বড়জোড়ার সাহারজোড়া পঞ্চায়েতের বেলেশোলা গ্রামে সুজাতার প্রচার। —নিজস্ব চিত্র।
জল কবে পাব?— আদিবাসী পাড়ায় প্রচারে গিয়ে স্থানীয় মহিলাদের কাছে এমনই প্রশ্নের মুখে পড়লেন বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল। বুধবার বড়জোড়ার সাহারজোড়ার বেলেশোলা আদিবাসী পাড়ার এই ঘটনায় অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে সুজাতার জবাব, ‘‘আমি আশ্বাস দেওয়ায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। আপনাদের আশীর্বাদে জয়ী হলে সমস্যা মিটিয়ে কাজ করে দেখাব।’’
ওই আদিবাসী পাড়ার মুখে কলসি কিনতে ভিড় করেছিলেন মহিলারা। সেখানে সুজাতার সঙ্গে হাজির হন বড়জোড়ার বিধায়ক অলক মুখোপাধ্যায়, বাঁকুড়া জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ অর্চিতা বিদ, তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়, বড়জোড়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি কালীদাস মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
তৃণমূল পরিচালিত সাহারজোড়া পঞ্চায়েতে তৃণমূল ১০টি, বিজেপি ও সিপিএম ১টি করে আসনে রয়েছে। জঙ্গল ঘেঁষা আদিবাসী পাড়ার মহিলারা তাঁদের হাতির উপদ্রবের কথা জানান। গ্রামের পথে তাঁরা সৌরবাতি দেওয়ার দাবি তোলেন। এরপরেই তাঁরা জলের সমস্যার কথা পাড়েন। মহিলাদের দাবি, গ্রামে নলিবাহিত পানীয় জলের পাইপলাইন বসলেও জল মেলে না। নলকূপই ভরসা। গ্রীষ্মে নলকূপ খারাপ হলে জলকষ্ট শুরু হয়। মহিলাদের প্রশ্ন, ‘‘গ্রামে পাইপলাইন বসলেও জল আসেনি। অথচ ঘরে ঘরে ট্যাপকল বসানো হবে জানানো হয়েছিল।’’ বিধায়ক অলক মহিলাদের আশ্বস্ত করে জলের সমস্যা দ্রুত মেটানো ও পথে সৌরবাতি বসানোর আশ্বাস দেন।
কেন এমন পরিস্থিতি? জেলার জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের এক আধিকারিক জানান, ওই আদিবাসী পাড়াটি অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় হওয়ায় সেখানে জল যাচ্ছে না। সমস্যা মেটাতে কাজ হচ্ছে।
ঘটনা হল, ২০১২ সালে দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে পরিস্রুত পানীয় জল ঘরে ঘরে দেওয়ার প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। কাগজে-কলমে বড়জোড়া সহ জেলার বহু ব্লকেই ঘরে ঘরে জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দাবি করে প্রশাসন। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বও বিভিন্ন সভায় বাঁকুড়ায় জলকষ্ট মেটানোর দাবি করেন। অথচ বাস্তবে বহু গ্রামেই যে এখনও জল পৌঁছয়নি বড়জোড়ার ওই আদিবাসী পাড়াই তার প্রমাণ বলে তুলে ধরছেন বিরোধীরা।
সিপিএমের বড়জোড়া এরিয়া কমিটির সদস্য সুজয় চৌধুরী বলেন, ‘‘২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের প্রয়াত পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বড়জোড়ার সভায় বলেছিলেন, জল খাবেন ভোট দেবেন, জল খাবেন না ভোট দেবেন না। ওই মন্তব্যের আট বছর পরেও গ্রামের মানুষ জল না পাওয়ার দায় তাই তৃণমূলকেই নিতে হবে। পরিকল্পনার অভাবে সর্বত্রই এই ছবি। তৃণমূল নেতাদের লজ্জা থাকলে ভোট চাইতে গ্রামে যেতেন না।’’
বিষ্ণুপুরের বিদায়ী সাংসদ তথা ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁয়ের কটাক্ষ, ‘‘পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ, বিধায়ক ও রাজ্য সরকার সবই তৃণমূলের। তারপরেও বড়জোড়ার ওই আদিবাসী পাড়ার মানুষজন জল পাচ্ছেন না, এটা লজ্জার। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরকে বলব কেন্দ্র ‘জল জীবন জল মিশন ’ প্রকল্পে যে অর্থ বরাদ্দ করছে, চুরি না করে স্বচ্ছ ভাবে কাজ করুন। তাহলেই মানুষগুলিকে আর ভুগতে হবে না।’’
অভিযোগ মানেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। ব্লক সভাপতি কালীদাসের দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে ওই আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দাদের বনজ ভূমির পাট্টা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে যোগ্য মহিলারা লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন।জল ও রাস্তায় বাতি না থাকার সমস্যাও শীঘ্রই মেটার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy