Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha Election 2024

নির্বাচনের চাকা ঘুরলেও জীবন থমকে চর মেঘনায় 

এখানকার সকলেরই ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, আধার কার্ড থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়া সুযোগ এখনও হয়নি।

চর মেঘনা গ্রামের রাস্তা।

চর মেঘনা গ্রামের রাস্তা। —ছবি : সংগৃহীত

অমিতাভ বিশ্বাস
 করিমপুর  শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:১২
Share: Save:

সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে ‘এ পারের’ গ্রাম চর মেঘনা। আর পাঁচটা গ্রামের মতোই মতোই এখানে নিস্তরঙ্গ জীবন বাসিন্দাদের। কিন্তু সেই নিস্তরঙ্গ জীবনেও তরঙ্গ আসে। আর তা আসে ভোটের হাত ধরে। এখানকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ বা আক্ষেপ, দীর্ঘদিন ধরে খাঁচায় বন্দি পশুপাখির মতো বদ্ধ জীবন তাঁদের। নিজভূমে তাঁরা পরবাসী। দাবি অনেক পুরোনো হলেও আজ পর্যন্ত কাঁটাতারের বেড়া সরিয়ে ভারতের ভূখণ্ডের সঙ্গে তাঁদের গ্রামকে যুক্ত করা হয়নি। অথচ তাঁদের পরিচয় তাঁরা ভারতবাসী। এদেশেরই মানু‌ষ।

গ্রামের বাসিন্দাদের বক্তব্য, তাঁদের দুঃখ-কষ্টের কথা যাঁরা শুনবেন বলে ভোটের সময় প্রতিশ্রুতি দেন, সেই গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য, পঞ্চায়েত প্রধান, বিধায়ক থেকে সাংসদ ভোট মিটে গেলেই কেমন যেন পর হয়ে যান। তাঁদের আক্ষেপ, বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হয়ে আর একটা লোকসভা ভোট সামনে। কিন্তু সাংসদ একবারের জন্যও এখানকার মানুষের দুঃখ-দুর্দশার খোঁজ নিতে কাঁটাতারের গেট পেরিয়ে গ্রামে ঢোকেননি। এখানকার সকলেরই ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, আধার কার্ড থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়া সুযোগ এখনও হয়নি। গ্রামবাসী সুলেখা মণ্ডল বলছেন, ‘‘আমাদের গ্রামে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি ও তৃণমূল সব দলের লোকেরাই আছে। রাজনৈতিক লড়াই থাকলেও আমাদের বাঁচার লড়াই কিন্তু একসাথে। গ্রামের অভিভাবক তো জনপ্রতিনিধিরাই। অথচ দুঃখের বিষয়, মাননীয় সাংসদ আবু তাহের একবারও গ্রামে আসেননি। শুনেছি আবার ভোটে দাঁড়িয়েছেন।’’

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

এক গ্রামবাসী জানান, সচিত্র পরিচয় পত্র সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর জওয়ানদের দেখিয়ে কাঁটাতারের গেট পেরিয়ে গ্রামে যাতায়াত করতে হয়। আগের ভোটের দিনগুলির মতো এবারও চর মেঘনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। মোট ৫৯৮ জন ভোটার। তার মধ্যে মহিলা ২৮৮ ও পুরুষ ৩১০। ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় হলেও সেই তালিকায় ঠাঁই মেলেনি চর মেঘনার। গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে সুষমা স্বরাজকে চিঠি দেওয়ার পর এই গ্রাম ভারতে অন্তর্ভুক্তির তালিকায় স্থান পায়। ব্যাস ওই পর্যন্তই। বিজেপির গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সুমিত্রা মাহাত মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘এই বিস্তীর্ণ এলাকার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির মধ্যে আমাদের গ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান ব্যতিক্রমী। এখনও বিএসএফের অনুশাসন মেনে গ্রামের মানুষকে যাতায়াত করতে হয়। আমাদের কোনও স্বাধীনতা নেই। এমন অনেক সামাজিক সমস্যা রয়েছে যেগুলি সমাধানের জন্য জনপ্রতিনিধির মুখাপেক্ষী হওয়া ছাড়া উপায় নেই। অথচ খুবই দুঃখের, আগের লোকসভা ভোটে জেতার পর সাংসদ আজ পর্যন্ত আমাদের গ্রামেই আসেননি।’’ একই কথা তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সমর বিশ্বাসেরও।য় তিনি বলেন, ‘‘সাংসদ আবু তাহের খান একটি বারের জন্যও আমাদের কথা শুনতে গ্রামে আসেননি।’’

এবার মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী মহঃ সেলিম এ বিষযে বলেন, "তৃণমূলের সাংসদ কেন যাননি আমি জানি না। তবে এটুকু বলতে পারি, আমাদের আগে সাংসদ ছিলেন বদরুদ্দোজা খান ও মাসাদুল হোসেন। তাঁরা কিন্তু ওই গ্রামের মানুষের দুঃখ-কষ্ট শুনতে গিয়েছিলেন। এমনকি পার্লামেন্টে তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরে সমাধানের চেষ্টাও করেছিলেন। কারও অবহেলা থাকলে ভোটেই তার জবাব দেবেন মানুষ।’’ বিজেপি প্রার্থী গৌরী শঙ্কর ঘোষের বক্তব্য, ‘‘ওই গ্রামের ভারতে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কেন্দ্র সরকার সক্রিয়। প্রথম পর্যায়ে পিলার সরানোর কাজও হয়েছে। এমনকি কাঁটাতারের বেড়া সরানোর বিষয়টিও সরকার গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। আবু তাহের খান পাঁচ বছরেও যখন চর মেঘনার মানুষের সমস্যার কথা শোনার সময় পাননি তখন মানুষ তো প্রশ্ন করবেই। এমনকি তার জবাবও দিয়ে দেবে।’’

যদিও বিদায়ী সাংসদ ও এবারের তৃণমূল প্রার্থী আবু তাহের খান বলেন, "ওই গ্রামের মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা আমি সংসদে তুলে ধরেছি। সমস্যার সমাধান করাই আমার উদ্দেশ্য। এই সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু বলবে।"

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Char Meghna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE