E-Paper

পলাশনে ভোট কি ধরে রাখতে পারবে বাম, চর্চা

লোকসভা ভোটেও যাতে এই পঞ্চায়েত থেকে দলীয় প্রার্থী ‘লিড’ পান, তা নিশ্চিত করতে ঝাঁপিয়েছেন সিপিএম কর্মীরা। লোকসভা ভোটে বামেরা ভাল ফল করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে চর্চা রয়েছে এলাকায়।

সুপ্রকাশ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:০৫

—প্রতীকী চিত্র।

পঞ্চায়েত ভোটে জেলায় সিপিএমের ‘মুখরক্ষা’ করেছিল রায়নার পলাশন পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েতের ১৮টি আসনের মধ্যে ১০টিতে জিতে বোর্ড গঠন করে সিপিএম। লোকসভা ভোটেও যাতে এই পঞ্চায়েত থেকে দলীয় প্রার্থী ‘লিড’ পান, তা নিশ্চিত করতে ঝাঁপিয়েছেন সিপিএম কর্মীরা। লোকসভা ভোটে বামেরা ভাল ফল করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে চর্চা রয়েছে এলাকায়। ‘দ্বন্দ্ব’ কাটিয়ে উঠতে পারলে সিপিএমের আশায় তৃণমূল জল ঢালতে পারে বলেও গুঞ্জন রয়েছে।

পঞ্চায়েত প্রধান, সিপিএমের মনিকা কোনারের দাবি, “তৃণমূলের দখলে থাকাকালীন পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা খরচের মাপকাঠিতে এই পঞ্চায়েত একদম শেষে ছিল। খরচ ছিল শূন্য শতাংশ। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই উন্নয়নের নিরিখে জেলা থেকে সম্মানিত হয়েছি। মানুষ এক বছরের মধ্যেই পঞ্চায়েত এলাকায় পরিবর্তন দেখতে পেয়েছেন। তার প্রভাব লোকসভা ভোটে পাওয়া যাবে।”

এক সময় রায়না ছিল সিপিএমের দুর্গ। ২০১১ বিধানসভা ভোটেও রায়নায় সিপিএমের পতাকা উড়েছিল। সে বছর ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জিতেছিলেন সিপিএম প্রার্থী। ২০১৩ পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে সিপিএমের মাটি আলগা হতে থাকে। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী জেতেন রায়না থেকে। ২০১৮ পঞ্চায়েত ভোটে পলাশন বিরোধী-শূন্য হয়। ২০২১-এ শম্পা ধাড়া রায়নার বিধায়ক হওয়ার পরে, পলাশন পঞ্চায়েতে তৃণমূলের ‘দ্বন্দ্ব’ চরমে ওঠে। রায়না ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বামদেব মণ্ডল ও শম্পার অনুগামীদের মধ্যে গোলমালের জেরে পঞ্চায়েত এলাকায় নাগরিক পরিষেবা কার্যত শিকেয় ওঠে। পঞ্চায়েতের কর্তারা টানা কয়েক বছর কার্যালয়ে যাননি। প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আসে। দলীয় হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি ঠিক হলেও, কেন্দ্র ও রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা খরচ করতে পারেনি তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত।

গত পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও সামনে এসেছিল তৃণমূলের ‘দ্বন্দ্ব’। তার প্রভাব পড়ে ভোটের ফলে। সিপিএম ৪৬.৬৯ শতাংশ ভোট পেয়ে পঞ্চায়েত দখল করে। তৃণমূলের ব্লক সভাপতির অনুগামীদের দাবি, পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএমকে জেতানোর জন্য একটি গোষ্ঠী ‘সাহায্য’ করেছিল। এক নেতার কথায়, “আমরা কয়েকটি আসনে ফলাফল দেখিয়ে দলের কাছে চিঠি দিয়েছিলাম। যে বুথে আমাদের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন, সেই বুথে আমরা হেরেছি। অথচ ওই বুথে অন্য গোষ্ঠীর মনোনীত পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী জিতেছিলেন।” ব্লক সভাপতি অবশ্য এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।

অন্য দিকে, বিধায়কের অনুগামীদের দাবি, পঞ্চায়েত ভোটে গোটা রায়না ১ ব্লকে তাঁদেরকে ‘কোণঠাসা’ করে রাখা হয়েছিল। প্রার্থিপদ দেওয়া তো দূরের কথা, প্রচার করতেও বাধা দেওয়া হয়েছে। পলাশন পঞ্চায়েতে শেষ কয়েক বছর কাজ করতেই দেওয়া হয়নি। ‘কোন্দল’ নিয়ে মন্তব্য এড়িয়ে বিধায়ক বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানবিক। তাই দলীয় সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে রাজ্য সরকার পলাশন পঞ্চায়েতে রাস্তা নির্মাণ-সহ উন্নয়নের নানা কাজে সাহায্য করছে।”

সিপিএমের দাবি, তারা ক্ষমতায় আসার পরেই উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তার সুফল স্থানীয়েরা পাচ্ছেন। সিপিএমের রায়নার (১) এরিয়া কমিটির সদস্য জিকরিয়া চৌধুরী বলেন, “তৃণমূলের দুর্নীতি সবাই জানেন। আমরা পলাশন পঞ্চায়েতে ভোট বাড়ানোর জন্য উন্নয়নকে প্রচারে হাতিয়ার করেছি। মানুষ এক বছরের মধ্যে দুই দলের পার্থক্য দেখতে পাচ্ছেন। জেলা প্রশাসনও আমাদের পঞ্চায়েতের কাজকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে আমরা পঞ্চায়েত দখল করেছি, এই প্রচার ঠিক নয়।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 CPM Bardhaman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy