ওএমআর শিট একটি বিশেষ উত্তরপত্র। সরকারি চাকরির পরীক্ষা কিংবা সর্বভারতীয় স্তরের প্রবেশিকার ক্ষেত্রে এই উত্তরপত্রই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সম্প্রতি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফেও এই বিশেষ উত্তরপত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যের মতে, সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পাঠ্যক্রম পরিবর্তনের পাশাপাশি, পরীক্ষা ব্যবস্থাতেও বদল আসা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, “স্কুল স্তর থেকেই ছেলেমেয়েদের সর্বভারতীয় স্তরের পরীক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে ওয়াকিবহাল করতে হবে। তবেই তারা পরবর্তীতে চাকরির পরীক্ষা বা প্রবেশিকার জন্য নিজেদের সহজেই প্রস্তুত করতে পারবে।”
কেন বিশেষ এই উত্তরপত্র?
ওএমআর অর্থাৎ ‘অপটিক্যাল মার্ক রেকগনিশন’-এর সাহায্যে উত্তর বেছে নেওয়া হয়ে থাকে। সাদা পাতায় লিখে উত্তর লেখার মতো এখানে প্রচুর লেখার সুযোগ নেই। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট স্থানে সঠিক উত্তরের বিকল্পটি বেছে নিতে হয়। নীল বা কালো কালির কলম দিয়ে ওই স্থানটিকে গোল করে চিহ্নিত করলেই উত্তর লেখার কাজ শেষ। সেই কারণেই ওএমআর শিটের ব্যবহার পরীক্ষাব্যবস্থায় চালু করা হয়েছে।

নির্দিষ্ট রঙের কালির পেন ব্যতিত অন্য কিছু ব্যবহার করে উত্তর লেখা যায় না। প্রতীকী চিত্র।
প্রথম ওএমআর শিট ব্যবহার কবে হয়েছিল?
কম্পিউটারে তথ্য সংগ্রহের কাজের জন্য ১৮৯০-তে পাঞ্চড কার্ডের আকারে এই বিশেষ শিটের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। কার্ডবোর্ডের শিটে ফুটো করে তথ্য সংগ্রহ করা হত। সেই পদ্ধতি অবলম্বনেই পরবর্তীতে ওএমআর শিটের আধুনিকীকরণ করা হয়েছিল।
এরপর ১৯৬০-এ আইবিএম-এর তরফে একটি অপটিক্যাল মার্ক সেন্স টেস্ট স্কোরিং মেশিন তৈরি করা হয়েছিল, যার মাধ্যমে কাগজে ফেলা গ্রাফাইট পেনসিলের মার্ক বা দাগ স্ক্যান করা সম্ভব। এর মাধ্যমে পাঞ্চড কার্ডের তুলনায় কম সময়ের মধ্যে তথ্য সংগ্রহ করার যেত।
ওএমআর শিট ব্যবহারের নিয়ম:
- কালো বা নীল কালির কলম দিয়ে ওএমআর শিটে উত্তর বেছে নিতে হয়।
- জেল কালি বা অন্য কোনও রঙের পেন ব্যবহার করা যায় না।
- সাধারণত উত্তরের চারটি বিকল্পের ঘর থাকে। তার মধ্যে একটি বা দু’টি ঘরে সঠিক উত্তর হতে পারে। সঠিক উত্তর বেছে নেওয়ার পর সেই স্থানে পূর্ণবৃত্তে রঙ করতে হয়।
- নির্দিষ্ট স্থানে অর্ধেক রঙ থাকলে সেটি সঠিক উত্তর হিসাবে গণ্য করা হয় না।
- একই জায়গায় বার বার কালি বোলানো যাবে না। এ ক্ষেত্রে নেগেটিভ মার্কিংও হতে পারে।
- পেনসিল ব্যবহার করা যায় না।
- ওএমআর শিট ভাঁজ করা যাবে না। এতে উত্তর স্ক্যান করতে সমস্যা হবে।
- তবে, উত্তর লেখার পাশাপাশি, রোল নম্বরও এই একই পদ্ধতিতে লিখতে হয়।

আইবিএমের পাঞ্চ কার্ড এবং ওএমআর শিটের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।
কোন কোন পরীক্ষায় এই শিট ব্যবহার করা হয়?
ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট এন্ট্রান্স এগজ়ামিনেশন, জয়েন্ট এন্ট্রান্স এগজ়ামিশেন মেনস এবং অ্যাডভান্সড, ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি)-র বিভিন্ন পরীক্ষা, কমন ল অ্যাডমিশন টেস্ট (ক্ল্যাট), ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট (নিট)-এর মতো বিভিন্ন সরকারি চাকরি, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্বের প্রবেশিকা এবং সর্বভারতীয় স্তরের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এই শিট ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ওএমআর ব্যবহারের নেপথ্য যুক্তি:
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সর্বভারতীয় স্তরে প্রবেশিকা এবং সরকারি চাকরির পরীক্ষায় এই বিশেষ উত্তরপত্র দ্রুত মূল্যায়নের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের উপসচিব পার্থ কর্মকারের মতে, সর্বভারতীয় স্তরে প্রবেশিকা কিংবা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে প্রার্থীদের মেধা যাচাই যথেষ্ট নয়। এই ধরনের শিটে প্রশ্নের উত্তর লেখার পাশাপাশি, পরীক্ষার্থীদের মানসিক স্থিরতা এবং শক্তি যাচাই করা সম্ভব। তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ওএমআর শিট ব্যবহারের উদ্যোগকে সাধুবাদও জানিয়েছেন। তবে, পরীক্ষার আগে মডেল শিটে পড়ুয়াদের অভ্যাস করে নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন পার্থ।