Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha Election 2024

নির্বাচন কমিশনার অরুণ গয়ালের অবসরের কারণ নিয়ে কাটেনি রহস্য, উঠছে নানা প্রশ্ন, তদন্তের দাবিও

বিরোধীদের সুরে গয়ালের অবসরের কারণ জানতে চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখে তদন্তের দাবি জানান প্রাক্তন আমলা ইএএস শর্মা। তিনি জানতে চেয়েছেন, নেতৃত্বের সঙ্গে মতানৈক্যর কারণেই কি পদ ছাড়লেন গয়াল?

অরুণ গয়াল।

অরুণ গয়াল। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৪ ০৮:৫০
Share: Save:

ইস্তফা দেওয়ার পরে চব্বিশ ঘণ্টা কেটে গেলেও নির্বাচন কমিশনার অরুণ গয়ালের হঠাৎ অবসরের কারণ নিয়ে রহস্য কাটেনি। ঠিক লোকসভা নির্বাচনের মুখে কেন এ ভাবে অরুণ গয়াল ইস্তফা দিলেন, তা নিয়ে বিরোধীরা যেমন প্রশ্ন তুলেছেন, তেমনই এই ইস্তফার কারণ তদন্ত করে দেখার জন্য রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি লিখে অনুরোধ জানিয়েছেন ভারত সরকারের প্রাক্তন সচিব ইএএস শর্মা।

গত কাল গয়ালের ইস্তফার পরেই জল্পনা তৈরি হয় যে, আসন্ন নির্বাচনে বিজেপির হয়ে প্রার্থী হতে পারেন তিনি। অবশ্য তৃণমূলের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে আধা সেনা মোতায়েন সংক্রান্ত নীতি নিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণেই গয়াল গত কাল ইস্তফা দেন। যদিও সেই যুক্তি মানতে নারাজ অন্য বিরোধী দলগুলি। নিজের ভবিষ্যতের প্রশ্নে অত্যন্ত মেপে পা ফেলা মোদীর আস্থাভাজন এই আমলা কেবল পশ্চিমবঙ্গের কথা ভেবে নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন, এমন যুক্তি মানতে নারাজ কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘এ সব আমলারা নিজেদের কেরিয়ারের আগামী দু’-তিন ধাপ পরিকল্পনা করে রাখেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ ঘনিষ্ঠ ওই আমলা আবেগের বশে কোনও কাজ করবেন, তা মেনে নেওয়া যথেষ্ঠ কঠিন। বিশেষ করে যেখানে গয়ালের ২০২৭-এ অবসর ছিল। আগামী ফেব্রুয়ারিতে তিনিই হতেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার।’’

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

গয়ালের ইস্তফার ফলে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার কার্যত একা হয়ে গেছেন। যার ফলে ভোট ঘোষণার আগের চূড়ান্ত প্রস্তুতির কাজে ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে গয়ালের দু’দিন বাদেই জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি দেখতে উপত্যকায় যাওয়ার কথা ছিল। সূত্রের মতে, গয়ালের ইস্তফায় কমিশনকে এখন নতুন করে দল গড়ে দায়িত্ব বণ্টন করতে হবে। অনেকেই মনে করছেন, গয়ালের এ ভাবে অবসরের ফলে লোকসভার ভোট ঘোষণার বিষয়টি প্রভাবিত হতে পারে। এমনকি দিনক্ষণের ঘোষণা পিছিয়েও
যেতে পারে।

বিরোধীদের একাংশের মতে, লোকসভা নির্বাচনে পঞ্জাব বা হরিয়ানা থেকে বিজেপির টিকিটে লড়তে পারেন পঞ্জাব ক্যাডারের এই আমলা। সে কারণেই বিজেপির দ্বিতীয় দফা প্রার্থী ঘোষণার আগেই তড়িঘড়ি ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। সেখানেও প্রশ্ন রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ কর্তাকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ানো হলে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে দলে নিয়ে বিতর্কে জড়ানোর ঝুঁকি বিজেপি নেবে কি না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। আজ কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘গয়ালের ইস্তফা বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। প্রথমত-গয়াল কি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বা বকলমে সমস্ত স্বাধীন প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করা মোদী সরকারের সঙ্গে মন কষাকষির জন্য ইস্তফা দিয়েছেন? দ্বিতীয়ত-তিনি কি ব্যক্তিগত কারণে ইস্তফা দিলেন? তৃতীয়ত-সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের এক বিচারপতি স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে বিজেপির টিকিটে লোকসভা নির্বাচন লড়তে চলেছেন। গয়ালও কি সেই পথে হাঁটবেন?’’ তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখলের কথায়, ‘‘গত সপ্তাহে নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের কলকাতা সফরে গয়াল এলেও নিজের যাত্রা ছাঁটকাট করে তিনি দিল্লি ফিরে যান এবং ইস্তফা দেন।’’ সাকেতের প্রশ্ন, ‘‘তাঁর এই হঠাৎ ইস্তফার পিছনে কি কোনও ধরনের চাপ দেওয়া হয়েছিল?’’ যদিও রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, গয়াল আগে ফিরে গেলেও পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের কাছে জবাবদিহি চান। ধমকও দেন তাঁদের।

বিরোধীদের সুরেই গয়ালের অকাল অবসরের কারণ জানতে চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন প্রাক্তন আমলা ইএএস শর্মা। তিনি জানতে চেয়েছেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে মতানৈক্যর কারণেই কি পদ ছাড়লেন গয়াল? বিশেষ করে ইলেক্টোরাল বন্ড বিতর্কে যে ভাবে এসবিআইয়ের উপরে রাজনৈতিক চাপ পড়েছে, তা নিয়ে কি গয়াল কোনও প্রশ্ন তুলেছিলেন? শর্মার প্রশ্ন, ‘‘বন্ড থেকে প্রাপ্ত অবশিষ্ট টাকা যাতে নির্বাচনে ব্যবহার না হয়, তা নিয়ে কি কোনও প্রস্তাব দিয়েছিলেন গয়াল?’’ শর্মা জানতে চান, ইভিএম নিয়ে কোনও ধরনের সংশয় কি প্রকাশ করেছিলেন গয়াল? নাকি নির্বাচনে কোনও কুকৌশল খাটাতে বিজেপির যাতে সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতেই শাসক শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে সরে যেতে হল গয়ালকে? শর্মার প্রশ্ন, গয়ালের কোনও পরামর্শ বা প্রস্তাব কি শাসক দলের অস্বাচ্ছন্দ্যের কারণ হয়েছিল? যে কারণে গয়ালকে সরে যেতে বাধ্য করা হল? এ সবই তদন্ত করে দেখার অনুরোধ করেছেন তিনি।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে গয়ালের ইস্তফার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার কিছুক্ষণ আগে কাল দুপুরেই তৃতীয় নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ প্রশ্নে আগামী ১৫ মার্চ বৈঠক ডাকে মোদী সরকার। যে হেতু ওই নির্দেশিকা জারির পরে গয়ালের ইস্তফার বিষয়টি সামনে আসে, তাই অনেকেই মনে করছেন, সরকার আগামী বৈঠকে এক সঙ্গে দু’জন নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ সেরে ফেলতে পারে এবং প্রয়োজনে ওই নিয়োগ সংক্রান্তটি বৈঠকটি একদিন এগিয়েও
আনতে পারে। যাতে ১৫ মার্চের মধ্যে ভোট ঘোষণা সম্ভব হয়। যদিও সরকারের আরেকটি অংশের মতে, গতকাল সকালেই গয়াল ইস্তফা দিয়েছিলেন। ফলে গয়ালের ইস্তফার বিষয়টি জেনেই এক জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বিষয়ে বৈঠকের নির্দেশিকা জারি করে সরকার। সে ক্ষেত্রে ওই নিয়োগ হয়ে গেলেই একজন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও একজন কমিশনারের নেতৃত্বে ভোট ঘোষণা করে দেওয়ার কথা
ভাবছে সরকার।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE