Advertisement
E-Paper

তিন বিধায়ক, ১০% ভোট, পুঁজি বিজেপির

লোকসভা নির্বাচনের মতো মোদী-হাওয়া নেই। রাজ্যে সংগঠনও বিরাট পোক্ত নয়। তবু তৃণমূলের বিরাট সাফল্যের বাজারে একক শক্তিতকে তিনটি আসন জিতে তাক লাগিয়ে দিল বিজেপি! তিন জন বিধায়ক পাওয়ার পাশাপাশিই রাজ্যে ১০.২% ভোট।

সুকান্ত সরকার

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০৩:৩৭
গৈরিক জয়। খড়্গপুরে দিলীপ ঘোষ। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

গৈরিক জয়। খড়্গপুরে দিলীপ ঘোষ। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

লোকসভা নির্বাচনের মতো মোদী-হাওয়া নেই। রাজ্যে সংগঠনও বিরাট পোক্ত নয়। তবু তৃণমূলের বিরাট সাফল্যের বাজারে একক শক্তিতকে তিনটি আসন জিতে তাক লাগিয়ে দিল বিজেপি! তিন জন বিধায়ক পাওয়ার পাশাপাশিই রাজ্যে ১০.২% ভোট। সেই সঙ্গেই অন্তত ১০০টি আসনে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ব্যবধানের চেয়ে বেশি ভোটলাভ। তথাকথিত কোনও হাওয়া না থাকা সত্ত্বেও এ বারের এই প্রাপ্তিকে নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক হিসাবেই দেখতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব। যা তাঁদের কাছে ২০১৯-র লোকসভা ভোটে লড়াইয়ের রসদ।

নিজের এবং দলের আরও দুই প্রার্থীর জয়ের পরে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘‘যেমনটা চেয়েছিলাম, তেমন না হলেও রাজ্যে আমাদের পা রাখার মতো একটা জায়গা হল। এটা আরও মজবুত করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’’

এর আগে দু’বার বিধানসভায় প্রতিনিধি পাঠাতে পেরেছিল বিজেপি। তবে দু’বারই উত্তর ২৪ পরগনার দু’টি আসন থেকে উপনির্বাচনে জিতে। এ বারই প্রথম পুরো মেয়াদের জন্য খড়গপুর, বৈষ্ণবনগর ও মাদারিহাট থেকে এক সঙ্গে তিন জন বিধায়ক পেল গেরুয়া শিবির। স্বভাবতই বৃহস্পতিবার আনন্দের লহর বয়ে গিয়েছে ৬, মুরলীধর সেন লেনে বিজেপি-র রাজ্য দফতরে। তবে এর মধ্যেও দলের অন্দরে আক্ষেপ, বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য এ বার পরাজিত। আর দিনভর ভাল লড়াই করে, বারবার এগিয়ে থেকেও দিনের শেষে জোড়াসাঁকোয় হার মেনে নিতে হয়েছে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহকে।

বস্তুত, দিলীপবাবুর জয় প্রথমে বিশ্বাসই করে উঠতে পারেননি বিজেপি রাজ্য দফতরে হাজির অনেক নেতা-কর্মী! সকালে যখন দিলীপবাবুর এগিয়ে থাকার খবর টিভি-র পর্দায় ঘন ঘন ভেসে উঠছিল, তখনও তাঁরা বেশি কৌতূহল দেখিয়েছেন জোড়াসাঁকো, বসিরহাট দক্ষিণ বা মালদহের বৈষ্ণবনগর নিয়ে। এগিয়ে থাকার খবর আসছিল কালচিনি, মাদারিহাট, নাগরাকাটা-সহ ৫-৬টি কেন্দ্র থেকে। এর মধ্যে দলের নেতারা সব চেয়ে আশাবাদী ছিলেন জোড়াসাঁকো নিয়ে। এক নেতা বলেই ফেলেন, ‘‘দিলীপদা প্রথম বার ভোটে লড়ছেন। খড়্গপুরে ভাল লড়াই হবে। কিন্তু ওখানে কম ভোটে হলেও চাচাই জিতবেন। জোড়াসাঁকোয় রাহুলদা কত ভোটে জেতেন, সেটাই এখন দেখার!’’

কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের ৭টি বিধানসভার প্রতিটিতেই যখন প্রথম রাউন্ড থেকেই তৃণমূল প্রার্থীরা এগিয়ে, তখন রাহুলবাবু খাতা খুলেছিলেন ১৮৪০ ভোটে তৃণমূলের স্মিতা বক্সীকে পিছনে ফেলে। তার পর থেকে টানা ১২ রাউন্ড পর্যন্ত রাহুলবাবু এগিয়েছেন। কিন্তু ১২ রাউন্ডের পর থেকে ছবিটা দ্রুত বদলায়। তার পর ২১ রাউন্ডের শেষে ৪ হাজারের কিছু বেশি ভোটে রাহুলবাবু হেরে যান। এই খবরে বিজেপি শিবির আচমকাই ধাক্কা খায়। কিন্তু খড়্গপুর সদর থেকে দিলীপবাবুর জয়ের খবর আসার পরে ফের স্বস্তির হাওয়া রাজ্য দফতরে। তার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বৈষ্ণবনগরে স্বাধীন সরকার এবং মাদারিহাটে মনোজ টিগ্গার জয়ের খবরও আসে। রাজ্য দফতরে কর্মী-সমর্থকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। রাজ্যের দুই সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দেবশ্রী চৌধুরীও কর্মীদের সঙ্গে আবির খেলায় মেতে ওঠেন।

মাত্র তিনটি আসনে জিতে এত উল্লাস! এক নেতার বক্তব্য, ‘‘আমাদের তো একটা মাত্র ছিল। সেখানে তিনটি! মানে ৩০০% বৃদ্ধি।’’ কিন্তু ২০১৪ সালে বিজেপি ভোট পেয়েছিল ১৭%। এ বার তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০.২%। তা হলে এ বারেরটা ভাল ফল কী ভাবে? ওই নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘২০১৪-র কথা বলার আগে ২০১১-র কথা ভাবতে হবে। গত বিধানসভা নির্বাচনে আমরা পেয়েছিলাম মাত্র ৪.০৬%। তিন বছর পরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১৭%-এ। তাতে মোদী হাওয়া কাজ করেছিল। কিন্তু এ বার যে ভোটটা আমরা পেয়েছি, তাতে নিজস্ব শক্তিই বেরিয়ে এসেছে।’’

ভোটের পরে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে রাজ্যের সহ-পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ এবং দিলীপবাবু নিজেও ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছিলেন, তাঁদের সরকার গড়ার আশা নেই ঠিকই। কিন্তু তাঁরা লড়েছেন দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে অনেক বেশি আসন নিয়ে যাতে তাঁরা মোদীকে ফের সরকার গড়তে সাহায্য করতে পারেন, তার জন্য এ বারের ভোট থেকে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সরকার যে-ই গড়ুক, তাঁদের দল একটা নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক গড়ে তুলবে। আগামী দিনে সেটাই হবে তাঁদের পুঁজি।

তবে এই লক্ষ্যে মোটামুটি সফল হওয়ার পরেও আত্মতুষ্টিতে ভুগতে রাজি নন দিলীপবাবু। তাঁর মতে, আসন বাড়লেও দুই অভিজ্ঞ নেতা রাহুলবাবু এবং শমীকবাবুর পরাজয় দলের ‘বিশাল ক্ষতি’। দিলীপবাবুর কথায়, ‘‘শমীকদা আর রাহুলদা থাকলে বিধানসভায় ওঁদের নেতৃত্বেই আমরা কাজ করতাম। এখন দায়িত্বটা আমাকেই নিতে হবে!’’ জয়ী হয়েও যেন একটু চিন্তিত দেখাল দিলীপবাবুকে!

assembly election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy