E-Paper

সিএএ নিয়ে রা কাড়েননি নড্ডা, অস্বস্তি বিজেপিতে

রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রটি তাঁদের গড় বলে দাবি করেন বিজেপি নেতারা। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে প্রায় ২ লক্ষ ৩৭ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৪১
রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী জগন্নাথ সরকার এর ভোট প্রচারে নদিয়ার বগুলায় বিজেপি সভাপতি জে পি নাডাড।

রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী জগন্নাথ সরকার এর ভোট প্রচারে নদিয়ার বগুলায় বিজেপি সভাপতি জে পি নাডাড। নদিয়ার বগুলায়। ২৮এপ্রিল২০২৪। ছবি: প্রণব দেবনাথ

মতুয়া গড়ে দাঁড়িয়ে নয়া সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে একটিও শব্দ খরচ করলেন না বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডা। মতুয়াদের নিয়েও কোনও কথা বলেননি তিনি। যা অস্বস্তিতে ফেলেছে বিজেপির স্থানীয় নেতাদের একাংশকে। হতাশ বিজেপির মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতাদের একাংশও। যা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তৃণমূল। তাদের দাবি, সিএএ বুমেরাং হচ্ছে বুঝতে পেরেই বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেনবিজেপির নেতারা।

রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকারের সমর্থনে বগুলায় রবিবার প্রচারে আসেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডা (জে পি নড্ডা)। জনসভায় তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন এবং অনুদানের ফিরিস্তি শোনান। তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হন। তিনি দাবি করেন, তৃণমূলের চালচোরেরা সব চুরি করে নিয়েছে। নরেন্দ্র মোদী টাকা পাঠিয়েছেন আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাতে নিজের ছাপ লাগিয়ে চালাতে চেয়েছেন। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালু করতে দেননি মমতা। তবু এখানে যে এমস হয়েছে তা মোদীরই দান। রেলের বাজেটও তিন গুণ বাড়ানো হয়েছে। মোদীর নেতৃত্বে ভারত বিশ্বের তৃতীয় আর্থিক শক্তি হিসাবে উঠে আসবে বলেও তিনি দাবি করেন। তবে সিএএ বা মতুয়াদের নিয়ে কোনও কথা বলেননি তিনি। বিজেপির নেতাদের একাংশ মানছেন, মতুয়া গড়ে এসে সিএএ বা মতুয়াদের নিয়ে নড্ডা একটিও শব্দ খরচ না-করায় অস্বস্তিতে পড়েছেন তাঁরা।

রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রটি তাঁদের গড় বলে দাবি করেন বিজেপি নেতারা। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে প্রায় ২ লক্ষ ৩৭ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার। ২০২১ সালে ওই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছে বিজেপি। ভোটকুশলীরা মনে করেন, মতুয়া ও নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের ভোটারেরা দু’হাত তুলে সমর্থন করায় বিজেপি এত বিপুল ভোটে জিততে পেরেছিল। তবে এ বারের লোকসভা নির্বাচনে ছবিটা ভিন্ন। ‘মতুয়া মুখ’ বলে পরিচিত মুকুটমণি অধিকারী বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তৃণমূল তাঁকে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থীও করেছে। বিজেপি সূত্রে খবর, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একচেটিয়া ভোট পেতে মতুয়া সম্প্রদায়কে আরও বেশি গুরুত্ব ও তাঁদের দলের ছাতার তলায় বেঁধে রাখতে মরিয়া বিজেপি।

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, হাঁসখালি ব্লক ও সংলগ্ন এলাকা মতুয়া অধ্যুষিত। রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে জয়-পরাজয় অনেকটাই নির্ভর করছে এখানকার ভোটারদের উপরে। সে কথা মাথায় রেখেই মুকুটমণির ধাক্কা সামলাতে বগুলায় জে পি নড্ডার জনসভার আয়োজন করেছিল বিজেপি। অথচ সেই সভাতেই আশাহত হতে হল তাদের। জনসভায় আসা মানুষের বেশির ভাগই ছিলেন মতুয়া সম্প্রদায়ের। প্রায় ৭০টি মতুয়া দল এসেছিল ওই জনসভায়। তাঁরা নড্ডার মুখ থেকে আশার বাণী শোনার অপেক্ষায় ছিলেন। বিশেষ করে সিএএ নিয়ে যে ভাবে বাদানুবাদ চলছে তাতে অনেকেই বিভ্রান্ত। বিজেপি নেতাদের একাংশও আশা করেছিলেন, বিভ্রান্তি কাটাতে নড্ডা মতুয়াদের উদ্দেশ্যে বার্তা দেবেন। সভা ফিরতি এক প্রৌঢ়ের আক্ষেপ, ‘‘মতুয়ারা বিভ্রান্ত। তৃণমূল সিএএ নিয়ে অনেক কথা বলে সবাইকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। ভেবেছিলাম নড্ডা তা নিয়ে কিছু বলবেন। কোথায় কী?”

স্থানীয় এক বিজেপি নেতার কথায়, “মতুয়ারাই আমাদের প্রধান ভোট ব্যাঙ্ক। এই ভোট ধরে রাখতেই হবে। তার পরেও দলের সর্বভারতীয় সভাপতি তাঁদের নাম মুখেআনলেন না।”

রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী মুকুটমণি অধিকারী বলেন, “মতুয়াদের ভোট ব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করে, সিএএ-এর মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। মতুয়ারা নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবি করে এসেছেন। তাঁরা বুঝতে পেরেছেন যে, এই সিএএ আসলে নাগরিকত্ব দেওয়ার নয়, এটা নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার আইন।” তিনি আরও বলেন, “বিজেপি নেতারা সেটা বুঝতে পেরে সিএএ নিয়ে কোথাও মুখ খুলছেন না। নড্ডাও সেটাই করে গেলেন।”

বিজেপিপন্থী মতুয়া সংগঠনের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুশীল বসু এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর সামান্য সংযোজন, ‘‘যে যাই বলুন না কেন, মতুয়ারা বিজেপির সঙ্গেই আছেন।”

নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মতুয়ারা আমাদের সঙ্গে ছিলেন, আছেন ও থাকবেন। তৃণমূল যতই অপপ্রচার করুক, তাঁরা আমাদের সঙ্গেই থাকবেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 BJP JP Nadda

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy