E-Paper

বন্ধ বহু রেস্তরাঁ, ভোটের শহরে খাবার খাওয়াল ‘ক্লাউড কিচেন’

দেদার খাবারের জোগান দিয়ে গিয়েছে শহরের ‘ক্লাউড কিচেন’গুলি। এক ডেলিভারি কর্মীর কথায়, ‘‘এর জেরেই নামী সংস্থা নয়, ভোটের দিনে নিজের হাতের রান্না খাইয়ে বাড়তি আয়ের মুখ দেখেছেন বাড়ির মা-মাসিমারা!’’

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৪ ০৮:২১

—প্রতীকী চিত্র।

শনিবার চলছিল ‘ভোট উৎসব’। কিন্তু কোনও উৎসব উদ্‌যাপন কি খাবার ছাড়া হয়? এই কারণেই লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফার ভোটের দিন শুধুমাত্র কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকা থেকেই প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার বরাত এসেছে সুইগি, জোম্যাটোর মতো অনলাইনে বরাত পাওয়া খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজে যুক্ত সংস্থাগুলির। কিন্তু ভোট চলছে বলেই এই সব সংস্থার আবার সমস্যাও হয়েছে বিস্তর। এক দিকে প্রচুর বরাত ঢুকেছে, কিন্তু ছিল না খাবার পৌঁছে দেওয়ার মতো লোক। ভোটের কারণেই কাজে নামেননি বেশ কয়েক হাজার ডেলিভারি কর্মী। বেশ কিছু রেস্তরাঁ আবার দিনের বেশির ভাগ সময়েই বন্ধ ছিল। উল্টো দিকে, দেদার খাবারের জোগান দিয়ে গিয়েছে শহরের ‘ক্লাউড কিচেন’গুলি। এক ডেলিভারি কর্মীর কথায়, ‘‘এর জেরেই নামী সংস্থা নয়, ভোটের দিনে নিজের হাতের রান্না খাইয়ে বাড়তি আয়ের মুখ দেখেছেন বাড়ির মা-মাসিমারা!’’

এমন পরিস্থিতি হতে পারে বুঝে আগেই ভোটের দিনে বাড়তি আয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিল খাবার
সরবরাহকারী সংস্থাগুলি। অরিন্দম রায় নামে এমনই এক সংস্থার কর্মী বললেন, ‘‘যাঁরা ভোটের দিনে কাজ করছেন, তাঁরা প্রতি অর্ডারে ২০-৩০ টাকা করে বেশি পেয়েছেন। কিন্তু এত কম সংখ্যক কর্মী কাজে নেমেছিলেন যে, যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের বসার সময় হয়নি। প্রচুর অর্ডার পৌঁছে দিয়ে তাঁদের এক-এক জন এক দিনে ভালই উপার্জন করেছেন।’’ অরিন্দমের আরও দাবি, বহু বাড়িতেই পরিচারিকা ছুটি নিয়ে ভোট দিতে গিয়েছিলেন। আবার অনেকেই ভোট দেবেন বলে বাইরে থেকে নিজের বাড়িতে ফিরেছেন। সব মিলিয়ে নানা প্রয়োজনে শনিবার বাইরে থেকে খাবার আনানোর প্রয়োজন পড়েছে। কিন্তু বরাত দিতে গিয়ে অনেকেই লক্ষ করেছেন, ডেলিভারি কর্মী পেতে সমস্যা হচ্ছে। নামী রেস্তরাঁও অনেক জায়গায় বরাত নেয়নি। তখন আশপাশের খাবার দোকানের নাম দেখেই খাবারের বরাত দিতে হয়েছে। এখানেই ‘ক্লাউড কিচেন’গুলি দারুণ ব্যবসা করে নিয়েছে।

ডেলিভারি সংস্থার কর্মীরা জানাচ্ছেন, শহরে দু’ধরনের ক্লাউড কিচেন রয়েছে। একটি হল, সুইগি বা জোম্যাটোর মতো সংস্থার ছাতার নীচে ঘর নিয়ে একাধিক সংস্থার কিচেন তৈরি করা হচ্ছে। নামী, অনামী সংস্থাগুলি সেখানেই নিজেদের রান্নার জায়গা রাখছে। অনলাইনে বরাত এলে এর পরে ডেলিভারি কর্মীদের সেখানে পাঠিয়েই খাবার নিয়ে পৌঁছে দিতে বলা হচ্ছে। ডেলিভারি কর্মীরা রেস্তরাঁর মূল ভবনে না গিয়ে সেই রান্নার জায়গা থেকেই খাবার নিয়ে নিচ্ছেন পৌঁছে দেওয়ার জন্য। আর একটি ‘ক্লাউড কিচেন’ হল বাড়ি থেকে রান্না। একে ‘হোম ক্লাউড কিচেন’-ও বলা হচ্ছে। রমেশ সাহা নামে এক ডেলিভারি কর্মী বললেন, ‘‘অনেকেই বাড়ি থেকে রান্না করে বিক্রি করতে চান। ফুড সেফটির শংসাপত্র নিয়ে একটি নতুন নাম দিয়ে সংস্থা খুলে এর পরে তাঁরা সুইগি বা জোম্যাটোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারেন। অনেকেই এমন নতুন সংস্থা থেকে খাবার বরাত দেন সেগুলি বাড়ির কাছে হওয়ায়
আর দাম কম হওয়ায়। ভোটের দিন অনেক বড় বড় রেস্তরাঁ বন্ধ থাকায় এমন বাড়ির খাবারই বিক্রি হয়েছে বেশি।’’

ভোটের দিনের পরিস্থিতি জানিয়ে মহেন্দ্র মণ্ডল নামে আর এক ডেলিভারি কর্মী বললেন, ‘‘এমনও হয়েছে যে বরাত দেওয়া খাবার নিয়ে ভোট দিতে গিয়েছি। দেরি হচ্ছে বলে এর পরে যিনি বরাত দিয়েছিলেন, তিনি চিৎকার করলেও ভোট দেওয়ার কাজ মিটিয়ে নেওয়া গিয়েছে। আসলে এত কম ডেলিভারি কর্মী কাজ করেছেন যে, যাঁরা বরাত দিতে গিয়েছেন তাঁরাও পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছেন। তবে যাঁরা এর পরেও কাজ করেছেন, তাঁরা হাসতে হাসতে এক দিনে দু’হাজার টাকার উপরে উপার্জন করতে পেরেছেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Food Delivery Lok Sabha Election 2024

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy