Advertisement
E-Paper

মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে দুলালের

সোমবার সকাল ৯টা। বাড়ি গিয়ে দেখা গেল লুঙ্গি পরে, গায়ে একখানা গামছা জড়িয়ে কলার খেতে কাজ করছেন। হাতে কাস্তে। শুকনো পাতা কেটে ফেলছেন এক এক কোপে। কিছুক্ষণ আগেই পাট খেতে মেশিন চালিয়ে জল দিয়েছেন। গাঁয়ের আর পাঁচটা চাষাভুসো মানুষের মতোই চাষবাস নিয়ে কথা বলতেই বেশি আগ্রহী। দেখলে কে বলবে, ইনিই এ বার ভোটে বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রের জোট প্রার্থী কংগ্রেসের দুলাল বর।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০৩:৫৪
খেতের কাজে ব্যস্ত দুলাল বর। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

খেতের কাজে ব্যস্ত দুলাল বর। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সোমবার সকাল ৯টা। বাড়ি গিয়ে দেখা গেল লুঙ্গি পরে, গায়ে একখানা গামছা জড়িয়ে কলার খেতে কাজ করছেন। হাতে কাস্তে। শুকনো পাতা কেটে ফেলছেন এক এক কোপে। কিছুক্ষণ আগেই পাট খেতে মেশিন চালিয়ে জল দিয়েছেন। গাঁয়ের আর পাঁচটা চাষাভুসো মানুষের মতোই চাষবাস নিয়ে কথা বলতেই বেশি আগ্রহী। দেখলে কে বলবে, ইনিই এ বার ভোটে বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রের জোট প্রার্থী কংগ্রেসের দুলাল বর।

কলা খেতে কাজ শেষ করে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ফুল গাছে জল দিতে। পাশে একটি বেজি ঘোরাঘুরি করেছিল। কপালের ঘাম মুছতে মুছতে হাসি ফুটল মুখে। বললেন, ‘‘বেজি কিন্তু সৌভাগ্যের প্রতীক।’’ আরও জানালেন, আগে একটা বেজি ছিল। সে মারা যাওয়ার পরে দিন চারেক হল আর একটি বেজি পুষেছেন। ভোটের ফলের দিকে তাকিয়ে দিনগোনা প্রার্থীর কাছে এখন যে কোনও ‘সৌভাগ্যের প্রতীক’-এর গুরুত্ব অপরিসীম।

ভোটের দেড় মাস আগে থেকে খাওয়া-ঘুম কার্যত উবে গিয়েছিল। প্রথমে অনুগামীদের নিয়ে কংগ্রেসে যোগদান। তারপর প্রার্থী হওয়া নিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধ। শেষে জোটের প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণা এবং তারপর দিনরাত এক করে প্রচারে গা ঘামিয়েছেন দুলালবাবু। রাতে ঘুমোনোর ঠিকঠিকানা ছিল না। কখনও রাত ২টোও বেজে যেত। এখন অবশ্য রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে শুয়ে পড়ছেন।

কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। রাত ৩টে নাগাদই নাকি রোজ ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। তারপর খালি এ পাশ আর ও পাশ। আর না হলে উঠোনো পায়চারি শুরু। ভোর থাকতে খেতের কাজ নিয়ে মেতে থাকছেন।

ঘুম না আসার কারণ কি ভোটের ফল নিয়ে টেনশন?

নিজেকে ভাঙতে চাইলেন না দীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ দুলাল। বললেন, ‘‘না, তেমন কিছু নয়। আমার তো হারানোর কিছু নেই। কোনও পদে ছিলাম না। শুধু মানুষের কাছে গিয়েছে। তাঁরা নিরাশ করলে করবেন। ও সব নিয়ে ভাবছি না।’’

কিন্তু তা হলে খামোখা ঘুম উবে যাওয়ার কারণ কী? প্রার্থীর উত্তরে কিছু মালুম না হলেও তাঁর সারাদিনের কাজকর্মে বোঝাই যাচ্ছে, ফল নিয়ে ভাবছেন প্রতি মুহূর্তে। আর তাই ভোট শেষ হতেই বুথে বুথে যাচ্ছেন। কর্মীদের কাছ থেকে ‘ফিড ব্যাক’ নিচ্ছেন। কর্মীরা অবশ্য দাদাকে সাহস জোগাচ্ছেন ভরপুর। কিন্তু দাদার কপালে ভাঁজটা মিলোচ্ছে কই! এরই মধ্যে একবার ঢুঁ মেরে এসেছেন কলকাতায় প্রদেশ কংগ্রেস কার্যালয়ে। সেখানে প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী ও দলের নেতা মানস ভুঁইয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন।

আর নিজের এলাকায় সেখানেই যাচ্ছেন, মানুষ ঘিরে ধরছেন প্রশ্ন করছেন, ‘‘দাদা, হাওয়া কেমন বুঝছেন?’’ গিয়েছিলেন মহানন্দপাড়ায় বৌভাতের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে। সেখানে তাঁকে ঘিরে উৎসাহী মানুষজনের একই প্রশ্ন। দুলালবাবু তাঁদের বলছেন, ভোটের ফল তো আপনারাই ভাল বলতে পারবেন। আপনারাই তো ভোট দিয়েছেন।’’


অনেক দিন পরে নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পেয়ে খুশি উপেন বিশ্বাস।

সোমবার বাড়ির উঠোনে নিজের অফিস ঘরে বসে ফোনে এক পরিচিত ব্যক্তিকে বলছিলেন, ‘‘আমি অতো চিন্তা করছি না। হয় এক দেড় হাজার ভোটে হার হবে, না হলে জিতব।’’ মনে হল, আসলে নিজেই নিজের কাউন্সেলিং করছেন।

কথা বলতে বলতে উসখুস করছিলেন। জানালেন, এ বার উঠতে হবে। যাবেন বনগাঁ আদালতে। পুরনো মামলায় হাজিরা দেওয়ার কথা। কোন মামলা? একগাল হেসে বললেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে কী মামলার শেষ আছে!’’ হুস করে বেরিয়ে গেল দুলালবাবুর গাড়ি।

বাগদার তৃণমূল প্রার্থীকে উপেন বিশ্বাসকে ঠিক দুঁদে রাজনীতিবিদ বলা চলে না। চাকরি জীবনে অবসর নেওয়ার পরে প্রথমবার ভোটে দাঁড়িয়েই জিতেছিলেন। এ বারও ভোটের টিকিট পেয়েছিলেন। গত দেড় মাস ধরে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন বাগদায়। ২৫ এপ্রিল ভোট শেষ হওয়ার পরে ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় বাগদা ছেড়ে সল্টকেলের বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন। তবে বাগদার মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন ফোনে। এ বার ভোটে তিনি সরাসরি বুথ কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁদের ফোন নম্বর নিয়েছিলেন। ওই কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন অনবরত। বোঝার চেষ্টা করছেন, কী হতে পারে ভোটের ফলাফল। কর্মীরা ফোন বুথভিত্তিক পরিসংখ্যান দিয়ে জানাচ্ছেন, চিন্তার তেমন কিছু নেই। কেউ কেউ জানাচ্ছেন, কিছু বুথে সামান্য চাপ থাকলেও অন্য বুথের ফলাফলে মেক আপ হয়ে যাবে।

কিন্তু রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের বিদায়ী মন্ত্রী উপেনবাবু এখন ব্যস্ত নিজের দফতরের পড়ে থাকা কাজ শেষ করতে। ফোনে বললেন, ‘‘এখনও তো আমি রাজ্যের মন্ত্রী। ভোটের জন্য দেড় মাস প্রচুর ফাইল জমা পড়ে আছে। পড়ে থাকা কাজ শেষ করছি। দেড় মাস প্রচারের কাজে ব্যস্ত থাকায় ঠিক মতো কাজ করা যায়নি। কিছু ফাইল ওরা বাগদায় আমার কাছে পাঠিয়েছিল। কিন্তু সব ফাইল তো আর পাঠানো যায় না। দফতের কাজ নিখুঁত ভাবে করে যেতে চাইছি।’’

পরিবারের জন্যও সময় দিচ্ছেন বলে জানালেন। উপেনবাবুর ছেলে-মেয়ে বিদেশে থাকেন। তাঁদের সঙ্গে এখন রোজ ফোনে তিনবার করে কথা হচ্ছে। যা এত দিন সে ভাবে হয়ে ওটেনি। নিজের গবেষণার কাজেও সময় দিচ্ছেন ইদানীং। উপেনবাবুর কম্পিউটারে দেড় হাজার ফোল্ডার আছে। যা দেশের গুরুত্ব সব ঘটনার উপরে তৈরি। ভোটের জন্য এত দিন ঠিক মতো খবরের কাগজ ও টিভি দেখার সময়ও পাননি। ওই সময়ে দেশে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ সব ঘটনার ফোল্ডার খুলে ভাল ভাবে স্টাডি করছেন। খবরের কাগজও পড়ছেন খুঁটিয়ে। তারই মধ্যে ভোটের ফল কী হতে পারে, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

টেনশন হচ্ছে না? টেলিফোনের ও পাড় থেকে হাসির আওয়াজ ভেসে এল এক সময়ের দুঁদে সিবিআই অফিসারের কাছ থেকে। শুনে মনে হল, সুরটা আত্মবিশ্বাসেরই।

candidate assembly election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy