E-Paper

বকেয়া বিপুল, লোকসভা ভোটে তেল দিতে নারাজ পেট্রল পাম্প

সংগঠন সূত্রের দাবি, হুগলিতে সব মিলিয়ে বকেয়ার অঙ্ক প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। জেলায় পাম্প তিনশোর কাছাকাছি।

পীষুষ নন্দী, সুশান্ত সরকার

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:২৩
সরকারি বকেয়ার জেরে সমস্যায় বহু পেট্রল পাম্পে।

সরকারি বকেয়ার জেরে সমস্যায় বহু পেট্রল পাম্পে। নিজস্ব চিত্র।

বিধানসভা ভোট হয়েছে তিন বছর আগে। পঞ্চায়েত ভোটের পরে আট মাস কাবার। ওই দুই নির্বাচনে পেট্রল-ডিজ়েলের খরচ বাবদ বিপুল অঙ্কের টাকা বকেয়া। এই নিয়ে পেট্রল পাম্পগুলি সরকারের কাছে তদ্বির করছে। তবে ওই টাকা না মিটিয়েই লোকসভা নির্বাচনের কাজে তেল দেওয়ার জন্য প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছে হুগলি জেলার বিভিন্ন পেট্রল পাম্প কর্তৃপক্ষকে।

এই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ পেট্রল পাম্প মালিকদের একাংশ। বকেয়া মিটিয়ে লোকসভা নির্বাচনের জন্য অগ্রিম না দিলে তারা তেল দিতে পারবে না জানিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে পেট্রল পাম্প মালিকদের সংগঠন।

পাম্পগুলি বেঁকে বসায় প্রশাসনও বেকায়দায় পড়ছে। আপাতত কার্যত ‘বুঝিয়ে-সুঝিয়ে’ তেল নিতে হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। হুগলি জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘বকেয়ার বিষয়টি রাজ্যস্তর থেকে দেখা হচ্ছে। শীঘ্রই সমস্যা মিটে যাবে।’’

গোটা রাজ্যে একই চিত্র জানিয়ে পাম্প মালিকদের সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সভাপতি প্রসেনজিৎ সেনের অভিযোগ, ‘‘এক একটি পাম্পে ১ থেকে ২৫ লক্ষ টাকার বেশি বাকি। তা বার বার মেটানোর দাবি করলেও মেটেনি। ফের লোকসভা ভোটের কাজে তেল নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। কিছু জায়গায় প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে নেওয়াও হচ্ছে।’’ তিনি জানান, ডিলারদের ঘাড়ে বিপুল এই আর্থিক বোঝা চাপানোয় ব্যবসায় সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ব্যবসা সুষ্ঠু ভাবে চালাতে ৪ মার্চ রাজ্য নির্বাচন কমিশনে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে লোকসভা নির্বাচনের জন্য তেল খরচ বাবদ অগ্রিম ৭৫ শতাংশ টাকা দিতে বলা হয়েছে।

সংগঠন সূত্রের দাবি, হুগলিতে সব মিলিয়ে বকেয়ার অঙ্ক প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। জেলায় পাম্প তিনশোর কাছাকাছি। তার মধ্যে লোকসভা নির্বাচনে বাস বা গাড়িতে পেট্রল-ডিজ়েল নেওয়ার কথা বলা হয়েছে ৪০-৫০টি পাম্পে। কতটা করে তেল নেওয়া হবে, তা-ও জানানো হয়েছে।

ডিলারদের সংগঠনটির জেলা শাখার জ়োনাল সম্পাদক অর্ণব রায়ের অভিযোগ, ‘‘বকেয়া অর্থ এবং লোকসভা ভোটের জন্য ৭৫ শতাংশ অগ্রিম না দেওয়ায় আমাদের তরফে তেল না দেওয়ার কথা বলা হলেও জোরাজুরি করা হচ্ছে। অনেকে তেল দিতে বাধ্যও হচ্ছে।’’ একাধিক ডিলার জানান, বিভিন্ন নির্বাচনেই সরকারি স্তরে ব্লক দফতর, পুলিশ ইত্যাদি দফতরের তরফে ধারবাকিতে তেল নেওয়া হয়। সেই টাকা মেটাতে দেরি করা সরকারের কার্যত নিয়মে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থায় তাঁদের ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে।

আরামবাগের একটি পেট্রল পাম্পের তরফে প্রশান্ত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে আমাদের ১৪ লক্ষ টাকা বাকি। লোকসভা ভোটের জন্য ১৭ হাজার লিটার তেলের কথা বলা হয়েছে।’’ পান্ডুয়ার একটি পাম্পের ম্যানেজার সুব্রত ঘোষের বক্তব্য, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্লক এবং থানা মিলিয়ে পাওনা ১১ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা। লোকসভা নির্বাচনে ফের তেলের জন্য বলা হয়েছে। কী ভাবে দেব! সমস্যার কথা সংগঠনকে জানিয়েছি।’’ কামারপুকুরের একটি পাম্পের ম্যানেজার সিরাজুল আলম চৌধুরী জানান, বিধানসভা ভোটের টাকা মিটেছে। পঞ্চায়েত ভোটে তেল নেওয়া হয়েছিল ১৪ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকার। এখনও ১১ লক্ষ টাকার বেশি পাওনা। খানাকুলের একটি পাম্পের ২২ লক্ষ টাকার বেশি পাওনা বলে ডিলারের দাবি।

জেলার একাধিক ব্লক এবং থানা সূত্রের বক্তব্য, অনেক পাম্পই তেল দিতে চাইছে না। ‘সরকারি টাকা চলে আসবে’ বলে বুঝিয়ে তেল
নেওয়া হচ্ছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 Petrol Pump Arambagh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy