Advertisement
Back to
Suvendu Adhikari in Bhangar

ভাঙড়ে সভার অনুমতি ‘বাতিল’ করল পুলিশ! শুভেন্দুর চ্যালেঞ্জ: জিতে এখানেই এসে সভা করব

বুধবার শুভেন্দুর সভা ছিল যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের অধীন ভাঙড়ের একটি স্কুলের মাঠে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা জানিয়েছেন, নিয়ম মেনে সভার অনুমতি গত ২৬ মে নেওয়া হয়েছিল তাঁর দলের তরফে।

শুভেন্দু অধিকারী।

শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২৪ ১৮:২৩
Share: Save:

ভাঙড়ে শুভেন্দু অধিকারীর জনসভা শেষ মুহূর্তে বাতিল করেছে পুলিশ। বুধবার সেই সভা বাতিলের চিঠি হাতে নিয়েই পুলিশকে পাল্টা আক্রমণ করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। একই সঙ্গে প্রশাসনকে তাঁর চ্যালেঞ্জ— অন্যায় ভাবে এই সভা বাতিলের জবাব তিনি দেবেন ৪ তারিখের পরে। ভাঙড়ের যে মাঠে বুধবার সভা করার কথা ছিল তাঁর, ভোটে জিতে সেই মাঠেই পাল্টা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন সভা করবেন তিনি। শুভেন্দুর দাবি, সেই সভা পুলিশও আটকাতে পারবে না। কারণ, প্রয়োজনে তিনি আদালতের কাছ থেকে সভার অনুমতি নেবেন।

বুধবার শুভেন্দুর সভা ছিল যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের অধীন ভাঙড়ের একটি স্কুলের মাঠে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা জানিয়েছেন, নিয়ম মেনে সভার অনুমতি গত ২৬ মে নেওয়া হয়েছিল তাঁর দলের তরফে। রাজ্য পুলিশের যে সুবিধা অ্যাপে এই ধরনের সভা বা মিছিলের অনুমোদন নিতে হয়, সেই অ্যাপের মাধ্যমেই অনুমতি চাওয়া হয়। পুলিশের তরফেও এ ব্যাপারে কোনও আপত্তি তোলা হয়নি। এমনকি, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যখন সভার মঞ্চ এবং প্যান্ডেল বাঁধার কাজ প্রায় শেষের পথে তখন পুলিশ জানতেও চায়নি, সভা কাদের। অবশেষে বুধবার বেলা ১১ টা নাগাদ পুলিশের তরফে একটি চিঠি দিয়ে জানানো হয়, ভাঙড়ে বিজেপির ওই সভা করা যাবে না। এতেই ক্ষিপ্ত হয়েছেন শুভেন্দু।

ভাঙড়ের মাঠে তিনি শাসক তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, ‘‘আগামী ১ তারিখ যে ভোট হবে তা ডু অর ডাই ভোট হবে। আইনকে হাতে তোলা হবে না। আমাদের প্রত্যেক কর্মী এবং তৃণমূল ছাড়া যে বিরোধীরা আছে তাদের বলব, সবাই এক হয়ে ভোটাররা এবং এজেন্টরা প্রতিরোধের প্রাচীর গড়ে তুলুন। শুরু করুন সকালবেলা। যাতে আমরা প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ করতে পারি। আগে ভোটদান পরে জলপান। আপনাদের বলে যাচ্ছি, এই মাঠেই ৪ তারিখের পর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন সভা করব আমরা। পুলিশ যদি বাধা দেয়, তবে আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আসব।’’

বুধবার সভার মাঠেই একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন শুভেন্দু। সেখানেই রাজ্য পুলিশকে আক্রমণ করেন তিনি। শুভেন্দু বলেন, ‘‘পুলিশ এমন সময়ে আমাদের সভা বাতিল করেছে, যখন আমাদের হাতে আর কোনও বিকল্প নেই। আর কারণ হিসাবে তারা জানিয়েছে, এই সভাস্থলের ১০০ মিটারের মধ্যে তৃণমূলের সভা হচ্ছে।’’ পুলিশের ওই চিঠি হাতে নিয়ে শুভেন্দুর প্রশ্ন, ‘‘আমি এই এলাকায় এক দিক দিয়ে এলাম, আমাদের দলের লোকজনও অন্য দিক দিয়ে এল, কোথাও কোনও সভার নামগন্ধ কিচ্ছু নেই। ১০০ মিটারের মধ্যে সভা হলে তো মাইকের শব্দ শোনা যাবে, তেমন কোনও শব্দ শোনা যাচ্ছে কি? মমতা ব্যানার্জির পুলিশ কতটা চিটিংবাজ এবং মিথ্যাবাদী, এই ঘটনাই তার প্রমাণ।’’

কেন পুলিশ এমন করেছে, নিজের মতো করে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন শুভেন্দু। সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, ‘‘আমরা বেশ কিছু দিন ধরেই একটা কথা বলছি, ভোটে তৃণমূল মাঠে নেই। লড়াই হচ্ছে পুলিশ বনাম বিজেপি। পুলিশ সর্বত্র এমন ভাব করছে, যেন আমাদের ট্যাক্সের টাকায় বেতন পায় না। যেন তাদের উপর বাপ-মা মরা দায় পড়েছে তৃণমূলকে বাঁচানোর এবং ভোটে জেতানোর।’’

বুধবার দুপুর ৩টে নাগাদ ভাঙড়ে সভা করার কথা ছিল শুভেন্দুর। বুধবার সকালে নিজের এবং তাঁর দলের সমাজমাধ্যমের পাতায় সেই ঘোষণাও করেন তিনি। শুভেন্দুর অভিযোগ, মঙ্গলবার পর্যন্ত সভা নিয়ে পুলিশের কোনও হেলদোল ছিল না। কিন্তু বুধবার সকালের পরই তারা হঠাৎ সক্রিয় হয়।

শুভেন্দু ছাড়াও উপস্থিত থাকার কথা ছিল যাদবপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ের। বিরোধী দলনেতা জানিয়েছেন, ভাঙড়ে তাঁদের দলের ভোটারেরা, যাঁরা ‘এই এলাকায় কার্যত সংখ্যালঘু’ তাঁরা, যাতে নিরাপদে ভোট দিতে যেতে পারেন সেই জন্যই চার-পাঁচ হাজার মানুষকে নিয়ে একটি মাঝারি মাপের সভা করার অনুমতি চেয়েছিলেন তাঁরা। তাতেই বাধা দেয় পুলিশ। শুভেন্দু জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি তাদের। উল্টে কমিশন তাঁদের বলেছে, ‘‘পুলিশ যদি আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে আপত্তি তোলে, তবে কমিশনেরও কিছু করার নেই।’’

শুভেন্দু জানিয়েছেন, তাঁরা আইন মেনে চলা নাগরিক, তাই অনুমতি না পাওয়ার পরে আর সভায় ভাষণ দেননি বা বক্তৃতা করেননি। আশপাশের গ্রামের মানুষকেও তড়িঘড়ি নিষেধ করা হয়েছে সভাস্থলে আসতে। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, এ ভাবে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল রাজ্যে বহুদলীয় গণতন্ত্রের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনের ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’-এর ক্ষতি করছে।

উল্লেখ্য, যে বিজেপি এখন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে অভিযোগ করছে, সেই বিজেপির বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনেছিল তৃণমূল। বাংলায় নির্বাচন চলাকালীন শাসকদলের নেতা-নেত্রীদের বাড়িতে ইডি-সিবিআই পাঠিয়ে তল্লাশি চালানোর ঘটনাকে ইচ্ছে করে ভোটের আগে বিরোধীদের একঘরে করে দেওয়ার চেষ্টা বলে অভিযোগ এনেছিলেন তৃণমূল নেতা-নেত্রীরা। বুধবার বিজেপির অভিযোগের জবাবেও নীরব থেকেছে তৃণমূল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Suvendu Adhikari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE