ করেছে স্কুল শিক্ষা দফতর। আর সেখানেই দেখা গিয়েছে, রাজ্যের মোট ৪৯৩৬৮টি প্রাথমিক স্কুলের মধ্যে ২২১৫ টি স্কুলেই রয়েছে এই সমস্যা।
কোনও স্কুলে রয়েছেন একজন শিক্ষক, কোনও স্কুলে এক জনও নেই। এমন ২২১৫টি স্কুলে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার জন্য জেলাভিত্তিক বদলি বা পোস্টিংয়ের নির্দেশ ডিপিএসসিগুলিকে দেওয়া হয়েছে স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে। ইতিমধ্যে ডিপিএসসিগুলির কাছে চিঠি গিয়েছে।
আরও পড়ুন:
হিসাব বলছে এ রাজ্যের ২২ জেলার মধ্যে সব থেকে খারাপ অবস্থা পুরুলিয়ার। সেখানে ৩০৬৭টি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। তার মধ্যে ৩৭২টি স্কুলে হয় কোনও শিক্ষক নেই, অথবা রয়েছেন মাত্র এক জন। তার পরেই রয়েছে, বাঁকুড়া (৩৭১) পশ্চিম মেদিনীপুর(২২৭), বীরভূম (১৫৬), পূর্ব বর্ধমান (১২৮), পূর্ব মেদিনীপুর (১৩০), ঝাড়গ্রাম(১২০), মুর্শিদাবাদ (১০০)। এমন স্কুল রয়েছে হাওড়া হুগলি নদীয়া-সহ অন্য জেলায়ও। এমনকি কলকাতায়ও রয়েছে এমন ১৮টি স্কুল।
আরও পড়ুন:
যদিও কলকাতা জেলা ডিপিএসসি চেয়ারম্যান কার্তিক মান্না জানিয়েছেন, তাঁরা হাতে কোনও চিঠি পাননি। তাঁর দাবি, “সরকার যেমন নির্দেশ দেবে, সেই মতোই পদক্ষেপ করব আমরা।”
উল্লেখ্য, শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী প্রাথমিক স্তরে প্রতি ৬০ জন পড়ুয়া পিছু ২জন শিক্ষক থাকা আবশ্যিক। তবে ওই শিক্ষক-সঙ্কটে ভোগা স্কুলগুলিতে পড়ুয়ার সংখ্যা কত, তার হিসাব দেওয়া হয়নি।
জেলা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের এক কর্তা বলেন, “প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মেনে আমরা কাজ করতে শুরু করেছি। জেলার ভিতরেই বদলির কথা ভাবা হচ্ছে। যে সব স্কুলে অধিক শিক্ষক রয়েছেন, সেখান থেকে শিক্ষক-সঙ্কটে ভোগা স্কুলগুলিতে বদলি করে দেওয়া হবে তাঁদের।”
রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলগুলির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষকমহল। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “শুধু প্রাথমিক নয়, এ রাজ্যের বহু উচ্চ প্রাথমিক এবং হাইস্কুলের পরিস্থিতিও একই। কোথাও পড়ুয়া রয়েছে শিক্ষক নেই। আবার কোথাও শিক্ষকেরা বসে বসে বেতন পাচ্ছেন পড়ুয়া নেই। সরকারের হেলদোল নেই।”
প্রায় একই সুরে শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, “এত দিনে সরকারের টনক নড়ল! এ ভাবেই সরকারি প্রাথমিক এবং জুনিয়র স্কুলগুলিকে ধ্বংস করে বেসরকারিকরণের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। শুধু শিক্ষক নয়। আমাদের দাবি, গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগ করে সরকারি বিদ্যালয়গুলিকে পুনরায় বাঁচিয়ে তোলা হোক।”