Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha Election 2024

মোবাইলে মোদীবাণী শোনাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী, বিপক্ষে অধ্যাপক

বড় বিপাকে পড়েছেন তিনি। একে তো রাজ্যে চলতে থাকা সংঘর্ষে তিনি কাঠগড়ায়। দলের মধ্যে তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে অসন্তোষ। মহিলাদের সংগঠন মেইরা পাইবি তাঁর নাম শুনলেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠছে।

এন বীরেন সিংহ।

এন বীরেন সিংহ। — ফাইল চিত্র।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
ইম্ফল শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:৫৫
Share: Save:

চৈত্রের বসন্ত প্রাতে বেজে উঠল মোবাইল। ধ্বনিত হতে থাকল আশ্বাসবাণী, অভয়বার্তা। বীরেনকণ্ঠে বাজতে থাকল তার অনুবাদ। থাম্বাল সাংলেনের মহিলা সম্মেলন জুড়ে কেমন একটা মহালয়া-মহালয়া ভাব!

টালমাটাল গদি, পড়তে থাকা জনপ্রিয়তা, লোকসভা ভোটের ইনার কেন্দ্রে ক্রমেই কোণঠাসা হতে থাকা বিজেপির নৌকো সামলাতে আপাতত ওই দুই রেকর্ডিংকেই হাল-বৈঠা করে এগোতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ। লোকসভায় মণিপুর নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর ২ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের বক্তব্য। অন্যটি স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লায় ২৯ সেকেন্ডের।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

রাজ্য জুড়ে অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদী মণিপুর নিয়ে নীরব। কিন্তু হাতে পাঁজি মঙ্গলবার— ওই দুই রেকর্ডিং বাজিয়ে বাজিয়ে বীরেন বুক ঠুকছেন, “কে বলল কথা বলেননি! এই তো বলেছেন। এক নয়, একাধিকবার। বিশ্বাস হচ্ছে না? তা হলে নিজের কানে শোনো।”

কেইশামথং এলাকায় বিমল আকোইজামের প্রচার।

কেইশামথং এলাকায় বিমল আকোইজামের প্রচার। — নিজস্ব চিত্র।

বড় বিপাকে পড়েছেন তিনি। একে তো রাজ্যে চলতে থাকা সংঘর্ষে তিনি কাঠগড়ায়। দলের মধ্যে তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে অসন্তোষ। মহিলাদের সংগঠন মেইরা পাইবি তাঁর নাম শুনলেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠছে। তার উপরে গত ১১ মাসে অসমে এলেও এক বারের জন্যে মণিপুরমুখো হননি প্রধানমন্ত্রী। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের প্রার্থী তথা জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিমল আকোইজাম সহজেই মোদীর অবহেলা, মোদীর নীরবতা, মোদীর বিশ্বাসঘাতকতাকে হাতিয়ার করে ভোট চাইছেন। ইনার কেন্দ্রে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী শিক্ষামন্ত্রী ও প্রাক্তন আইপিএস বসন্ত কুমার সিংহ। মেইরা পাইবির বয়কট ও আরাম্বাই টেঙ্গলের নিষেধাজ্ঞার জেরে সরকার বা বিরোধী কোনও পক্ষই ইম্ফলে প্রচার, জনসভা করা, পোস্টার লাগানোর ঝুঁকি নেয়নি। তাই প্রচার চলছে পাড়ায় পাড়ায়। দোকানে দোকানে।

নামবুল নদীর পারে সান্ধ্য-বাজারে দোকানমালিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগে বিমলকে হাতে পাওয়া গেল। সময় দিলেন রাত সাড়ে নটা। চারতলা বাড়ির ভিতরে ঢুকে মহাযজ্ঞের পরিবেশ মালুম হয়। নিরাপত্তারক্ষী, স্বেচ্ছাসেবীতে গিজগিজ করছে নীচের অংশ। ওয়াকিটকিতে খবর পৌঁছতে পৌঁছতে আমরাও উপরে উঠতে থাকি।

সাক্ষাৎকারে রাজনীতিক নয়, শিক্ষক সত্তাই বেশি বেরিয়ে এল। অধ্যাপনা ছেড়ে রাজনীতিতে কেন এলেন? বললেন, “আমি বরাবরই রাজ্য রাজনীতি নিয়ে সরব। তার উপরে ভোট দিয়েছি। তার মানেই তো রাজনীতির অংশ ছিলাম। বলতে পারেন ভোট রাজনীতিতে প্রথম এসেছি। কারণ, যত ক্ষণ না সংসদে বক্তব্য রাখব, আমার মতামত সেই গুরুত্ব পাবে না। তাই বাবা যে দল থেকে লড়েছিলেন, সেই দলই বেছে নিলাম।”

বিমল বলে চলেন, তাও নামতাম না এই মাঠে। বিজেপি সরকার পরিস্থিতি কবে ঠিক করে সেই অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে মণিপুরকে অবজ্ঞা করলেন, যে ভাবে স্বাধীন ভারতে নজিরবিহীন গৃহযুদ্ধ, শরণার্থী সমস্যা দেখা দিয়েছে মণিপুরে, তাতে এই সরকারের উপরে কারও ভরসা নেই। রাজ্যবাসীর ক্ষোভ বৃহত্তর মঞ্চে তুলে ধরতেই ভোটে নামলাম। তাঁর দাবি, নিশ্চয়ই এই হানাহানি রাজনৈতিক স্বার্থে ঘটতে দেওয়া হচ্ছে। তাই সেনাকে পরিস্থিতি সামলানোর পূর্ণ স্বাধীনতা দিচ্ছে না এই সরকার।

কিন্তু সমাধানের কোন প্রতিশ্রুতি তিনি দিচ্ছেন মানুষকে? বিমল বলেন, “আমি কোনও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি না। বলছি, এই পরিস্থিতি যেমন রাজ্যে বেনজির, তেমনই এ বারের ভোটও রাজ্যের ইতিহাসের টার্নিং পয়েন্ট হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর যেহেতু মণিপুর নিয়ে মাথাব্যথা নেই, তাই জনতাকেই নিজের ভবিষ্যৎ সামলাতে হবে।”

কিন্তু যে অধ্যাপক দিল্লিতে বসে ইম্ফলে সশস্ত্র বেসামরিক বাহিনীর দাপট, কুকি-মেইতেই সংঘর্ষ নিয়ে মেইতেইদের সমালোচনা করেছিলেন, তিনিই প্রার্থী হওয়ার পরে সুর বদলেছেন। ইনার কেন্দ্রের মেইতেই ভোটের স্বার্থে তিনি বললেন, কুকিদের দিকে জনসংখ্যার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ অবশ্যই অনুপ্রবেশ। বিধানসভায় তাদের আসন বেড়ে ১০ হয়ে গিয়েছে। তাই ভূমিপুত্র-অ-ভূমিপুত্রদের আলাদা করতেই হবে। তবে, সে কাজ করতে হবে বিজ্ঞানসম্মত ও সংবিধানস্বীকৃত পথে। অবশ্যই আনতে হবে এনআরসি। তাঁর মতে, সংখ্যালঘু হয়ে পড়ার আতঙ্ক থেকেই মেইতেইদের মধ্যে থেকে এসটি হওয়ার দাবি উঠেছে।

এ দিকে গদি কোনও মতে ধরে রাখলেও ইনার কেন্দ্রে হারলে বীরেনের দিকে আঙুল তুলবেই দল। তাই ভোটের নানা কৌশল তৈরি, অনুগত আরাম্বাই বাহিনীকে কোন ভাবে কাজে লাগানো যায়— সেই পরিকল্পনায় বেজায় ব্যস্ত মুখ্যমন্ত্রীর দফতর। আর কংগ্রেসের সমালোচনা রুখতে মোবাইলের ওই দুই রেকর্ডিংকেই ব্রহ্মাস্ত্র করেছেন বীরেন। মোদীকণ্ঠের পাশাপাশি চলছে বীরেনের গলায় মেইতেই অনুবাদ।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE