Advertisement
০৬ মে ২০২৪

দীর্ঘ সওয়াল-জবাব শেষে মদনের জামিনের আবেদন খারিজ

সারদা মামলায় জামিন পেলেন না রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। গত ১২ ডিসেম্বর এই মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। বুধবার তাঁর গ্রেফতারির ৬০ দিন পূর্ণ হল। ইতিমধ্যে গত ৪ ফেব্রুয়ারি এই একই মামলায় ধৃত তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ সৃঞ্জয় বসু জামিন পেয়েছেন। সেই দৃষ্টান্ত সামনে রেখে মদনের কৌঁসুলিরা তাঁর জামিনের আবেদন জানান। কিন্তু, এ দিন আলিপুর জেলা ও দায়রা আদালতে বিচারক সমরেশপ্রসাদ চৌধুরীর এজলাসে সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়। যদিও মদনবাবু এ দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। এ দিনই তাঁকে শারীরিক অসুস্থতার জন্য এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৭:৫৮
Share: Save:

সারদা মামলায় জড়িয়ে জামিন পেলেন না রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। গত ১২ ডিসেম্বর এই মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। বুধবার তাঁর গ্রেফতারির ৬০ দিন পূর্ণ হল। ইতিমধ্যে গত ৪ ফেব্রুয়ারি এই একই মামলায় ধৃত তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ সৃঞ্জয় বসু জামিন পেয়েছেন। সেই দৃষ্টান্ত সামনে রেখে মদনের কৌঁসুলিরা তাঁর জামিনের আবেদন জানান। কিন্তু, এ দিন আলিপুর জেলা ও দায়রা আদালতে বিচারক সমরেশপ্রসাদ চৌধুরীর এজলাসে সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়। যদিও মদনবাবু এ দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। এ দিনই তাঁকে শারীরিক অসুস্থতার জন্য এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।

সৃঞ্জয় বসুর চার্জশিটে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৯ নম্বর ধারাটি বাদ পড়ে যাওয়ায় তিনি জামিন পেয়ে যান। এর পরই সিবিআই মদন মিত্রের চার্জশিটে ৪০৯ ধারা জুড়তে চায়। এই ঘটনা নিয়ে গত সোমবার সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (২) হারাধন মুখোপাধ্যায়ের উপর প্রবল চাপ দেওয়ার পাশপাশি তাঁকে কটূক্তি করা হয়। যদিও সিবিআইয়ের আবেদন মেনে ৪০৯ ধারাটি মামলার চার্জশিটে ওই দিন রাতে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে যোগ করে।

মন্ত্রীর জামিনের বিরোধিতায় সিবিআইয়ের আইনজীবীকে এ দিন আদালতে বেশ আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা যায়। বিচারককে তিনি জানান, যে ব্যক্তি জামিনের আবেদন করেছেন তাঁকে মদন মিত্র না বলে ‘মানি মিত্র’ হিসেবে সম্বোধন করাই ভাল। এরই পাশাপাশি, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার বেশ কিছু নথি ওই আইনজীবী আদালতে পেশ করেছেন।

কিন্তু, ‘মানি মিত্র’ কেন?

আদালতে ওই আইনজীবী জানান, সারদার পাশাপাশি অন্য অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি বাজার থেকে টাকা তুলেছিল। কিন্তু, সেই টাকার পরিমাণ ছিল ১০-১৫ কোটি টাকা। সে জায়গায় সারদা বাজার থেকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা তোলে। আর এই টাকা তোলার পিছনে ছিল মদন মিত্রদের মতো মানুষের ভূমিকা। সারদার কর্মী সংগঠনের সভাপতি ছিলেন মদনবাবু। তাঁকে দেখেই ওই সংস্থায় টাকা রেখেছিলেন বহু মানুষ। এমনকী, সারদার এজেন্টদের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেন মন্ত্রী। নেতাজি ইন্ডোর-সহ বহু জায়গায় সারদার কর্মী-এজেন্টদের বৈঠকে মদন মিত্র হাজির ছিলেন বলে দাবি করেন ওই আইনজীবী। সেই সংক্রান্ত ছবিও তিনি আদালতে পেশ করেন। পাশাপাশি তিনি জানান, এই সংক্রান্ত আরও অনেক নথি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে আছে। কিন্তু, তদন্তের স্বার্থে তা এখনই পেশ করা সম্ভব নয়।

আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, এটি একটি অর্থনৈতিক অপরাধের ঘটনা। এই ঘটনা সমাজকে আহত করেছে। গরিবের টাকা লুঠ হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তাঁর দাবি, মদনবাবু এখনও নিজেকে মন্ত্রী হিসেবেই দেখেন। কাজেই তিনি জামিন পেয়ে গেলে ক্ষমতার বলে সাক্ষীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারেন। এমন একটি অপরাধের ঘটনাকে অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে আদালতের দেখা উচিত বলে জানান তিনি। মদন মিত্র কতটা ক্ষমতাবান সে কথা আদালতে বোঝাতে গিয়ে ওই আইনজীবী জানান, সংবাদমাধ্যম সূত্রে তিনি জানতে পেরেছেন জেলে থাকা অবস্থায় মন্ত্রীকে মদ্যপ অবস্থাতেও দেখা গিয়েছে।

এর পরেই রে রে করে ওঠেন আদালতে হাজির তৃণমূলপন্থী আইনজীবীরা। মদনবাবুর আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায়ও এই উল্লেখের প্রতিবাদ করেন। সিবিআইয়ের আইনজীবী আর ওই প্রসঙ্গে কোনও কথা বলেননি। বরং তিনি আদালতে জানান, গত বছরের ৯ মে সুপ্রিম কোর্ট সারদা মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার সময় বলেছিল, এই মামলায় সারদার কর্মী এবং কর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই হবে না। এই কেলেঙ্কারিতে যে সমস্ত ব্যক্তির সমর্থন ও মদত রয়েছে তাঁদেরও তদন্তের আওতায় আনতে হবে। সেই জন্যই মন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই আইনজীবীর আশঙ্কা, মদন মিত্রকে জামিন দিলে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে। আদালতে তিনি জানান, সারদার জাল বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। তাই প্রমাণ সংগ্রহে একটু দেরি হচ্ছে।

মন্ত্রীর আইনজীবীরা আদালতে অভিযোগ করেন, শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদেরই হয়রানি করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। অথচ আরবিআই-সেবির মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থার এক জন কর্মকর্তাকেও সিবিআই এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করেনি। তাঁদের প্রশ্ন, এমন বৈষম্য কেন?

প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে শুনানি চলে। তার পরে বিচারক এ দিন বিকেলে মন্ত্রী মদন মিত্রের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

madan mitra saradha scam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE