Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Electoral Bonds

কমিশন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আপত্তি, তা সত্ত্বেও আইন সংশোধন করে চালু বন্ড! লোকসানেও চাঁদা পদ্মকে

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নির্বাচনী বন্ড নিয়ে সমস্ত তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরে দেখা যাচ্ছে, ৩৩টি কর্পোরেট সংস্থা গত অর্থ বছরে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলিকে প্রায় ১২২৬ কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছিল।

PM Narendra Modi.

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৪৯
Share: Save:

নির্বাচন কমিশন মোদী সরকারের আইন মন্ত্রককে চিঠি লিখে আর্থিক নয়ছয়ের আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তদানীন্তন গভর্নর উর্জিত পটেল মোদী সরকারের অর্থ মন্ত্রককে চিঠি লিখে বলেছিলেন, আর্থিক নয়ছয়ের রাস্তা খুলে দেওয়া হচ্ছে।

এই আপত্তি সত্ত্বেও মোদী সরকার নির্বাচনী বন্ড চালু করার সময় কোম্পানি আইনি সংশোধন করেছিল। কোনও বেসরকারি সংস্থাকে যত ইচ্ছে রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দেওয়ার রাস্তা খুলে দিয়েছিল। সে তার মুনাফা যতই হোক না কেন। কিন্তু তার আগে পর্যন্ত নিয়ম ছিল, কোনও কর্পোরেট সংস্থা রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দিতে চাইলে আগের তিন বছরের গড় নিট মুনাফার সর্বোচ্চ ৭.৫ শতাংশ চাঁদা দিতে পারবে।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নির্বাচনী বন্ড নিয়ে সমস্ত তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরে দেখা যাচ্ছে, ৩৩টি কর্পোরেট সংস্থা গত অর্থ বছরে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলিকে প্রায় ১২২৬ কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় ৮৩০ কোটি টাকা বা মোট চাঁদার ৬৭ শতাংশের বেশি অর্থ বিজেপির তহবিলে গিয়েছিল। অর্থনীতিবিদ প্রসেনজিৎ বসুর নেতৃত্বে এক দল গবেষক নির্বাচনী বন্ড নিয়ে প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখছেন, এই ৩৩টি সংস্থার মধ্যে ৬টি সংস্থা আগের তিন বছরে কোনও মুনাফাই করেনি বা লোকসান করেছে।

এই ৩৩টি সংস্থার মধ্যে ৫টি সংস্থা আগের তিন বছরে নিট মুনাফার সব তথ্য প্রকাশ করেনি। কিন্তু তারা রাজনৈতিক দলকে বিপুল চাঁদা দিয়েছে। নির্বাচনী বন্ড চালুর আগের নিয়ম বহাল থাকলে এই সংস্থাগুলি রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দিতে পারতই না। কারণ, তারা যে বছরে চাঁদা দেবে, তার আগের তিন বছরের মুনাফার সর্বোচ্চ ৭.৫ শতাংশ চাঁদা দিতে পারবে বলে শর্ত ছিল। কিন্তু নির্বাচনী বন্ড চালু করার আগে ২০১৭ সালের অর্থ বিলের মাধ্যমে কোম্পানি আইনে সংশোধন করে এই শর্ত তুলে দেওয়া হয়। এখন দেখা যাচ্ছে, এই নিয়ম তুলে দেওয়ায় বহু সংস্থা এক পয়সা মুনাফা না করেও গোপনে কোটি কোটি চাঁদা দিয়েছে।

কোন কর্পোরেট সংস্থা কবে কোন দলকে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কত টাকা চাঁদা দিয়েছিল, স্টেট ব্যাঙ্ক সেই তথ্য প্রকাশ করেছিল। তার সঙ্গে ওই সব কর্পোরেট সংস্থার লাভ-ক্ষতির বহর নিয়ে সিএমআইই (সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি)-র তথ্যভান্ডার মিলিয়ে দেখেছেন গবেষকরা। তার পরেই দেখা যাচ্ছে যে, গত অর্থ বছর, অর্থাৎ লোকসভা ভোটের ঠিক আগের বছরে বহু সংস্থা মুনাফা না করেই রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা জুগিয়েছে। যার বেশির ভাগ গিয়েছে বিজেপির তহবিলে।

গবেষকেরা তথ্য মিলিয়ে দেখেছেন, ২০২২-২৩-এও একই ঘটনা ঘটেছে। ওই বছর ২৮টি সংস্থা রাজনৈতিক দলগুলিকে বন্ডের মাধ্যমে প্রায় ৭৬৭ কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছিল। এর ৭৬ শতাংশের বেশি, প্রায় ৫৮৫ কোটি টাকা বিজেপির তহবিলে গিয়েছে। আগের নিয়মে এই দুই বছরে ৫৫টি সংস্থা যত টাকা চাঁদা দিতে পারত, ঊর্ধ্বসীমা তুলে নেওয়ায় এরা তার থেকে প্রায় ১৩৭৭ কোটি টাকা বেশি চাঁদা দিয়েছে।

বিরোধীদের অভিযোগ, এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে বিপুল টাকার আর্থিক নয়ছয় হয়েছে। ভুয়ো সংস্থা খুলে অন্য কোনও সংস্থা বেনামে চাঁদা দিয়েছে। আজ কংগ্রেস, সিপিএম গোটা বিষয়ে তদন্তের দাবি তুলেছে। কারণ, প্রসেনজিৎদের বিশ্লেষণে
দেখা গিয়েছে, গত পাঁচ বছরে লোকসানে চলা মোট ৩৩টি সংস্থা রাজনৈতিক দলগুলিকে ৫৮২ কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছে। যার ৭৫ শতাংশ, প্রায় ৪৩৪ কোটি টাকা বিজেপির তহবিলে গিয়েছিল।

কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের বক্তব্য, ‘‘মোদী সরকার নির্বাচনী বন্ড চালু করার সময়েই রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক আর্থিক নয়ছয়ের আশঙ্কা তুলেছিল। কিন্তু যে কোনও উপায়ে চাঁদা জোগাড়ে মরিয়া বিজেপি তাতে কান দেয়নি। গোটা দেশ তার মূল্য দিচ্ছে।’’

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘আমরা নির্বাচনী বন্ডের বিরোধিতার সময় যে আশঙ্কা করেছিলাম, তা এখন সত্য বলে প্রমাণিত। ভুয়ো সংস্থা তৈরি করে, কর ফাঁকি দিয়ে চাঁদা তোলার রাস্তা তৈরি হয়েছিল।’’ ইয়েচুরির প্রশ্ন, এখানে আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইন (পিএমএলএ) লঙ্ঘন হয়েছে। তা হলে ইডি কোনও পদক্ষেপ করছে না কেন? না কি ইডি-র কাজ শুধুই বিরোধী নেতাদের নিশানা করা?

নির্বাচনী বন্ড চালু করার প্রস্তাবে নির্বাচন কমিশন আইন মন্ত্রককে চিঠি লিখে জানিয়েছিল, যদি কর্পোরেট সংস্থাকে এক পয়সা মুনাফা হলেও এক কোটি টাকা চাঁদা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, তা হলে শুধুমাত্র চাঁদা দেওয়ার জন্য ভুঁইফোড় সংস্থা খুলে ফেলা হবে। এই সব সংস্থার আর কোনও ব্যবসা থাকবে না। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কও চিঠি দিয়ে অর্থ মন্ত্রককে আর্থিক নয়ছয়ের আশঙ্কা জানিয়েছিল।

প্রসেনজিতের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনী বন্ডকে অসাংবিধানিক বলে খারিজ করে দিয়েছে। তার ফলে কোম্পানি আইনে যে সংশোধন করা হয়েছিল, তা-ও খারিজ হয়ে গিয়েছে। ফলে তিন বছরের গড় মুনাফার ৭.৫ শতাংশের বেশি চাঁদা দেওয়া যাবে না বলে যে
শর্ত ছিল, তা আবার ফিরে এসেছে। গত দু’বছরে ৫৫টি সংস্থা এই ঊর্ধ্বসীমার উপরে প্রায় ১৩৭৭ কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলির এই চাঁদার টাকা নির্বাচন কমিশনের কাছে ফেরত দেওয়া উচিত।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE