Advertisement
E-Paper

আমার ম্যান অব দ্য ম্যাচ সনি

অঘোষিত ফাইনালে মোহনবাগানের ইতিহাস গড়ার পাঁচ কারণ খুঁজে বার করলেন সবুজ-মেরুনের প্রাক্তন তারকা ফুটবলার শিশির ঘোষ।অঘোষিত ফাইনালে মোহনবাগানের ইতিহাস গড়ার পাঁচ কারণ খুঁজে বার করলেন সবুজ-মেরুনের প্রাক্তন তারকা ফুটবলার শিশির ঘোষ।

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৫ ০০:০১
আনন্দে মাতোয়ারা মোহন-সমর্থকেরা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

আনন্দে মাতোয়ারা মোহন-সমর্থকেরা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

১) মাঠে সনি নর্ডির লিডারশিপ

এ রকম মেগা ম্যাচে মাঠে টিমকে কোনও এক জন বিশেষ ফুটবলারের নেতৃত্ব দেওয়াটা ভীষণ জরুরি। কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে সনি সেই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টরটা হয়ে উঠেছিল। মাঝমাঠকে তো শাসন করেছে বটেই। প্রায় সারাক্ষণ নেমে-উঠে খেলে কখনও মোহনবাগানের রক্ষণে বাড়তি ডিফেন্ডার হয়ে উঠেছে। আবার কখনও আক্রমণে বাড়তি স্ট্রাইকারের কাজ করেছে। সনিকে দেখে আমাদের সময়ের সুদীপদার (চট্টোপাধ্যায়) কথা পড়ে যাচ্ছিল। আমার মতে সনি-ই আই লিগ ‘ফাইনালের’ ম্যান অব দ্য ম্যাচ।

২) ড্রতেই ট্রফি জানা সত্ত্বেও অ্যাটাকিং ফুটবল খেলা

এটাই আমার মনে মনে ইচ্ছে ছিল যে, আমার পুরনো ক্লাব যেন রবিবার এ ভাবেই খেলে। এটাই এ রকম পরিস্থিতিতে সঠিক স্ট্র্যাটেজি। বোয়া-কাতসুমিরা যে পিছিয়ে পড়েও গোলটা শোধ করে আসল কাজটা করতে পারল সেটা ওদের ওই অ্যাটাকিং ফুটবলের জন্যই। এই অবস্থায় মুখে যতই প্লেয়াররা বলে থাক না কেন যে, জেতার জন্য খেলব, তা সত্ত্বেও সব সময়ই মনের ভেতর একটা ভাবনা কাজ করেই— নব্বই মিনিট কোনও ভাবে কাটিয়ে দিতে পারলেই তো কেল্লা ফতে। ড্র করলেই তো আমরা চ্যাম্পিয়ন। আর তাতেই নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা ঘেঁটে যায়। নিজে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল-বাংলা-ভারতের জার্সি পরে সামান্য ফুটবল খেলার সুবাদে ব্যাপারটা আরও ভাল জানি। প্রীতম-শৌভিক-বলবন্তরা এ দিন ওই রাস্তায় পা মাড়ায়নি। বিশেষ করে হাফটাইমের মিনিট কয়েক আগে জনসনের সেট পিস গোলে পিছিয়ে পড়ার পরেও।

৩) হাফটাইমে ড্রেসিংরুমে কোচ-কর্তাদের পেপটক

কলকাতায় বসেও যেন বেঙ্গালুরুর এই ছবিটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। নিশ্চিত বিশ্বাসের সঙ্গে বলছি, এ দিন মোহনবাগান ফুটবলাররা এক গোলে পিছিয়ে থেকে হাফটাইমে ড্রেসিংরুমে ফেরার পর সঞ্জয় সেন, সত্যদারা (চট্টোপাধ্যায়) ফুটবলারদের নিশ্চয়ই বলেছে— পরের পঁয়তাল্লিশ মিনিট টেনশনে না ভুগে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলো। অ্যাটাকিং ফুটবল থেকে সরো না। এক গোল শোধ করার এখনও অনেক সময় পড়ে আছে। এই পঁয়তাল্লিশ মিনিটকে নিজেদের খেলোয়াড়জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে একশো ভাগই নয়, দু’শো ভাগ উজাড় করে দাও। হাফটাইমে ড্রেসিংরুম পেপ-টকের এ দিনের ম্যাচে মোহনবাগানের নতুন ইতিহাস গড়ার পিছনে অবশ্যই ভূমিকা আছে। যেটা আমি সেখান থেকে হাজারেরও বেশি কিলোমিটার দূরে থেকেও বেশ টের পাচ্ছি।

৪) চ্যাম্পিয়নশিপ লাক

এটা শুধু ফুটবল বা অন্য কোনও খেলাই নয়, জীবনের যে কোনও পেশায় চূড়ান্ত সাফল্য পেতে হলে অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ একটা ফ্যাক্টর। যেটা এ দিন বেঙ্গালুরুর মাঠে মোহনবাগানের সঙ্গে ছিল। এটাকেই বলে চ্যাম্পিয়নশিপ লাক। যেমন এ রকম একটা মেগা ম্যাচে ভারতীয় ফুটবল ইতিহাসে সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক গোলের রেকর্ড যার সেই সুনীল ছেত্রীই খেলতে পারল না। অথচ আগের দিন পর্যন্ত ওর চোটের কোনও খবর ছিল না মিডিয়ায়। নব্বই মিনিটেও মরিয়া বেঙ্গালুরু আনফিট সুনীলকে নামিয়ে দিয়েছিল জেতার জন্য। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আবার দেখুন, সনির শট ক্রসবারে লেগেছে। বেঙ্গালুরুর জনসন একটা গোললাইন সেভ করেছে। সবই ঠিক। কিন্তু মোহনবাগানের মহার্ঘ্য গোলটা এল আবার বেলো রজ্জাকের হেডে। যে কিনা বাগানের সম্ভাব্য স্কোরারদের তালিকার ধারেকাছে ছিল না। কিন্তু আসল সময়ে আসল কাজটা করে দিয়ে গেল।

৫) কোচ ফ্যাক্টর

সঞ্জয় সেনের জন্য কোনও বাহবাই বোধহয় এখন যথেষ্ট নয়। কোনও দিন বড় দলে না খেলেও মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলে দুর্দান্ত সফল কোচিং জীবনের শেষ কথা বলতে ভারতীয় ফুটবল বোঝে এক জনেরই নাম— পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রদীপটার সঙ্গে তুলনায় যাচ্ছি না, কিন্তু রেলওয়ে এফসি-তে প্রায় সারা জীবন খেলা সঞ্জয়েরও কৃতিত্ব কিছু কম নয়। মহমেডানকে আই লিগ ওয়ান-এ তুলেছিল। মোহনবাগানকে একেবারে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করল! কম কথা বলে। প্রচারের সার্চ লাইটের বাইরে থাকতেই বেশি পছন্দ করে। হামবড়া ভাব নেই। সবচেয়ে বড় কথা, বড় ক্লাবে মেগা তারকা আর উঠতি প্লেয়ারের মধ্যে সফল মিশ্রণ ঘটিয়ে সেটাকে একটা সত্যিকারের টিম করে তোলার ক্ষমতা রাখে। যেটা মোহনবাগান ক্লাবে সঞ্জয় পাঁচ-ছয় মাসের ম্যারাথন আই লিগে দারুণ ভাবে করেছে।

১২৫ বছরের মোহনবাগানের ইতিহাসে ৩১ মে, ২০১৫ দিনটা সঞ্জয় সেন-কে বাদ দিয়ে কোনও মতেই লেখা থাকতে পারে না!

Shishir Ghosh Mohun bagan Sony Norde Kolkata Football East Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy