একাদশ এবং দ্বাদশের পড়ুয়াদের পরীক্ষার সময় একটি বিশেষ উত্তরপত্র দেওয়া হবে। ওই উত্তরপত্রটি সাধারণত সরকারি চাকরি, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা কিংবা সর্বভারতীয় স্তরের প্রবেশিকার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সম্প্রতি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফে কী ভাবে ‘অপটিক্যাল মার্ক রেকগনিশন’ (ওএমআর) শিটে উত্তর লিখতে হবে, তার নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য আগেই জানিয়েছিলেন, স্কুল স্তর থেকেই ছেলেমেয়েদের সর্বভারতীয় স্তরের পরীক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে ওয়াকিবহাল করতে হবে। তবেই তারা পরবর্তীকালে চাকরির পরীক্ষা বা প্রবেশিকার জন্য নিজেদের সহজেই প্রস্তুত করতে পারবে।
যে হেতু চাকরি কিংবা উচ্চশিক্ষায় প্রবেশিকার ক্ষেত্রে এই বিশেষ উত্তরপত্র ব্যবহার করা হয়, তাতে মনে হতেই পারে, সেই পরীক্ষার নিয়মাবলিও এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন ক্ষেত্রে একাদশ এবং দ্বাদশের ওএমআর শিট অন্যান্য পরীক্ষার উত্তরপত্র থেকে আলাদা।
গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
এই বিষয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সচিব প্রিয়দর্শিনী মল্লিক জানিয়েছেন, ছেলেমেয়েরা যাতে শুরু থেকেই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে, তাই সংসদের তরফে ‘স্পেসিমেন কপি’ও দেওয়া হয়েছে। এতে, স্কুলগুলি মক টেস্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অনুশীলন করাতে পারবে। তবে, পড়ুয়াদের কথা ভেবেই নম্বর বিভাজনের জটিলতা এ ক্ষেত্রে রাখা হয়নি।
তবে, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মতই উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রেও ওএমআর শিট ব্যবহারের সাধারণ নিয়মগুলি একই রকম।
- কালো বা নীল কালির কলম দিয়ে ওএমআর শিটে উত্তর বেছে নিতে হয়।
- জেল কালি বা অন্য কোনও রঙের পেন ব্যবহার করা যাবে না।
- নির্দিষ্ট স্থানে অর্ধেক রং করা থাকলে বা টিক মার্ক দিলে, সেটি সঠিক উত্তর হলেও নম্বর দেওয়া হবে না।
- একই জায়গায় বার বার কালি বোলাতে পারবে না।
- পেনসিল ব্যবহার করা যাবে না।
- ওএমআর শিট ভাঁজ করা যাবে না। এতে উত্তর স্ক্যান করতে সমস্যা হবে।
- তবে, উত্তর লেখার পাশাপাশি, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, রোল নম্বর, প্রশ্ন পুস্তিকা নম্বরও এই একই পদ্ধতিতে লিখতে হয়।
তৃতীয় সেমেস্টারের পরীক্ষা ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, প্রতিটি পরীক্ষা ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের মধ্যে সম্পূর্ণ করতে হবে। চতুর্থ সেমেস্টারের পরীক্ষা ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। পরীক্ষার সময়সীমা দু’ঘণ্টা। এই সময়সীমা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন শিক্ষকমহলের একাংশ।
পাঠভবনের অঙ্কের শিক্ষক তন্ময় মুখোপাধ্যায়ের দাবি, এই পদ্ধতিতে এক ঘণ্টা ১৫ মিনিটের মধ্যে ৪০টি প্রশ্নের উত্তর লিখে পরীক্ষা শেষ করতে গিয়ে তৃতীয় সেমেস্টারের ছাত্রছাত্রীদের যথেষ্ট বেগ পেতে হবে। তা ছাড়াও ওএমআর শিটে সঠিক ভাবে সমস্ত তথ্য দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার আগে যথেষ্ট অনুশীলন প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ‘‘হাতেগোনা কয়েকটা দিন, এর মধ্যে অনুশীলনের জন্য কতটাই বা সময় দিতে পারবে রাজ্যের স্কুলগুলি? শিক্ষা সংসদের বিষয়টি বিবেচনা করে সময়সীমা আরও বৃদ্ধি করুক, এতে পড়ুয়াদের উপর অতিরিক্ত চাপটা কমবে।’’
স্কুলগুলিতে পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমন? নিজস্ব চিত্র।
যোধপুর পার্ক বয়েজ়-এর প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার জানিয়েছেন, প্রথম সেমেস্টারের পরীক্ষায় বিজ্ঞানের পড়ুয়াদের নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা শেষ করতে যথেষ্ট সমস্যা হয়েছে। এর জন্য তাঁদের আরও প্রস্তুতির প্রয়োজন।
তবে, অনুশীলনের জন্য বেশ কিছু স্কুলে প্রস্তুতি পরীক্ষার আয়োজনও করা হয়েছে। আসানসোলের হীরাপুর মানিকচাঁদ ঠাকুর ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষিকা নিবেদিতা আচার্যের কথায়, “আমরা ‘স্পেসিমেন কপি’ অনুযায়ী পরীক্ষা নিচ্ছি, যাতে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়ে ওঠে। উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে এই ধরনের উত্তরপত্রেই পরীক্ষা দিতে হয়। তাই শুরু থেকেই প্রস্তুতি নিতে পারলে আখেরে পড়ুয়াদেরই লাভ হবে।”
যোধপুর পার্ক বয়েজ়েও মূল পরীক্ষায় যাবতীয় ভুল ভ্রান্তি এড়াতে এবং পড়ুয়াদের মানসিক ভাবে প্রস্তুত রাখতে বিশেষ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে, স্কুলের তরফে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি, অভিভাবকদেরও বিষয়টি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে পরীক্ষায় কেউ অনুপস্থিত না থাকে।