Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দু’দিনের পুলিশি অভিযানের শেষে গ্রেফতার ধর্মগুরু রামপাল

দীর্ঘ টানাপড়েনের পর অবশেষে হিসারে নিজের আশ্রমেই ধরা পড়লেন বিতর্কিত ধর্মগুরু রামপাল। গত দু’দিন ধরে লাগাতার চেষ্টা করেও ধর্মগুরু রামপালের টিকি ছুঁতে পারেনি পুলিশ। যদিও পুলিশের দাবি ছিল, হরিয়ানার হিসারের বারওয়ালার ওই আশ্রমেই লুকিয়ে আছেন তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁকে বৃহস্পতিবার হিসার আদালতে তোলা হবে।

বারওয়ালার পথে পুলিশ। ছবি: গেটি ইমেজ।

বারওয়ালার পথে পুলিশ। ছবি: গেটি ইমেজ।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ১৩:০৮
Share: Save:

দীর্ঘ টানাপড়েনের পর অবশেষে হিসারে নিজের আশ্রমেই ধরা পড়লেন বিতর্কিত ধর্মগুরু রামপাল। গত দু’দিন ধরে লাগাতার চেষ্টা করেও ধর্মগুরু রামপালের টিকি ছুঁতে পারেনি পুলিশ। যদিও পুলিশের দাবি ছিল, হরিয়ানার হিসারের বারওয়ালার ওই আশ্রমেই লুকিয়ে আছেন তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁকে বৃহস্পতিবার হিসার আদালতে তোলা হবে।

অনুগামীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মঙ্গলবার পুলিশকে কার্যত ঠুঁঠো করে রাখতে পেরেছিলেন তিনি। কিন্তু এ দিন পুলিশ আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। আশ্রম খালি করতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। সেই মতো সকাল ১০টার মধ্যে হাজার দশেক রামপাল অনুগামী আশ্রম ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। পুলিশের অনুমান ছিল, ভেতরে বহু অনুগামী আটকে রয়েছেন। তাদের দাবি ছিল, সেই সংখ্যাটা প্রায় পাঁচ হাজার। পরে ওই আশ্রম থেকে ৪২৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে রামপালের ভাই পুরুষোত্তম দাসও ছিলেন।

আশ্রম কর্তৃপক্ষ যদিও দাবি করেন, ধর্মগুরু সেখানে নেই। পাশাপাশি পুলিশি অত্যাচারে সেখানে ওই দিন চার মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলেও তাঁরা অভিযোগ করেন। পুলিশ যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দেয়। তাদের দাবি, কোনও পুলিশ কর্মী আশ্রমের ভেতরে ঢুকে উপরে ওঠেনি। তা হলে উপরের ঘরে কী ভাবে পুলিশি অত্যাচারে ওই মহিলাদের মৃত্যু হল, তারা সেই প্রশ্নও তুলেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, আশ্রম কর্তৃপক্ষ তাদের হাতে চার মহিলার দেহ তুলে দেওয়ার পর, সেগুলি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তবে প্রাথমিক ভাবে তাঁদের দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

অন্য দিকে, ওই আশ্রমে থাকা দেড় বছরের একটি শিশুর এ দিন মৃত্যু হয়েছে স্থানীয় হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হেপাটাইটিস-এ আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। আরও এক মহিলার মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে হাসপাতাল সূত্রে। আশ্রম থেকে পালানোর সময় অসুস্থ বোধ করায় তাঁকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। চিকিৎসকদের দাবি, ওই মহিলা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন।

ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার দুপুরে। হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে রামপালকে আদালতে হাজির করতে ওই দিন বারওয়ালায় তাঁর আশ্রমে ঢুকতে গিয়ে প্রথমে বাধা পায় পুলিশ। ১২ একরের ওই আশ্রমের বাইরেই পুলিশকে আটকে দেয় রামপালের নিজস্ব বাহিনী। কালো পোশাক পরা সেই বাহিনীর পেছনেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় পুরুষ এবং মহিলা অনুগামীদের। ভিড়ের মধ্যে বেশ কিছু শিশুকেও দেখা যায়। ওই ঘটনায় মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত প্রায় ২০০ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে পুলিশ এবং সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও ছিলেন। পেট্রোল বোমা, অ্যাসিড, বন্দুক— এ সবই ছিল ধর্মগুরুর অনুগামীদের হাতে। পুলিশের উপর সে সব নিয়ে হামলা চালানো হয়। পাল্টা হিসেবে পুলিশ জলকামান এবং কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।

কিন্তু বুধবার সকালে কৌশল পাল্টায় পুলিশ। আশ্রমের সামনের ২০ ফুটের উঁচু পাঁচিল ভেঙে দেওয়া হয়। সকাল ১০টার মধ্যে আশ্রম খালি করার সময়ও বেধে দেয় তারা। আগে থেকেই আশ্রমে জল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কেটে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগও। আর এতেই কাজ হয়। আশ্রম থেকে জনস্রোত বেরোতে শুরু করে। রামপালের এই অনুগামীরা হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশ থেকে বেশ কয়েক দিন ধরেই ওখানে জড় হয়েছিলেন। বাইরে বেরিয়ে এসে তাঁদের একাংশ দাবি করেন, ভেতরে গুরুর বাহিনী-ই তাঁদের আটকে রেখেছিল। এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, প্রায় ১০ হাজার রামপাল অনুগামী আশ্রম ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। সকাল থেকেই রাজ্য পরিবহণ দফতরের প্রচুর বাস আশ্রমের বাইরে রাখা ছিল। পুলিশের গাড়ির পাশাপাশি ওই বাসে করেই রামপাল অনুগামীদের হিসার পৌঁছে দেওয়া হয় প্রশাসনের তরফে।

মঙ্গলবারই আশ্রমের বাইরে মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। সঙ্গে আধা সেনাও। এ দিন বাড়ানো হয় সেই সংখ্যা। আশ্রমের বাইরে সকাল থেকেই পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। রাজ্য পুলিশ, র্যাফ, সিআরপি-র পাশপাশি ঘোড়সওয়ার বাহিনীর কর্মীদেরও নামানো হয়। রাজ্য পুলিশের ডিজি এস এন বশিষ্ঠ বলেন, “আমরা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত রামপাল ওই আশ্রমের ভেতরেই আছেন। তাঁকে সেখান থেকে আমরা আদালতে হাজির করতে বদ্ধ পরিকর।” তিনি জানান, আশ্রম চত্বর থেকে এ দিন চারটি দেহ মিলেছে। সেই দেহগুলি হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি তিনি বলেন, “সরকারি কাজে বাধা, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, হত্যার চেষ্টা ইত্যাদির অভিযোগে রামপালের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।”

হরিয়ানা সরকার জানিয়েছে, যত ক্ষণ না রামপালকে ধরা না যাচ্ছে, তত ক্ষণ পর্যন্ত বারওয়ালায় পুলিশি অভিযান জারি থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rampal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE