E-Paper

রাজনীতির সংস্রব এড়িয়ে চলবে স্কুল, আশ্বাস দেবে কি কোনও দল?

ভোট আসে, ভোট যায়। কিন্তু শিক্ষাঙ্গনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চলতে থাকে বহাল তবিয়তেই। এই ভোটে কি ছবিটা বদলাবে?

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৪ ০৭:৪৬
Representative Image

—প্রতীকী ছবি।

স্কুলের পরিচালন সমিতিতে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের আধিপত্য কায়েম করার অভিযোগ নতুন নয়। আরও অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের লক্ষ্য পঠনপাঠনের উন্নয়ন নয়, বরং স্কুল পরিচালনার রাশ নিজেদের হাতে রাখা। আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে এই প্রবণতা আদৌ ভাঙা যাবে কি না, সেই প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, পরিচালন সমিতিতে যে প্রতিনিধিদের মনোনীত করা হয়, তাঁরা একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বিশেষত শাসকদলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এবং লেখাপড়ার সঙ্গে যাঁদের সম্পর্ক প্রায় নেই বললেই চলে। শিক্ষকদের অভিযোগ, পানীয় জল থেকে শুরু করে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন— নির্বাচনী ইস্তাহার এবং প্রচারে নানা রকম প্রতিশ্রুতি দেয় রাজনৈতিক দলগুলি। কিন্তু স্কুলের উন্নতিসাধন কী ভাবে সম্ভব, তা নিয়ে একটা শব্দও খরচ করে না তারা। তাঁদের প্রশ্ন, স্কুলের পরিচালন সমিতিতে রাজনীতির অনুপ্রবেশ রোখা হবে, এই প্রতিশ্রুতি কি এ বার কোনও দল দেবে?

শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, বর্তমানে স্কুলের পরিচালন সমিতির যে গঠন, তাতে সভাপতিকে মনোনীত করে স্কুলশিক্ষা দফতর। পাশাপাশি, পরিচালন সমিতিতে থাকেন দু’জন শিক্ষানুরাগী, যাঁদের মনোনীত করেন বিদ্যালয় শিক্ষা অধিকরণ। আবার বিদ্যালয় পরিদর্শক নির্বাচন করেন এক জন সরকারি প্রতিনিধি। এ ছাড়া, জেলা বা ব্লক পর্যায়ের চিফ মেডিক্যাল অফিসারের এক জন প্রতিনিধি থাকেন। সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদাধিকারবলে পরিচালন সমিতির সম্পাদক। এ ছাড়াও তিন জন শিক্ষক-প্রতিনিধি এবং এক জন শিক্ষাকর্মী ওই সমিতিতে নির্বাচিত হন। অভিভাবকদের তরফে তিন জন প্রতিনিধিও থাকেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন শিক্ষক জানাচ্ছেন, বাস্তবে দেখা যায়, শাসকদলের সাংসদ অথবা বিধায়ক কিংবা জেলা সভাপতি তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে পরিচালন সমিতির সভাপতি মনোনীত করছেন। একই ভাবে, যে দু’জন শিক্ষানুরাগী সমিতিতে থাকছেন, তাঁরাও অনেক সময়েই বিধায়ক বা সাংসদের ঘনিষ্ঠ বলে দেখা যাচ্ছে।

নিয়মানুযায়ী, পরিচালন সমিতির সভাপতি ও শিক্ষানুরাগী দুই সদস্যকে ন্যূনতম স্নাতক হতেই হবে। অভিযোগ, এই নিয়ম সব ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। শিক্ষকদের একাংশ বলছেন, পরিচালন সমিতিতে থাকা এমন রাজনৈতিক নেতারা স্কুলের দৈনন্দিন কাজে হস্তক্ষেপ করার ফলে দেখা দিচ্ছে প্রশাসনিক জটিলতা।

উত্তর কলকাতার একটি স্কুলের এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কে সভাপতিত্ব করবেন, সেই বিষয়টি থেকে শুরু করে যে কোনও অনুষ্ঠানে পরিচালন সমিতির সভাপতি এবং শিক্ষানুরাগীদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। সমিতিতে দুই শিক্ষানুরাগী সদস্যের মধ্যে এক জন সাধারণত হন এলাকার পুরপ্রতিনিধি। তিনি স্কুলের দৈনন্দিন নানা বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে শুরু করেন। বিশেষত, পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে কোন খাতে কত টাকা খরচ হবে, কাদের দিয়ে সেই কাজ করানো হবে— এমন নানা সিদ্ধান্ত অধিকাংশ সময়ে নিয়ে থাকেন পরিচালন সমিতির সভাপতি ও শিক্ষানুরাগীরাই।’’

প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতির অভিযোগ, ‘‘পরিচালন সমিতির সভাপতি কে হবেন, শিক্ষানুরাগী হিসাবে কোন দু’জন থাকবেন, তা বিধায়ক বা সাংসদ তাঁর লেটারহেডে লিখে স্কুলশিক্ষা দফতরে পাঠিয়ে দেন। ফলে, তাঁরা সকলে সেই বিধায়ক বা সাংসদের ঘনিষ্ঠ। তাঁরা স্নাতক কি না, সেটা দেখা হয়ই না। শিক্ষা দফতর থেকে পাঠানো নাম চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা প্রধান শিক্ষকদের নেই।’’

সংগঠনের একাংশের আরও অভিযোগ, ওই সদস্যেরা যে ভাবে পাড়ার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, সে ভাবেই স্কুলের পরিচালন সমিতিতে প্রভাব খাটিয়ে নানা সিদ্ধান্ত নেন। তাদের কথায়, ‘‘স্কুল চালানো সম্পর্কে ওই সদস্যদের না হয় কোনও প্রশিক্ষণ, না তাঁরা জানেন কোনও আইন। আর পরিচালন সমিতির সদস্যেরা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন না। তাঁরা মনো‌নীত হন। ফলে, বছরের পর বছর একটি কমিটিই থেকে যায়।’’

‘কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, ‘‘অনেক রাজ্যে স্কুলের সহ-প্রধান শিক্ষক পদাধিকারবলে পরিচালন সমিতির সদস্য।তাঁকে কেন যুগ্ম সম্পাদক হিসাবে রাখা হবে না? তা হলে তোপরিচালন সমিতিতে এক জন প্রকৃত শিক্ষানুরাগীর সংখ্যা বাড়ত।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 Education school

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy