Advertisement
E-Paper

ফাঁড়া কাটল না বদলিতেও, ভারতীকে সরালই কমিশন

তাঁকে জঙ্গলমহলে ধরে রাখতে ভোটের মুখে নতুন পদ তৈরি করা হয়েছিল। যার সুবাদে জেলার পুলিশ সুপার পদ থেকে সরার পরেও মুখ্যমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ তিনি বহাল তবিয়তে জঙ্গলমহলেই ছিলেন। কিন্তু শনিবার আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষকে সেই পদ থেকে সরিয়েই দিল নির্বাচন কমিশন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৬ ০৩:২৭
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

তাঁকে জঙ্গলমহলে ধরে রাখতে ভোটের মুখে নতুন পদ তৈরি করা হয়েছিল। যার সুবাদে জেলার পুলিশ সুপার পদ থেকে সরার পরেও মুখ্যমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ তিনি বহাল তবিয়তে জঙ্গলমহলেই ছিলেন। কিন্তু শনিবার আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষকে সেই পদ থেকে সরিয়েই দিল নির্বাচন কমিশন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বারবার ‘জঙ্গলমহলের মা’ আখ্যা দেওয়া ভারতী যদিও ফোনে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে হেসেই কুটিপাটি। বলেছেন, ‘‘ভারতী ঘোষ এখন নন্দ ঘোষ (যত দোষ) হয়ে গিয়েছে! ক্রিকেট ম্যাচের দিন কেন বৃষ্টি হবে, তার দোষও যেন আমার!’’

ভারতীর অপসারণ চেয়ে দীর্ঘদিন সরব কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ‘‘উনি যে পক্ষপাতদুষ্ট অফিসার ছিলেন, এটা প্রমাণ করতে পেরে ভাল লাগছে।’’ সিপিএমের নেতা সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘উনি কার্যত তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী ছিলেন! কমিশন তা বুঝেছে।’’

তৃণমূলের মহারথীরা প্রায় কেউই এ নিয়ে মুখ খোলেননি। কেন? দলের এক রাজ্য নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘ওরে বাব্বা! উনি আমাদের নেত্রীর স্নেহধন্যা। ওঁর বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব না।’’

ভোটের মুখে কমিশনের নজরে পড়ে বদলি ভারতীর ক্ষেত্রে নতুন নয়। ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগেও পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার এবং ঝাড়গ্রামের ভারপ্রাপ্ত সুপারের পদ থেকে কমিশন তাঁকে সরায়। সে বারও অভিযোগ ছিল তৃণমূল-ঘনিষ্ঠতার। যদিও সে বার মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গেই ঘোষণা করেছিলেন, ভোট মিটলেই ভারতীকে পুরনো পদে ফেরাবেন। এবং তা করেওছিলেন।

নবান্ন সূত্রে খবর, লোকসভা ভোটের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই ভারতীকে নতুন পদে পাঠায় রাজ্য। গত জানুয়ারিতে মাওবাদী দমনে নিযুক্ত বিশেষ বাহিনীর প্রধান করা হয় তাঁকে। নতুন পদ— ‘অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি, লেফ্‌ট উইং এক্সট্রিমিজম অপারেশনস্’। ভারতী তিন বছরের বেশি জঙ্গলমহলের দু’টি জেলায় এসপি ছিলেন। বিধানসভা ভোটের আগেই কমিশন তাঁকে সরিয়ে দেবে, এমন আশঙ্কা ছিলই। কিন্তু সরালেও জঙ্গলমহলের পুলিশের রাশ যাতে ঘুরপথে ভারতীর হাতেই থাকে, সে কারণেই তাঁর জন্য নতুন পদ তৈরি করা হয়। তাই স্বরাষ্ট্র দফতরের বিজ্ঞপ্তিতে কেবল ভারতীর বদলির কথা ছিল। তাঁর অফিস কোথায় হবে, কার অধীনে থাকবেন, সে সবের উল্লেখ ছিল না। এক পুলিশ-কর্তার খোঁচা, ‘‘ভারতীর সব-ই আলাদা!’’ কমিশনের নির্দেশে ওই পদ থেকেই ভারতীকে বদলি করা হয়েছে সিআইডি-তে। দফতর ভবানী ভবনে।

মালদহ, বর্ধমান, নদিয়া, দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার-সহ ইতিমধ্যে যে ৩৭ জন অফিসারকে কমিশন সরিয়েছে, তাঁরা সকলেই ভোটের কাজে যুক্ত ছিলেন। ভারতী ছিলেন না। তা-ও কেন সরানো হল? কমিশন ব্যাখ্যা দেয়নি।

তবে নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘উনি (ভারতী) যে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নাক গলাচ্ছিলেন, কমিশন সে ব্যাপারে নিশ্চিত।’’ পুলিশের একটি সূত্র মনে করাচ্ছে, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদীও বলেছিলেন, ‘‘বেশ কিছু অফিসারের নিরপেক্ষতা নিয়ে অভিযোগ পেয়ে কমিশন নিজস্ব সূত্রে খোঁজ নিচ্ছে। সত্যতা মিললে দ্রুত ব্যবস্থা হবে।’’ গত লোকসভা ভোটের আগে পদ থেকে সরেও ভারতী পুলিশ সুপারের বাংলো থেকেই ভোটে নাক গলিয়েছিলেন বলে বিরোধীদের অভিযোগ। এ বার যাতে তা না হয়, তাই ভারতীকে সরানো হল বলে পুলিশের একাংশের অনুমান।

মমতা-ঘনিষ্ঠ বলেই কি বারবার ভোটের মুখে বদলি হচ্ছেন? ফোনের ও-পারে ফের হাসেন ভারতী। বলেন, ‘‘কী করে বলি বলুন তো!’’

পশ্চিম মেদিনীপুরের এসপি থাকাকালীন বিতর্ক কখনও পিছু ছাড়েনি তাঁর। পিংলার ব্রাহ্মণবাড় গ্রামে বিস্ফোরণে ১৩ জনের মৃত্যুর পরে মমতার সুরেই ভারতী বলেছিলেন, ‘বাজি কারখানায় বিয়েবাড়ির বাজি তৈরি হচ্ছিল।’ অথচ, এলাকাবাসীর দাবি ছিল, তৃণমূলের মদতে সেখানে বোমা তৈরি হতো। পরে গোয়েন্দা রিপোর্টও একই কথা বলে। সবং কলেজে ছাত্র পরিষদ কর্মী কৃষ্ণপ্রসাদ জানার খুনের ঘটনাতেও মুখ্যমন্ত্রীর সুরে সুর মেলান ভারতী। তদন্ত শেষের আগেই দাবি করেন, ছাত্র পরিষদের অন্তর্দ্বন্দ্বেই খুন। আবার খড়্গপুরে পুর-নির্বাচন পর্বে মাফিয়াদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিরোধীদের হেনস্থার অভিযোগও ছিল ভারতীর বিরুদ্ধে।

গত জানুয়ারিতে যখন মাওবাদী দমনের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়, বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, জঙ্গলমহলের সব আসনে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত করাই মতলবেই এই রদবদল। ভারতী যদিও এ দিন দাবি করেন, ‘‘বহু বিরোধী নেতা বলেছেন, ‘আপনি এত ভাল কাজ করেন, তার পরেও এটা কী করে হল’! কী বলব!’’

assembly election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy