উত্তর ইরাকের আরবিলে ১৩০ জন সামরিক বিশেষজ্ঞ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিল আমেরিকা। বুধবার মার্কিন প্রতিরক্ষাসচিব চাক হেগেল এ কথা জানিয়েছেন। এর আগে ইরাকি সেনাকে সাহায্য করার জন্য ২৫০ জন সামরিক বিশেষজ্ঞকে বাগদাদে পাঠিয়েছিল আমেরিকা। আরবিলে কুর্দ প্রশাসনকে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর জঙ্গিদের আটকানোর পাশাপাশি সিনজার পাহাড়ে এখনও আটকে থাকা ইয়াজিদিদের ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজে এই সামরিক বিশেষজ্ঞেরা সাহায্য করবেন বলে চাক হেগেল জানিয়েছেন।
বাগদাদে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হায়দার আল আবিদি-র বাড়ির কাছের একটি চেকপোস্টে এ দিন এক আত্মঘাতী হামলা হয়। এই ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে বাগদাদেই অন্য এক আত্মঘাতী হামলায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি আটকে পড়া ইয়াজিদিদের উদ্ধারের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান কি-মুনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস।
নতুন করে এলাকা দখল ও তৈলক্ষেত্রের উপরে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তর ইরাকে অভিযান শুরু করেছিল আইএস জঙ্গিরা। এই হামলায় কারকোশ ও সিনজারের মতো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত শহরের পতন হতে থাকে। ঘর ছাড়তে শুরু করেন সংখ্যালঘুরা। কারকোশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষেরা কোনওক্রমে কুর্দদের দখলে থাকা অঞ্চলের দিকে পালিয়ে যেতে পারলেও সিনজারের জরাথ্রুস্টিয়ান ধর্মাবলম্বী ইয়াজিদিরা সিনজার পাহাড়ে আটকে পড়েন। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাম্প্রতিক হিসাবে দেখা গিয়েছে এই সংঘর্ষে প্রায় ১২ লক্ষ ইরাকি ঘর ছেড়েছেন। পালানোর পথে ইয়াজিদিদের গণহত্যা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে।
সিনজার পাহাড়ে আটকে পড়া ইয়াজিদিদের একটি অংশ নিরাপদে (কুর্দ শাসিত অঞ্চল এবং সিরিয়া) সরে যেতে পারলেও এখনও তাদের বেশির ভাগই সিনজার পাহাড়ে আটকে রয়েছে। প্রচণ্ড গরম আর খাদ্য-পানীয়ের অভাবে তাদের অবস্থা বেশ খারাপ। এ ভাবে আর কিছু দিন আটকে থাকলে অনেকেরই প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ দিনও আমেরিকার বায়ুসেনা এদের জন্য ১ লক্ষ প্যাকেট খাবার ও ১২৩০০০ লিটার জল পাঠিয়েছে। তবে উদ্ধারের পথ এখনও আইএস জঙ্গিরা আটকে রেখেছে। সে ক্ষেত্রে স্থলপথে অভিযান চালানো না হলে এদের উদ্ধার করা কঠিন হবে বলে অনেকের আশঙ্কা। আরবিলে থেকে আমেরিকার সামরিক বিশেষজ্ঞরা সেই কাজ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে কোনও অবস্থাতেই মার্কিন সেনা এই যুদ্ধে অংশ নেবে না বলে চাক হেগেল জানিয়েছেন। পাশাপাশি ইয়াজিদিদের জন্য আরও ত্রাণ পাঠাতে রয়্যাল এয়ার ফোর্স (র্যাফ)-এর যুদ্ধবিমান সাইপ্রাসে পৌঁছেছে। এই বিমানগুলি র্যাফ-এর মালবাহী বিমান হারকিউলিক্স থেকে ত্রাণ নামানোর সময়ে পাহারা দেবে। অন্য দিকে, কুর্দ পেশমেরগা যোদ্ধাদের অস্ত্র সরবরাহ শুরু করল আমেরিকা। ফ্রান্স, ইতালি ও চেক রিপাবলিকও অস্ত্র সাহায্যে আগ্রহী বলে জানা গিয়েছে।
নতুন সরকার গঠনের জন্য কাজ শুরু করেছেন হায়দার আল আবিদিও। ইতিমধ্যেই উত্তর কুর্দদের প্রতিনিধিরা তাঁকে সমর্থন করেছেন। আমেরিকা, ইউরোপের দেশগুলি ছাড়াও অপ্রত্যাশিত ভাবে তাকে সমর্থন জানিয়েছে ইরানও। সমর্থন এসেছে সুন্নি প্রধান সৌদি আরব এবং তুরস্ক থেকেও। যদিও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের লড়াইয়ে এখনও অনড় নূর আল-মালিকি। কিন্তু ইরানের সমর্থন সরে যাওয়ায় তাঁর পক্ষে বিশেষ কিছু করে ওঠা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আবিদিকে স্বাগত জানিয়েছেন ইরাকে শিয়াদের প্রধান ধর্মগুরু আলি সিস্তানিও। তবে এর পরেও সুন্নি-সহ ইরাকের বিভিন্ন গোষ্ঠীকে নিয়ে সরকার গড়া কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy