এ বার লোকসভা ভোটের প্রচারে দেব এবং হিরণ। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।
এ যে নব কলেবর! এমনটাই মনে করছেন তাঁদের গুণমুগ্ধরা।
প্রথমে অভিনয়, তারপর রাজনীতি। দু’জনের চলার পথটা খানিকটা একই। একটা সময় তাঁরা ছিলেন একই রাজনৈতিক দলে। কিন্তু তাঁরাই আজ ভোট ময়দানে যুযুধান। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল লোকসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারী তথা দেব এবং পদ্মপ্রার্থী হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায় তথা হিরণ।
সিনেমার জগতে দেব ও হিরণ দু’জনেরই একটা স্বতন্ত্র ভাবমূর্তি ছিল। দেব অ্যাংরি ইয়ং-ম্যান, এক্কেবারে ‘চ্যালেঞ্জ নিবি না...’ গোছের। আর হিরণ ‘লাভার বয়’। কিন্তু রাজনীতির অঙ্গনে তাঁদের যেন জায়গা বদল হয়েছে! পর্দার ‘রংবাজ’ দেব এখন বঙ্গ রাজনীতিতে সৌজন্যের মুখ। নরম, বিনয়ী এই বিদায়ী সাংসদ কঠিন, তির্যক আক্রমণের উত্তরও দেন মুচকি হেসে। অন্য দিকে, ‘ভালবাসা ভালবাসা’ সিনেমার নায়ক ‘লাভার বয়’ হিরণ রাজনীতির ময়দানে অনেকটাই আগ্রাসী। দুর্নীতি থেকে সন্ত্রাস, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁর স্বর সর্বদা চড়া।
সল্টলেক সেক্টর ফাইভে এক বেসরকারি সংস্থার কর্মী অনিরুদ্ধ রায় কলেজ-জীবনে ছিলেন আপাদমস্তক দেব-ভক্ত। তাঁর কথায়, ‘‘একটা সময় কলেজ পালিয়ে দেবের সিনেমা দেখেছি। পর্দায় তিনি যতটা অ্যাগ্রেসিভ, রাজনীতিতে কিন্তু ততটাই মার্জিত।’’ একই মত পেশায় অধ্যাপক সোনালি অধিকারীরও। তাঁর কথায়, ‘‘দেবের অনেক সিনেমাই দেখেছি। এক সময় ওঁর মধ্যে একটা অ্যাংরি ব্যাপার ছিল। রাজনীতিতে আসার পরে পুরো ইমেজটা বদলে গিয়েছে।’’ পর্দার হিরণের সঙ্গে রাজনীতির পদ্মপ্রার্থীকে মেলাতে পারছেন না কর্মসূত্রে বেঙ্গালুরু নিবাসী পেশায় কর্পোরেট আইনজীবী রোশনি হাজরা। তিনি বলেন, ‘‘হিরণের নেক্সট-ডোর বয় ইমেজটা ভালই লাগত। তবে এখন সংবাদমাধ্যমে ওঁর কথা শুনে বেশ পরিণত রাজনীতিক মনে হয়।’’ একই সুরে রাজ্য সরকারের একটি দফতরের কর্মী প্রীতম সাহা বলেন, ‘‘পর্দার হিরণের সঙ্গে লোকসভা ভোটের প্রার্থী হিরণের কোনও মিল পাই না।’’
এতো ভক্তদের পর্যবেক্ষণ। দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর নিজেদের উপলব্ধিও কি তাই?
হিরণ বলেন, ‘‘আমি রোমান্টিক হিরো হিসেবে যেমন কাজ করেছি। তেমনই মেহের আলি বা মাচো মস্তানা, নবাব নন্দিনীর মতো ছবিও করেছি। কমেডি, ট্র্যাজেডি, অ্যাকশন, রোমান্টিক— চার ঘরানার ছবিই রয়েছে আমার ঝুলিতে। হিরণ মানেই রোমান্টিক হিরো, এটা ঠিক নয়।’’ আর রাজনীতিতে এত আক্রমণাত্মক কেন? তাঁর উত্তর, ‘‘গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে যখন শুনি মানুষ বলছেন, ‘তৃণমূল আমাদের ভোট দিতে দেয় না’, তখন ভেবে চিন্তে নয়, অ্যাগ্রেসিভ হয়ে যাই।’’
আর ‘ইমেজ’ বদল প্রসঙ্গে দেব বলেন, ‘‘সিনেমায় যেগুলো করেছি, সেগুলো চরিত্র। কোথাও অ্যাকশন করেছি, কোথাও নাচ। কিন্তু তার বাইরে আমিও তো একটা মানুষ। আর যে কাজটা ভাল ভাবে বলে বা ভালবেসে করা সম্ভব— সেটার জন্য রাগ করব কেন?’’ আর আপনার সৌজন্যবোধ? দেবের জবাব, ‘‘আমি ব্যক্তি জীবনেও এ রকমই। রাজনীতিতে সে ভাবে সৌজন্য দেখা যায় না বলে, সেটা কেউ আমদানি করতে পারবে না, এমনটাও তো নয়। আজ রাজনৈতিক বক্তৃতায় যে কথাগুলো শোনা যায়, তার ভাষা বাচ্চা কিংবা বড়দের সামনে শোনা যায় না। কিন্তু আমার বক্তৃতা যে কোনও বয়সের মানুষ একসঙ্গে বসে শুনতে পারেন।’’
হিরণ অবশ্য দেবের সৌজন্যবোধ নিয়েও আক্রমণাত্মক। বলছেন, ‘‘গরু পাচারের টাকা, কাটমানি, চাকরির বিনিময়ে টাকা নিয়ে নীরব থাকবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক! নীরবতা আর সৌজন্য ছাড়া আর কোনও অপশনও তো নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy