মেদিনীপুর আদালতে রঞ্জন মাইতি। ছবি সৌমেশ্বর মণ্ডল।
ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ গিয়েছে ১২ জনের। আরও চার জন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। মৃত ও জখমদের অধিকাংশই আবার নাবালক। এই পরিস্থিতিতে পিংলার বিস্ফোরণের পরদিন ঘটনার সত্যোদ্ঘাটনে কোনও তৎপরতা চোখে পড়ল না। পশ্চিম মেদিনীপুরে অন্যত্র যে সব বেআইনি বাজি কারখানা রয়েছে সেখানে কোনও অভিযানও চলল না। উল্টে পুলিশ-প্রশাসন দিনভর ব্যস্ত রইল একটাই জিনিস প্রমাণ করতে যে, ব্রাহ্মণবাড় গ্রামের এই কারখানায় শুধুই বাজি তৈরি হত, কোনও মারণবোমা তৈরি হত না।
শুক্রবার সকাল ১১টা নাগাদ বিস্ফোরণস্থলে পৌঁছন এডিজি সিআইডি রাজীব কুমার, ডিআইজি সিআইডি (অপারেশন) দিলীপ আদক, আইজি পশ্চিমাঞ্চল সিদ্ধিনাথ গুপ্ত। তার কিছুটা আগেই এসে পৌঁছন জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শনের পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সিআইডি কর্তারা। ডিআইজি সিআইডি দিলীপবাবু বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে যা দেখছি, তাতে এখানে ফুলঝুরি, পটকা, আলুবোমা-গাছবোমার মতো বাজিই তৈরি হত। কিছু স্টোনচিপস্ মিলেছে। তা অবশ্য পটকা তৈরিতে ব্যবহৃত হত বলেই মনে হচ্ছে।’’ দিলীপবাবুর আরও দাবি, এই কারখানায় কোনও ধারালো অস্ত্র পাওয়া যায়নি, কোনও স্প্লিন্টারও পাওয়া যায়নি, যা দিয়ে মারণবোমা তৈরি হতে পারে।
কিন্তু শুধু বাজির কারখানায় কি এত বড় বিস্ফোরণ সম্ভব?
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ বার দিলীপবাবুর জবাব, ‘‘এখনও পর্যন্ত এই তথ্যই পেয়েছি। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা নমুনা সংগ্রহ করেছেন। সেই রিপোর্ট পেলেই এ ব্যাপারে বিস্তারিত বোঝা যাবে।’’
এ দিন ঘটনাস্থলে এসেছিলেন এসএস (আইবি) সুগত সেন। তাঁরও দাবি, ‘‘এখানে লেড বা লোহা জাতীয় কিছু পাওয়া যায়নি।’’
বিরোধীরা অবশ্য সিআইডি-র এই ব্যাখ্যায় আদৌ সন্তুষ্ট নয়। এ দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘সিআইডি-র উপর আমাদের কোনও ভরসা নেই। ওটা আসলে চিফ মিনিস্টারস্ ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো। আর ওঁরা বলছেন, এখানে ফুলঝুরি তৈরি হত। কেমন ফুলঝুরি তো দেখতেই পাচ্ছি যা ১২ জনের প্রাণ নিয়ে নেয়।’’ সূর্যবাবু আরও জানান, গ্রামবাসীরা বলেছেন মৃতের সংখ্যা ২০ বা তারও বেশি হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের দাবি, রাজ্য বা কেন্দ্র যে সংস্থাই তদন্ত করুক না কেন, তা যেন আদালতের নজরদারিতে হয়। এ দিন পিংলার মুণ্ডমারিতে সভাও করেন সূর্যবাবু। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তিনি বলেন, ‘‘হিম্মত থাকে তো কালই এলাকায় আসুন। মানুষের ক্ষোভের কথা শুনুন।’’ এ দিন ব্রাহ্মণবাড়ে গিয়েছিলেন বহিষ্কৃত সিপিএম নেতা রেজ্জাক মোল্লাও। বিকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ।
এ দিন দুপুরেই মেদিনীপুর জেলা আদালতে হাজির করা হয় বিস্ফোরণ কাণ্ডে ধৃত রঞ্জন মাইতিকে। তাঁর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইন, অনিচ্ছাকৃত খুন-সহ মোট ৯টি ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। আদালত এ দিন রঞ্জনকে ১৪ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে।
বিস্ফোরণের পরে ব্রাহ্মণবাড় গ্রাম এ দিনও ছিল থমথমে। তবে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছিল গ্রামবাসীদের ক্ষোভের কথা। সেই ক্ষোভ পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে। সকলেই বলছেন, পুলিশকে বার বার বলা সত্ত্বেও এই কারখানা বন্ধের ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রঞ্জন দাপুটে তৃণমূল কর্মী হওয়ার জন্যই পুলিশ বিষয়টিতে উদাসীন ছিল বলেই গ্রামবাসীদের অভিযোগ। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে একটি গাড়িতে চেপে কিছু লোক পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই রঞ্জনের বাড়িতে এসেছিল। সেখান থেকে কিছু জিনিস গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে যায় তারা। আর কিছু বস্তা ফেলে দিয়ে যায় পাশের পুকুরে। রঞ্জনের বাড়ির লোকজন অবশ্য কারও আসার কথা মানছেন না। রঞ্জনের বোন দেবকী মাইতির দাবি, ‘‘আমাদের বাড়িতে কেউ আসেনি। আর দাদা তো ওই জমিটা কারখানার জন্য ভাড়া দিয়েছিল। এর বেশি আর কিছু জানি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy