Advertisement
E-Paper

ফের হামলা, প্রত্যাঘাত বলছেন শাসক পুরপিতা

বহিরাগত বাইক-বাহিনীর তাণ্ডবের পরে ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। সোমবার রাতে ফের হামলা হল বাঘা যতীনের ফুলবাগানে। যে ঘটনায় ফের অভিযোগের আঙুল স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের দিকেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০২:০৬
ভাঙচুরের পরে সেই দোকান। মঙ্গলবার, বাঘা যতীনে। — নিজস্ব চিত্র

ভাঙচুরের পরে সেই দোকান। মঙ্গলবার, বাঘা যতীনে। — নিজস্ব চিত্র

বহিরাগত বাইক-বাহিনীর তাণ্ডবের পরে ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। সোমবার রাতে ফের হামলা হল বাঘা যতীনের ফুলবাগানে। যে ঘটনায় ফের অভিযোগের আঙুল স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের দিকেই। এ বার আক্রমণের লক্ষ্য এক সিপিএম পরিবারের গৃহবধূ, বাড়ি ও দোকান। মহিলার ‘অপরাধ’, যাদবপুরের সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তীর এজেন্ট হয়ে বুথে বসেছিলেন তাঁর ভাসুর।

স্থানীয় মানুষ যাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন, ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের সেই তৃণমূল কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তের সাফ কথা, ‘‘আমার কর্মীরা মার খেলে তো চুপ করে বসে থাকবে না, তারাও পাল্টা আঘাত করবে। যা হয়েছে, সেটা আঘাতের প্রত্যাঘাত।’’ কিন্তু আঘাতটা কবে কোথায় হয়েছে, তার ব্যাখ্যা অবশ্য তিনি দেননি।

রবিবার পাটুলি থানার পুলিশের বিরুদ্ধে নীরব দর্শক হয়ে থাকার অভিযোগ উঠেছিল। পুলিশ কমিশনার তাঁর বাহিনীকে মেরুদণ্ড সোজা রাখার নির্দেশ দিলেও পাটুলির ওসি-র যে হেলদোল হয়নি, মঙ্গলবার তা নতুন করে বুঝল লালবাজার। রবিবারের তাণ্ডবের ‘কুশীলব’দের ছবি সিসিটিভি ফুটেজে থাকলেও গ্রেফতার দূরে থাক, তাদের শনাক্ত পর্যন্ত করতে পারেনি পুলিশ। হামলায় ১৬ জন অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী এ দিন আলিপুর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান। আদালত সূত্রের খবর, পাটুলি থানার কেস ডায়েরিতে এমন কিছু ছিল না, যাতে জামিন খারিজ হয়। রবিবারের ঘটনায় পাঁচ জন সিপিএম কর্মীর বিরুদ্ধেও পাল্টা এফআইআর করে তৃণমূল। তাঁরা জামিন পাননি।

দু’দিন ধরে পুলিশ যাঁদের পলাতক দেখাচ্ছিল, তাঁরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পাওয়ায় আতঙ্ক বেড়েছে বাঘা যতীনের ফুলবাগান, রবীন্দ্রপল্লিতে। একেই পরপর দু’দিন হামলা, তার উপরে অভিযুক্তদের জামিন— সব মিলিয়ে শান্ত পাড়া এখন থমথমে। রবিবারের পরে সোমবার ফের হামলা কী ভাবে হল, তার ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না স্থানীয় মানুষ। রবিবার পরপর যে তিনটি বাড়িতে হামলা হয়, তার ৩০ মিটারের মধ্যে সোমবারের ঘটনা। রবিবারের ঘটনাস্থলে বসেছে পুলিশ পিকেট। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ বারের হামলায় চেঁচামেচি শুনে ওই পুলিশকর্মীরা যতক্ষণে আসেন, ততক্ষণে হামলাকারীরা তাঁদের পাশ দিয়েই পালায়। পুলিশ ফিরে যাওয়ার পরে অভিযুক্তেরা আক্রান্তদের ফের হুমকি দিয়ে যায় বলেও দাবি এলাকাবাসীর। রবিবারের হামলাকারীরা ছিল বহিরাগত। তবে সোমবারের পাড়ারই ছেলেরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ আক্রান্তদের। পুলিশের কাছে এক জনের নামে অভিযোগও দায়ের হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রবিবার বহিরাগতদের সঙ্গে স্থানীয় যারা ছিল, তাদেরই কয়েক জন সোমবারের ঘটনার পাণ্ডা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ‘‘সোমবার হামলার পরে ওই ছেলেরা শাসিয়ে যায়, ‘পুলিশকে খবর দিলে ফল ভাল হবে না।’ ওদের এক জন ফের এসে বলে যায়, ‘পুলিশ ধরলে কী হবে, ৫০০ টাকা জামিন দিয়ে থানা থেকেই ফিরে আসব। তখন কে বাঁচাবে?’ আমরা অসহায়।’’ এক প্রবীণের আক্ষেপ, ‘‘ছেলেগুলোকে চোখের সামনে বড় হতে দেখলাম। পড়াশোনা নেই, চাকরি-বাকরি নেই, অথচ ঠাঁটবাট ষোলো আনা। কেউ বা কারা ওদের মাথাটাই বিগড়ে দিয়েছে।’’

কী ঘটেছে সোমবার রাতে?

রবিবারের তাণ্ডবের পর থেকেই পুলিশ পিকেট রয়েছে পুরসভার ১০১ নম্বর ওয়ার্ড অফিসের সামনে। তার ২০ মিটারের মধ্যে আক্রান্ত কমল মজুমদার ও গৌরাঙ্গ চক্রবর্তীর বাড়ি। কমলবাবুর বাড়ির পিছনের রাস্তায় শহিদ বেদীর মোড়ে বাড়ি লাগোয়া জমিতে ফাস্ট ফুডের দোকান কৃষ্ণা করের। সোমবার সেখানেই হামলা হয়। নিগৃহীত হন কৃষ্ণা ও তাঁর এক কর্মচারী। পুলিশ জানায়, এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিলেন যাদবপুরের সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তীর এজেন্ট গৌতম কর। কৃষ্ণাদেবী তাঁর ভাইয়ের স্ত্রী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ দুষ্কৃতীরা প্রথমে যায় ওই ফাস্ট ফুডের দোকানে। তখন দোকানের সামনেই দাঁড়িয়েছিলেন গৌতমবাবু। অভিযোগ, তাঁকে হুমকি দিয়ে দুষ্কৃতী দলটি চলে গেলেও কিছুক্ষণ পরে এসে দোকানে ভাঙচুর চালায় তারা। তখন দোকানে ছিলেন কৃষ্ণাদেবী। তাঁকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। গৌতমবাবুর দাবি, কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্যর ঘনিষ্ঠ স্থানীয় তৃণমূল নেতা জিৎ মুখোপাধ্যায় ওরফে গুড্ডুই ছিল হামলাকারীদের প্রধান।

গৌতমবাবুর দাবি, ‘‘রবিবারের দলটায় জিৎ ছিল। সিসিটিভি ফুটেজেও ওদের দেখা গিয়েছে। পুলিশ কাউকে ধরল না। ওরা এ বার আমাদের উপরে হামলা চালাল। আমারা সিপিএম করি বলে কি অপরাধ করেছি?’’ কৃষ্ণাদেবী বলেন, ‘‘আমাকে মারল। দোকান ভেঙে দিল। বাড়িতে হামলা চালাল। আর যাওয়ার সময় বলে গেল, ‘পুলিশে জানালে বাড়িতে বোমা মারা হবে।’ কোথায় বাস করছি আমরা!’’

এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ পাটুলি থানার ভূমিকায়। চিন্তিত লালবাজারও। এক পুলিশকর্তা বলেন, কসবায় সিপিএমের পার্টি অফিসে হামলা এবং এক কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী সঞ্জয় দাস ওরফে লালুকে পুলিশ এক দিনেই ধরে ফেলল, অথচ সিসিটিভি ফুটেজ থাকতেও পাটুলি থানা কেন এক জনকেও গ্রেফতার করল না? কেনই বা ফের হামলা? পাটুলি থানার ওসি-র কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। ওই থানা দুষ্কৃতীদের পালানোর সুযোগ করে দিল কি না, দেখা হচ্ছে তা-ও।

অন্য দিকে, হামলার কারণ হিসেবে প্রত্যাঘাতের যুক্তি দিয়েছেন বাপ্পাদিত্য। পুলিশের সাহায্য না নিয়ে এ ভাবে হাতে আইন তুলে নেওয়া কেন? যে পাটুলি থানার পুলিশ তাঁর হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ, কাউন্সিলর দোষ চাপান তার উপরেই। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘নির্বাচনের দিন থেকে আমরা পুলিশের কাছে তৃণমূল কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ করছি। পুলিশ ঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিলে এই ঘটনা ঘটত না।’’

বাপ্পার অভিযোগে হতবাক স্থানীয় সিপিএম কর্মী-নেতারা। তাঁরা বলছেন, ‘‘নির্বাচনের দিন যা কিছু ঘটেছে, তা করেছে পুলিশ আর কেন্দ্রীয় বাহিনী। আমাদের হামলা করার শক্তিই বা কোথায়!’’

assembly election 2016 TMC councilor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy