E-Paper

দিশা না থাকায় কি ভরাডুবি জোটের, চর্চা

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, বামেরা ‘ত্রিমুখী’ লড়াই হচ্ছে বলে দাবি করলেও আসলে ভোট ছিল ‘দ্বিমুখী’।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২৪ ০৫:৩৭
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

পঞ্চায়েত ভোট আশা জাগিয়েছিল বাম-কংগ্রেস শিবিরে। সেই আশায় জল ঢালল লোকসভা ভোট। এ বারও জেলার দুই কেন্দ্রে দাগ কাটতে পারলেন বা বামপ্রার্থীরা।

নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট বলছে, বর্ধমান পূর্ব আসনের সিপিএম প্রার্থী নীরব খাঁ পেয়েছেন ১,৭৬,৮৯৯টি ভোট। বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনের সিপিএম প্রার্থী সুকৃতি ঘোষালের বাক্সে পড়েছে ১,৫৩,৮২৯টি ভোট। প্রাপ্ত ভোট এত কম হবে তা আশা করেনি জোট-শিবির। পঞ্চায়েত নির্বাচনে পাওয়া ভোট কেন ধরে রাখা গেল না, প্রশ্ন সেটাও। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী পেয়েছিলেন ১,৬১,৩২৯ ভোট। এ বার তার থেকে সাত হাজার ভোট কম পেয়েছেন সিপিএম প্রার্থী। তবে সিপিএমের দাবি, গত বিধানসভা ভোটের তুলনায় এ বার ফল ভাল হয়েছে। দলের জেলা সম্পাদক সৈয়দ হেসেনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ফলাফল পর্যালোচনা করিনি। বেশি করে মানুষের কাছে যেতে হবে।’’

নীরব বলেছেন, ‘‘এত কম ভোট পাব তা ভাবতেই পারিনি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে যা ভোট পেয়েছিলাম, তার ধারেকাছেও যায়নি আমাদের ভোট।’’ গত লোকসভা ভোটে বর্ধমান পূর্ব আসনে একা লড়ে কংগ্রেস পেয়েছিল ৩৮,৪৭২ ভোট। সেই ভোট এ বার জোটপ্রার্থীর বাক্সে পড়েনি বলেই মনে করছেন সিপিএম নেতৃত্বের একাংশ। ২০১৯-র লোকসভা ভোটে সিপিএম প্রার্থী পেয়েছিলেন ১,৭৫,৯২০ ভোট। এক সিপিএম নেতার দাবি, ‘‘অঙ্কই বলে দিচ্ছে, কংগ্রেসের ভোট আমরা পাইনি। পেলে আমাদের প্রার্থীর বাক্সে দু’লক্ষের বেশি ভোট পড়ত।’’ জেলা কংগ্রেসের নেতা অভিজিৎ ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমাদের সমর্থকেরা কাকে ভোট দিয়েছেন, তা বলা সম্ভব নয়। তবে গতিপ্রকৃতি দেখে মনে হয়েছে, বিজেপিকে যে হারাতে পারে, মানুষ তাকেই ভোট দিয়েছেন।’’

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, বামেরা ‘ত্রিমুখী’ লড়াই হচ্ছে বলে দাবি করলেও আসলে ভোট ছিল ‘দ্বিমুখী’। একেবারেই ঘরের লোক ছাড়া বাম প্রার্থীদের ভোট দেননি কেউ। মূলত তিন-চারটি কারণে বাম-কংগ্রেসের উপরে ভোটাররা ভরসা রাখতে পারেননি বলে মনেকরেন তাঁরা। প্রথমত, ‘বিজেপি জুজু’ দেখিয়ে বামেদের ভোট পাওয়ার চেষ্টায় উল্টো ফল হয়েছে। যার ফলে গত পঞ্চায়েত ভোটে বাম-কংগ্রেসের ঝুলিতে আসা সংখ্যালঘু ও গরিব মানুষের ভোট এ বার ফিরেছে তৃণমূলের ঝুলিতে। বাম-কংগ্রেসের পক্ষে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয় মনে করে সংখ্যালঘু ভোটাররা আস্থা রেখেছেন রাজ্যের শাসকদলের প্রতি।

দ্বিতীয়ত, মানুষের হাতে বিকল্প উপায়ে নগদ অর্থের জোগান কী ভাবে পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই দিশা না দেখিয়ে রাজ্য সরকারের কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিকে ‘ডোল রাজনীতি’ বলে কটাক্ষ ভোটাররা মেনে নেননি। বামেদের উত্থানের বিকল্প পথ নিয়ে সাম্প্রতিক বিভিন্ন আলোচনায় অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারকে কল্যাণকর ভূমিকার কথাও বলেছিলেন তাঁরা। মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, বামফ্রন্ট সরকারও বেকার ভাতা দিত। প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষকে পাট্টা দিয়েছিল। সেগুলি ‘ডোল রাজনীতি’ ছিল না। সেই বামেরাই বর্তমান রাজ্য সরকারের কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিকে ‘ডোল রাজনীতি’ বলে সমালোচনা করাকে ‘দ্বিচারিতা’ মনে করেছেন অনেকে।

তৃতীয়ত, শিল্পাঞ্চলে বাম-কংগ্রেস জোটের কর্মসংস্থান বা শিল্পের দাবি তেমন গুরুত্ব পায়নি। সকলকেই খেটে খেতে হবে। রেশন, লক্ষ্মীর ভান্ডার-সহ অন্য সামাজিক প্রকল্পগুলি চালু থাকলে অন্তত মৌলিক চাহিদাটুকু মিটবে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, “এখনই ভোটের এই ফলের কারণ বলা সম্ভব নয়। বুথ এবং রাউন্ড ধরে ভোটের হিসাব হবে। তার পরে কেন এই পরিস্থিতি তা বিশ্লেষণ করা হবে। তা ছাড়া গত কয়েকটি নির্বাচন দেখে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে ভোট করাতে হলে এখন অর্থবল ও পেশিশক্তি থাকা প্রয়োজন। বিজেপি ও তৃণমূলের তা আছে। আমাদের নেই।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPIM Congress

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy