Advertisement
E-Paper

ডেথ অব অ্যান ইডিওলজি

পশ্চিমবঙ্গের দেওয়ালে একটি নতুন প্রতীক দেখতে পাচ্ছেন মানুষ। দেওয়ালে তাকিয়ে চোখ মুছে আবার তাকাতে হবে। এবং বিশ্বাস করতে হবে যে হ্যাঁ আমি ঠিক দেখছি।

সুবোধ সরকার

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৬ ০০:০০

পশ্চিমবঙ্গের দেওয়ালে একটি নতুন প্রতীক দেখতে পাচ্ছেন মানুষ। দেওয়ালে তাকিয়ে চোখ মুছে আবার তাকাতে হবে। এবং বিশ্বাস করতে হবে যে হ্যাঁ আমি ঠিক দেখছি। কংগ্রেসের হাত চিহ্ন, কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার কাস্তের মাঝখানে উঠে দাঁড়িয়েছে। একে কি বলব আত্মহত্যা? হারিকিরি? না একটি আদর্শের মৃত্যু? ভোটে কয়েকটি আসন জেতার জন্য, কেউ কী নিজের মা-কে বিক্রি করে দেয়? আমি এত দিন জানতাম, বউ পাল্টানো যায়, বাবা পাল্টানো যায়, মা পাল্টানো যায় না। মা প্রসব করেন, সেটা কেউ করতে পারে না। স্যারোগেট মাদার গর্ভদান করেন এটা জেনেই যে তিনি মা হয়েও মা নন। আমি জানতাম, যাঁরা কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো পড়ে বামপন্থী হয়েছেন তাঁরা খুন করলেও, মরিচঝাঁপি করলেও, সাঁইবাড়ি করলেও, বিজন সেতু করলেও, নন্দীগ্রাম করলেও তাঁরা কমিউনিজমের ইজমটা ছাড়বেন না। শেষ বস্ত্রটুকু লজ্জার আবরণ হিসেবে মানবজাতির ইতিহাসে চিরকাল ইতিহাস হয়ে থেকে গেছে, সেই বস্ত্রখণ্ডটুকু খসে পড়ল। এইবার সেই ভুবন বিখ্যাত বালক রাজার দিকে তাকিয়ে বলছে, রাজা তোর কাপড় কোথায়?

কিন্তু আঁতকে আঁতকে উঠছে কাল মার্কসের কফিন। তিনি আর কফিনের ভিতর শুয়ে থাকতে পারছেন না। বেরিয়ে আসতে চাইছেন। তিনি কফিনের উপর উঠে দাঁড়িয়ে কানে মোবাইল ধরে ঘন ঘন ফোন করতে লাগলেন বন্ধু ফ্রেডরিক এঙ্গেলসকে। এটা কী হতে চলেছে, ফ্রেডরিক? বিশ্বাস করো কার্ল, আমি এর ভাগীদার নই। কমিউনিজমের অনেকগুলো স্যাম্পেল আমি দেখনাম এ জীবনে, মাও সে তুঙ মডেল, কাস্ত্রো মডেল, চাওসেস্কু মডেল, পলপট মডেল, কিন্তু এরকম সূর্য মডেল আমি জীবনে দেখিনি। এরা তোমার নাম নিয়ে ঘেঁটে ঘ করে দিল গো।

কার্ল মার্কস কফিনের উপর থেকে একটা হুঙ্কার ছাড়লেন। সেটা ইউরোপের উপর দিয়ে প্রবাহিত হল। বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে এবং ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলিতে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিল। কিন্তু কে শোনে কার্ল মার্কসের হুঙ্কার। যখন ‘পাওয়ার’ থাকে তখন হুঙ্কার দিতে হয় না, ইশারাতেই দরজা খোলে। যা বলবে তাই সিলেবাসের থিওরি হয়ে যাবে। যখন পাওয়ার চলে যায় তখন বার বার ধাক্কা দিলেও দরজা খোলে না। কার্ল সার্কস বন্ধুকে বললেন, কী আশ্চর্য ফ্রেডরিক তাকিয়ে দেখ এরা যাদেরকে চোর বলেছিল, বিশেষ করে যাকে ‘চোর’ বলেছিল, তারই বউ আর ছেলের কাছে ভিক্ষা চাইছে? আমি ঠিক দেখছি ফ্রেডরিক? হাজার হাজার ছেলেকে যারা মেরেছিল বাহাত্তরে, বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল, যাদের অত্যাচারে আমার কমিউনিস্টরা পালিয়ে পালিয়ে বেড়াত, সেই ভয়াবহ বাহাত্তরকে এরা ভুলে গেল? এদের শরীরে কি সাপের রক্ত, ব্যাঙের রক্ত, না জিরাফের রক্ত? এ বিষয়ে তুমি কিছু জান ফ্রেডরিক?

একটা জোরালো টান দিয়ে মার্কস বললেন, ফ্রেডরিক, হে আমার প্রিয় বন্ধু, তুমি তো জানোই আমাদের কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো এমন একটা বই যা কি না এখনও অব্দি ‘দ্য সেকেন্ড বুক ইন ইউরোপ’ দ্বিতীয় বই যা কিনা সবচেয়ে বেশি লোকে পড়ে। কিন্তু তাও আমার দুঃখ ঘুচল না। প্রথম বইটার নাম বাইবেল। আমি চেয়েছিলাম চার্চ থাকবে না পৃথিবীতে, মন্দির থাকবে না পৃথিবীতে, মসজিদ থাকবে না পৃথিবীতে, সেটা হল না। রাশিয়াতে আরও বেশি করে চার্চ ফিরে এসেছে। সারা পৃথিবীতে ভগবান নামক ছায়াটাকে নিয়ে মানুষ সবচেয়ে বড় ইন্ডাস্ট্রি খুলেছে। কলকারখানা থেকে গলগল করে ধর্ম বেরিয়ে আসছে। কারা যেন পিজি হোস্টেলে লিখেছিল, ‘গড ইজ ডেড— ইতি নিৎসে’। তার নীচে ইউজি হোস্টেলের ছেলেরা লিখেছিল, ‘নিৎসে ইজ ডেড— ইতি গড’। মেক্সিকো থেকে কুচবিহার পুরো ইতিহাসটাই ভগবানের রিমোট। আমি কন্ট্রোল করতে পারিনি।

কিন্তু যেটা পেরেছিলাম, যে স্বপ্নটা দেখিয়েছিলাম সেই স্বপ্নের গায়ে এরা ইউরিন করে দিল। কাস্তে হাতুড়ি তারা থেকে ওরা তারাটাকে সরিয়ে নিল। ‘তারা’ যদি সরে যায় তবে আলো দেবে কে? কে পথ দেখাবে? ফ্রেডরিক বললেন, ‘‘কার্ল ডোন্ট ওরি মাই ফ্রেন্ড। আমি একটা এসএমএস পাঠাচ্ছি কলকাতার আলিমুদ্দিনে।’’ ফ্রেডরিক লিখলেন, ‘আপনারা কমিউনিস্ট কথাটা তুলে দিন। আমার বন্ধু মার্কসের নামটাও তুলে দিন। তাহলে আমার কোনও আপত্তি নেই।’

এক মিনিটে উত্তর এল, ‘আমরা কেন্দ্রীয় গঠনতান্ত্রিকতা এবং সোশ্যালিস্ট বাস্তবতা মেনেই মানুষের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিই। আপনি কোন হরিদাস পাল ভাই ফ্রেডরিক এঙ্গেলস?’

subodh ghosh assembly election 2016 west bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy