গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আসানসোলে তৃণমূলের অভিনেতা-সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হার বিরুদ্ধে ভোজপুরী গায়ক-নায়ক পবন সিংহকে প্রার্থী করল বিজেপি। ঘটনাচক্রে, শত্রুঘ্নের মতো পবনও বিহারের বাসিন্দা। ফলে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে দুই ‘বিহারিবাবু’র লড়াই দেখবে আসানসোলবাসী।
শনিবার লোকসভা ভোটের ১৯৫ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি। ঘোষিত হয়েছে বাংলার ২০ জন প্রার্থীরও নাম। তার মধ্যে আসানসোলের প্রার্থী পবন। তিনি বিহারের আরা জেলার জোকহারি গ্রামের বাসিন্দা। বিজেপির প্রার্থিতালিকায় ৪৭ জন তরুণ নেতার মধ্যে পবন এক জন। তাঁর বয়স ৩৮। ভোজপুরী সিনেমা জগতে অন্যতম নাম পবন। তিনি একাধারে যেমন গায়ক, তেমন অভিনয়েও সমান পারদর্শী। ২০১৭ সালে ‘দাদা সাহেব ফালকে’ পুরস্কার পান তিনি। ২০১৬ সালে আন্তঃরাষ্ট্রীয় ভোজপুরী সিনেমাতেও পুরস্কৃত হয়েছেন।
বছর তিনেক আগে ২০২১ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন পবন। তিনি ছাড়াও প্রথম দফার প্রার্থিতালিকায় আরও তিন ভোজপুরী তারকার নাম রয়েছে। উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে প্রার্থী হয়েছেন রবি কিসান। দীনেশলাল যাদব নিরহাউয়াকে প্রার্থী করা হয়েছে আজমগড় থেকে। আর মনোজ তিওয়ারি প্রার্থী হয়েছেন উত্তর-পূর্ব দিল্লি থেকে। বিজেপি সূত্রে খবর, প্রাথমিক ভাবে বিহারের আরা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন পবন। কিন্তু আসানসোলে শত্রুঘ্নের ‘বিপুল জনপ্রিয়তা’র বিষয়টি মাথায় রেখে পবনকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আরা কেন্দ্রে প্রার্থী আরকে সিংহ।
পবনের নাম প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা হওয়ার পর তাঁকে শুভকামনা জানিয়েছেন শত্রুঘ্ন। তিনি বলেন, ‘‘আমি এই নাম আগে শুনিনি। বিহারের কোথাকার বাসিন্দা জানি না। যেখানকারই হোক না কেন, আমার শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইল।’’
শত্রুঘ্ন বিহারের ‘ভূমিপুত্র’। তিনি নিজেকে ‘বিহারিবাবু’ বলে পরিচয় দিতেই পছন্দ করেন। বাবুল সুপ্রিয় বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসার পর আসানসোলে যে উপনির্বাচন হয়, সেখানে শত্রুঘ্নকে প্রার্থী করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপনির্বাচনে বিজেপির দু’বারের জেতা আসন ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। তার আগে কখনও আসানসোলে তৃণমূল জেতেনি। পশ্চিম বর্ধমানের শিল্পাঞ্চলের এই লোকসভায় হিন্দিভাষীদের আধিক্য রয়েছে। ফলে বিজেপির জন্য সেই জমি হয়ে উঠেছিল উর্বর। উপনির্বাচনে তৃণমূল শুধু তা ভাঙেইনি, প্রায় তিন লক্ষ ভোটে জিতেছিলেন শত্রুঘ্ন। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, ওই বিপুল ব্যবধান থেকে জয় ছিনিয়ে আনার জন্য শত্রুঘ্নের মতোই জনপ্রিয় কাউকে প্রার্থী করা জরুরি ছিল। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘হিন্দিভাষীদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয় পবন সিংহ। তাঁর ইউটিউবে চ্যানেলও রয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে পারবেন পবন। এই সব বিষয় নজরে রেখেই তাঁকে শত্রুঘ্নের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে চেয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।’’
পবনের নাম ঘোষণা হওয়ার পরেই আসানসোলে প্রচারে নেমে পড়েছেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে গিয়েছে। কোথাও কোথাও পথসভা করে পবনের নামে স্লোগানও তুললেন দলীয় কর্মীরা।
গত মাসে কেন্দ্রীয় ‘বঞ্চনা’র বিরুদ্ধে রেড রোডে ধর্নায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা। সেই সময় পশ্চিম বর্ধমানের জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে মমতাই জানিয়ে দিয়েছিলেন, আসানসোলে এ বারও শত্রুঘ্নকেই প্রার্থী করবেন। তিনি আড়াই দশকের বেশি সময় বিজেপি করেছেন। ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের মন্ত্রীও। কিন্তু মোদী-শাহের বিজেপির সঙ্গে তাঁর গোড়া থেকেই সংঘাত তৈরি হয়েছিল। শেষমেশ তৃণমূলে যোগ দিয়ে সাংসদ হন শত্রুঘ্ন।
তৃণমূলের একাংশ সেই সময়ে মনে করেছিলেন, রামমন্দির উদ্বোধনের পর গোবলয়ে অন্য আবেগ কাজ করছে। হিন্দিভাষী অধ্যুষিত কোনও এলাকায় রাম আবেগ থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তার মোকাবিলায় আসানসোলে শত্রুঘ্নকে দাঁড় করানোর কথা ভেবেছেন মমতা। অন্য দিকে জমি পুনরুদ্ধারে পবনে ভরসা রাখলেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy