এ বার সিরিয়ায় আকাশপথে মার্কিন নজরদারি। ছবি: এএফপি।
সিরিয়ায় আকাশপথে নজরদারি চালানোর সবুজ সঙ্কেত দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। মঙ্গলবার পেন্টাগন এই খবর জানিয়েছে। এর আগে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিদের দমনের জন্য আমেরিকার সঙ্গে একযোগে কাজ করায় সম্মতি জানিয়েছিল সিরিয়া সরকার। সোমবারই সিরিয়ার রাক্কা প্রদেশে তাবকো বিমানবন্দর দখল করে আইএস জঙ্গিরা।
উত্তর ইরাকে আইএস-এর অভিযান শুরু হওয়ার পরে কুর্দ ও ইরাকি সেনার সাহায্যের জন্য সীমিত বিমান হামলা শুরু করে আমেরিকার বায়ুসেনা। এর মধ্যেই এর সুফল মিলতে শুরু করেছে। উত্তরের দিকে আইএস-এর অগ্রগতি ঠেকানোর পাশাপাশি আইএস জঙ্গিদের হাত থেকে গুরুত্বপূর্ণ মসুল বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে মার্কিন হামলার কারণ দেখিয়ে অপহৃত মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফোলির মুণ্ডচ্ছেদ করে আইএস জঙ্গিরা।
এর পরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, শুধু ইরাকে বিমান হানা চলিয়ে কি আইএস জঙ্গিদের দমন করা সম্ভব হবে? কারণ, আইএস-এর মূল ঘাঁটি সিরিয়া (রাক্কা প্রদেশে)। এর মধ্যে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মার্কিন সেনার চিফ অফ স্টাফ জেনারেল মার্টিন ডেম্পসি জানিয়েছিলেন, আইএস নির্মূল করতে হলে সিরিয়াতেও অভিযান চালাতে হতে পারে। তার পরেই পেন্টাগন সূত্রে বিমান নজরদারির বিষয়ে ওবামার সবুজ সঙ্কেতের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনা হয়।
পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি রেয়ার অ্যাডমিরাল জন কিরবি জানিয়েছেন, কোনও জায়গায় আক্রমণের আগে জায়গাটি সম্পর্কে ভাল করে খোঁজ নেওয়া দরকার। কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে নজরদারি চালানো হলেও বিমানের নজরদারি থেকে আরও বেশি তথ্য জোগাড় করা যায়। প্রধানত আইএস-এর নেতাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করাই মূল লক্ষ্য। তা ছাড়া আইএস-এর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, অস্ত্র, সরবরাহের পথ, ঘাঁটি ইত্যাদিরও তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
এর পরে কি সিরিয়ায় বিমান হামলা শুরু করবে আমেরিকা? সেই সম্পর্কে অবশ্য মার্কিন প্রশাসন স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি। আমেরিকা আইএস জঙ্গিদের দমনে কোনও ব্যবস্থা নিলে সিরিয়া সরকার সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে। তবে সিরিয়ায় কোনও অভিযান চালানোর আগে তাদের আগাম জানানোর দাবি তুলেছে সিরিয়া সরকার। সিরিয়ায় গত তিন বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে বাসার আল-আসাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিল আমেরিকা। বাসার আল-আসাদকে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বলাও হয়েছিল। সিরিয়া সরকার দামাস্কাসে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করার পরে আক্রমণের হুমকিও দিয়েছিল আমেরিকা। এ বার আইএস দমনের জন্য সেই সিরিয়া সরকারের সঙ্গেই আমেরিকাকে অভিযানে যেতে হতে পারে। কিন্তু আপাতত সিরিয়ার সঙ্গে যৌথ অভিযানের কোনও পরিকল্পনা নেই বলে জন কিরবি জানিয়েছেন। তবে আমেরিকা এগিয়ে এলেও ইউরোপের অন্যান্য দেশ তাদের সমর্থন করবে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই জার্মানি আসাদ সরকারের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার নীতিই বজায় রেখেছে। রাশিয়া অবশ্য আইএস জঙ্গিদের দমনের জন্য বিভেদ ভুলে সবাইকে আসাদ সরকারের সাহায্যের জন্য এগিয়ে যেতে অনুরোধ করেছে।
এ দিকে, রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার বিষয়ের প্রধান নভি পিল্লাই আইএস-এর বিরুদ্ধে একাধিক যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছেন। শুধু মসুল শহরেই এক বন্দিশালায় ৬০০ জনকে হত্যা করে আইএস জঙ্গিরা। একের পর এক উদাহরণ দিয়ে তিনি দেখান কী ভাবে আইএস জঙ্গিরা শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘনই নয়, যুদ্ধাপরাধও করেছে।
এরই পাশাপাশি, ইরাকে আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে ইরাকি সেনা ও কুর্দ যোদ্ধাদের লড়াই জারি আছে। সঙ্গে রয়েছে মার্কিন বিমান হামলা। ইরাকি বায়ু সেনা ফালুজা, বাবিল প্রভৃতি জায়গায় আইএস জঙ্গিদের উপরে আঘাত হেনেছে। প্রবল সংঘর্ষের পরে জালালা শহরের প্রবেশপথ কুর্দ যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আইএস জঙ্গিরা প্রবেশপথে আইডি বিছিয়ে রাখায় কুর্দ যোদ্ধাদের এগিয়ে যেতে সময় লাগছে। পাশাপাশি, বাগদাদের একটি শিয়া মসজিদে আত্মঘাতী হানায় প্রায় ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৩০ জন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy