Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha Election 2024

প্রধানমন্ত্রীর সেঙ্গল-রাজনীতিতে আদপেই মন মজেনি জনতার

তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে ব্রাত্যজন বিজেপি কি সেঙ্গল দিয়ে ভোটারদের সম্মোহিত করবে? গোটা চেন্নাইয়ে এমন আশ্বাস কেউ দিলেন না।

PM Narendra Modi.

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

প্রেমাংশু চৌধুরী
চেন্নাই শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০১
Share: Save:

প্রথম বহুতল বাড়িতে শুধু সোনার গয়নার সম্ভার। দ্বিতীয় বহুতলে রুপোর বাসনকোসন ও গয়না। তৃতীয় বহুতলে অলঙ্কার সংস্থার কর্পোরেট অফিস।

চেন্নাই শহরের ঠিক মাঝখানে আন্নাসলাইতে জেমিনি উড়ালপুলের পাশে অলঙ্কার-বিপণি ভুম্মিডি বঙ্গারু জুয়েলার্স। নজর না পড়ে উপায় নেই। না, শুধুই অট্টালিকাসম চোখ ধাঁধানো গয়নার বিপণি বলে নয়। গয়নার দোকানের মূল দরজার ঠিক দু’পাশে চোখ টানবে সেঙ্গল-এর অনুকৃতি। সোনালি রাজদণ্ডের মাথায় নন্দীর মূর্তি।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

কাঁচের দরজা ঠেলে ঢুকে পড়া যাক গয়নার দোকানে। চারপাশে অলঙ্কারের দিকে নজর যাওয়ার আগেই চোখ ঝলসে দেবে সামনে কাঁচের বাক্সে রাখা পাঁচ ফুট দীর্ঘ সেঙ্গল। সোনায় বাঁধানো রুপোর তৈরি রাজদণ্ড। দিল্লিতে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লোকসভায় স্পিকারের আসনের পাশে এই সেঙ্গল-ই প্রতিষ্ঠা করেছেন। তারই অবিকল প্রতিরূপ। কাচের বাক্সের সামনে রাখা সেঙ্গল হাতে নরেন্দ্র মোদীর ছবি। এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিপণির মালিক, ভুম্মিডি পরিবারের সদস্যদের ছবি। বিপণির ম্যানেজার সুরেশ এন গর্বের সঙ্গে সেঙ্গলের গায়ে সূক্ষ্ম কারুকার্য দেখাবেন। তাঁর কাছ থেকে শোনা যাবে, আজকের দিনে এমন সেঙ্গল তৈরির খরচ অন্তত ৭৫ লক্ষ টাকা। সময় লাগবে ১৫ থেকে ২০ দিন।

এখানে সেঙ্গল কেন? কারণ, এই ভুম্মিডি পরিবারের আদি গয়নার দোকান ভুম্মিডি বঙ্গারু চেট্টি অ্যান্ড সন্স-এই ১৯৪৭ সালে সেঙ্গল তৈরি হয়েছিল। সেঙ্গল তৈরির বরাত দিয়েছিল তামিলনাড়ুর থিরুভবদুথুরাই অধীনম শৈব মঠ। তারপরে সেই সেঙ্গল প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন মঠের সাধুরা। গত বছর মে মাসে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের সময় আচমকাই মোদী সরকার দাবি করে, এই সেঙ্গল ছিল ব্রিটিশদের থেকে ভারতের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক। কারণ, প্রথমে তা লর্ড মাউন্টব্যাটেনের হাতে দিয়ে তারপরে তা নেহরুর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। সেই সেঙ্গল লোকসভায় প্রতিষ্ঠা করে জাতীয় রাজনীতির ইতিহাসের সঙ্গে তামিল ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে জুড়ে দিতে চেয়েছিলেন মোদী। দক্ষিণ ভারতের মন জয়ে মোদী বার্তা দিতে চেয়েছিলেন, তামিলদের গর্বের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে বিজেপি সম্মান করে।

তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে ব্রাত্যজন বিজেপি কি সেঙ্গল দিয়ে ভোটারদের সম্মোহিত করবে?
গোটা চেন্নাইয়ে এমন আশ্বাস কেউ দিলেন না। ভুম্মিডিদের দোকানে গয়না কিনতে আসা তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী এস সত্যবামা থেকে কলেজ অধ্যাপক জে কৃষ্ণমূর্তি এক সুরে বলেন, সেঙ্গল দেখে তামিলনাড়ুর মানুষ ভোট দেয় না। সত্যবামার স্পষ্ট কথা, “লোকসভায় সেঙ্গল প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে আমরা বিজেপিকে লোকসভা নির্বাচনে ভোট দেব, এত বোকা কেউ নয়।” কৃষ্ণমূর্তি আরও এক ধাপ এগিয়ে বলছেন, “সেঙ্গল নেহরুর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু সেটা ব্রিটিশদের থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক ছিল কি না, সেই ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।”

তামিলনাড়ুর শাসক দল ডিএমকে-র সাংগঠনিক সম্পাদক টি কে এস এলানগোভান একই কথা বলছেন। তাঁর যুক্তি, “নরেন্দ্র মোদী গত পাঁচ বছর ধরে মহাবলীপুরম থেকে সেঙ্গল, সৌরাষ্ট্র তামিল সঙ্গমম থেকে কাশী তামিল সঙ্গমমের আয়োজন করেছেন। আসলে তিনি বিজেপির কল্পিত হিন্দু রাষ্ট্রের সঙ্গে তামিলনাড়ুর যোগসূত্র তৈরি করতে চাইছেন।” বিজেপির রাজ্য সভাপতি কে আন্নামালাই তামিলনাড়ু জুড়ে প্রচারে বলছেন, নরেন্দ্র মোদী নতুন সংসদে শৈব মঠের সাধুদের আশীর্বাদ নিয়ে সেঙ্গল স্থাপন করে তামিল ঐতিহ্যকে তুলে ধরেছেন। এলানগোভান এ যুক্তি উড়িয়ে বলছেন, “তামিলনাড়ুতে এ সব প্রতীকী রাজনীতি চলে না।”

বিজেপির ভোটের প্রচারে সেঙ্গলের জাদু চলুক না চলুক, ভুম্মিডিরা তাঁদের অলঙ্কারের বিপণির প্রচারে সেঙ্গলকে পুরোপুরি ব্যবহার করছেন। ১৯৪৭ সালে যখন সেঙ্গল তৈরির বরাত মিলেছিল, তখন চেন্নাইয়ের প্যারিস কর্নারে ভুম্মিডি বঙ্গারু চেট্টি ছেলেপুলেদের নিয়ে একটিমাত্র দোকান। এখন ব্যবসা পারিবারিক শাখাপ্রশাখায় ছড়িয়ে পড়েছে। কারও সংস্থার নাম ভুম্মিডি বঙ্গারু, কারও ভুম্মিডি দ্বারকানাথ, কারও নাম ভুম্মিডি বঙ্গারু কান্ননন, কারও সংস্থার নাম ভুম্মিডি এথিরাজালু জুয়েলার্স। সব সংস্থার প্রচারের এখন প্রধান হাতিয়ার হল, তাঁরা সেঙ্গল-নির্মাতা স্বর্ণকারের উত্তরপুরুষ। তাই সকলের বিপণির সামনে বা ভিতরে সেঙ্গলের অনুকৃতি বা ছবির দেখা মিলবে। বঙ্গারু চেট্টির ছেলে ৯৭ বছরের এথিরাজ ভুম্মিডি এখনও জীবিত। লোকসভায় সেঙ্গল স্থাপনের পরে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে হুইলচেয়ারে বন্দি এথিরাজ গোটা পরিবারকে নিয়ে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ঘুরে এসেছেন। মোদীর সঙ্গে সেই ছবিই এখন বিপণিতে সাজানো।

ভুম্মিডি বঙ্গারু জুয়েলার্সের ম্যানেজার সুরেশ বলেন, “আমরা গর্বের সঙ্গে সেঙ্গলের কথা বলি। আমাদের গ্রাহকরাও সেঙ্গল-নির্মাতাদের থেকে গয়না কিনে গর্ববোধ করেন।” তামিলনাড়ুতে নরেন্দ্র মোদীর ভোটপ্রচারে সেঙ্গল কাজে দিক না বা দিক, ভুম্মিডিদের গয়নার প্রচারে এখন সেঙ্গল-ই সেরা হাতিয়ার।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE