Advertisement
E-Paper

পাবদা-পোনার ‘বাজার’ বাছলেন ওঁরা

এ বেলা, ছোট পোনাটাই নিন। পাবদার দিকে হাত বাড়াবেন না। বেলা ন’টাতেই চৈতি রোদে পাঞ্জাবি সপসপে। একটু বিরক্ত হয়েই ঘাড় ঘুরিয়ে ছিলেন ভদ্রলোক। পাবদা-পোনার চয়েসটা ঘেঁটে গিয়ে দেখলেন বাজারের কাদা-ঘাম এড়িয়ে দিব্যি চকচকে মুখ নিয়ে তাঁর সামনে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে প্রার্থী।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ০১:৪৮
প্রচারে নবদ্বীপের জোট প্রার্থী সুমিত বিশ্বাস। ছবি:দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রচারে নবদ্বীপের জোট প্রার্থী সুমিত বিশ্বাস। ছবি:দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।

এ বেলা, ছোট পোনাটাই নিন। পাবদার দিকে হাত বাড়াবেন না।

বেলা ন’টাতেই চৈতি রোদে পাঞ্জাবি সপসপে। একটু বিরক্ত হয়েই ঘাড় ঘুরিয়ে ছিলেন ভদ্রলোক। পাবদা-পোনার চয়েসটা ঘেঁটে গিয়ে দেখলেন বাজারের কাদা-ঘাম এড়িয়ে দিব্যি চকচকে মুখ নিয়ে তাঁর সামনে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে প্রার্থী।

মাস তিনেক আগেও পার্টি অফিসের সামনে দু’ঠ্যাং সামনে ছড়িয়ে সিগারেটের রিং ছাড়তে দেখেছেন তাঁকে। চাঁদা চাইতে ‘মেসোমসায়’ বলে বার কয়েক বাড়ির দোরগোড়াতেও দেখেছেন তাঁকে। তা বলে রোববারের বাজারে পাবদা-পোনা বেছে দেবে সে?

দিচ্ছে, শুধু বাজারে মাছ পছন্দ করে দেওয়া নয়, ভোটের মুখে প্রথম রবিবাসরীয় সকালে মানুষের মন মজাতে প্রার্থীরা এ দিন হাজিরা দিলেন বাজার থেকে মুদির দোকান, রেল স্টেশন থেকে গলির চায়ের দোকান— সর্বত্র।

এ দিন যেমন সক্কাল সক্কাল রবিবাসরীয় প্রচারে বেরিয়ে পড়েছিলেন পড়েছিলেন সুমিত বিশ্বাস। নবদ্বীপের প্রাচীনমায়াপুর বাজারে গঙ্গার টাটকা ট্যাংরা নিয়ে তখন সবে দরাদরি শুরু হয়েছে। মাছের উপর ঝুঁকে পড়ে কানকো টেনে দেখাশোনা চালাচ্ছিলেন কেউ কেউ। এমন সময় জনা তিরিশের একটা দল নিয়ে বাম প্রার্থী সোজা ঢুকে পড়েন বাজারে।

রবিবারের সকাল। ফলে ভিড়ও ভালই। প্রতিদিন যাঁদের দেখা মেলে না, তাঁরাও এ দিন বাজারের ব্যাগ হাতে হাজির। ‘‘কী দাদা, কী বুঝছেন? জোট না তৃণমূল?’’ —ইতিউতি আলোচনাও শুরু হয়েছিল। হঠাৎ সুমিতবাবুকে সদলবলে দেখে চমকে যান অনেকেই। হাতজোড় করে এগোতে থাকেন তিনি। ঘুরতে থাকেন গোটা বাজার। মিছিলের একেবারে সামনে এক জন জোরালো স্বরে প্রার্থীর পরিচয় করিয়ে দিতে থাকেন সকলের সঙ্গে—‘‘সিপিএমের সুমিত বিশ্বাস, দাদা এ বার নবদ্বীপের জোট প্রার্থী।’’ মাঝেমধ্যে আবার তিনি নিজেই এগিয়ে গিয়ে আলাপ করেন। — ‘‘দাদা ভাল আছেন তো। আপনার ভোটটা কিন্তু চাই-ই চাই।’’

বাজারেও প্রচার! চাপা গুঞ্জন শুরু হয়েছিল ভিড়ের মধ্যেই। সুমিতবাবু নিজেই বললেন, “ছুটির দিনে বেশির ভাগ লোকই নিজের হাতে বাজার করতে আসেন। অফিসের তাড়াও থাকে না। ধীরেসুস্থে কথা বলা যাবে, তাই বাজারে চলে আসা।”

সুমিতবাবু একাই নন। প্রায় সর্বত্রই এক দৃশ্য। সকাল হতে না হতে পথে নেমে পড়েছেন কমবেশি সব প্রার্থীই। রবিবারের বাজার। এক মুহূর্ত নষ্ট করা যাবে না।

—‘‘দাদা, একটু আস্তে। এত জোরে হাঁটা যায় নাকি?’’ হাঁফাতে হাঁফাতে বলছিলেন দলেরই এক কর্মী। কিন্তু সে কথা শোনার সময় নেই কল্যাণীর সিপিএম প্রার্থী অলকেশ দাসের। ছুটির দিন, অফিস-কাছারি নেই, কমবেশি সকলকেই বাড়িতে পাওয়া যাবে। অতএব যতটা প্রচার এগনো যায় আর কী।

সাড়ে আটটার মধ্যেই অলকোশবাবু চলে যান মদনপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। দু’দলের কর্মীরা আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন। শুরু হয় হাঁটা। প্রায় চার ঘন্টা টানা পায়ে হেঁটে ঘুরলেন ১৬টি বুথ এলাকা। বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললেন। এত হাঁটছেন, পরে পায়ের ব্যথাটা ভোগাবে নাতো? মুচকি হেসে অলকেশবাবু বললেন, ‘‘আমরা কমিউনিস্টরা এসি গাড়িতে চেপে রাজনীতিটা করি না! বুঝলেন?’’

মুর্শিদাবাদের তৃণমূল প্রার্থী অসীম ভট্ট সোজা চলে গিয়েছিলেন চরে। গত কয়েক দিন হল জেলার বিস্তৃত এলাকায় ভাগীরথীর চর জেগে উঠেছে। চর দেখতে ভিড় করছে বুড়োবুড়ি থেকে কচিকাচা, গ্রামকে গ্রাম। এক রকম মেলা বসে গিয়েছে। প্রচারের জন্য এই ভিড়কে বেছে নিয়ে হিসেবে কিন্তু ভুল করেননি প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা।

পায়ে স্নিকার, গায়ে ডেনিম রঙের জিন্সের সঙ্গে টি-শার্ট। প্রার্থীকে দেখেই হইচই পড়ে যায়। হিড়িক ওঠে সেলফি তোলার। সবে একটা চওড়া হাসি দেখা দিয়েছিল অসীমবাবুর মুখে, প্রশ্নটা ধেয়ে এল। — ‘‘বাবা, তুমি আমার ছেলের মত। কিছু মনে করো না যেন। ভোটের সময়ে তো তোমাদের দেখা মেলে। ভোট ফুরিয়ে গেলে তো খোঁজও নেবে না।’’ বললেন এক বয়স্ক মহিলা।

বেমক্কা এমন একটা প্রশ্নে প্রথমে ঘাবড়েই গিয়েছিলেন। কোনও মতে সামলে নিয়ে বললেন, ‘‘দেখেছেন! এই এক অভিযোগ সর্বত্র। গত বারের বিধায়ক ভোটে জেতার পরে কোনও রকম যোগাযোগ রাখেননি। আমি ঠিক করেছি ভোটে জিতলেই আমার সাতটি অঞ্চল এবং দুটি পুরসভায় বিধায়ক পরিষেবা কেন্দ্র খুলব।’’ পিছনে তখনই কথা শুরু হয়েছে, ‘‘হ্যাঁ, ওই কথায় ভুলি। ভোটের আগে সবাই ও সব বলে।’’

রানাঘাটে (উত্তর-পশ্চিম) কেন্দ্রর কংগ্রেস প্রার্থী শঙ্কর সিংহ আবার রবিবারের সকালটা ব্যবহার করছেন অন্য ভাবে। শহরের মান্যিগণ্যি বেশ কিছু মানুষের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সে শহরের বিশিষ্ট আইনজীবীই হোক কিংবা শিক্ষক-অধ্যাপক। ‘‘রোববার ছাড়া ওঁদের হাতের কাছে পাওয়ার তো উপায় নেই। তাই বাধ্য হয়েই এ দিনটা বেছে নিলাম।’’

করিমপুরের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের অবশ্য পথে-প্রচারে নামা হয়নি। কল্যাণীতে দলীয় বৈঠক রয়েছে। সকালে তাই কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেই বেরিয়ে গিয়েছেন। রোববারটা তা হলে মার গেল? ‘‘না না, তা কেন হবে? এটাও তো গুরুত্বপূর্ণ,’’ বলছেন তিনি। একই অবস্থা তেহট্টের তৃণমূল প্রার্থী গৌরিশঙ্কর দত্তেরও। এলাকায় প্রচারে বেরোতে পারেননি তিনি। সকালে কৃষ্ণনগরে বাড়িতে কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেই নাকেমুখে দু’টো গুঁজে রওনা দেন রানাঘাট। সেখানেও একপ্রস্ত বৈঠক সারেন। তার পর সোজা কল্যাণীতে দলীয় বৈঠকে।

‘‘বিরোধীরা তো জোরদার প্রচার করছে। আপনি নিজের কেন্দ্রেই গেলেন না?’’ প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়েছিলেন জনৈক। হাত কচলিয়ে গৌরিশঙ্করবাবু বললেন, ‘‘আমি যেমন প্রার্থী, তেমন দলের জেলা সভাপতিও বটে। সারা সপ্তাহ নিজের কেন্দ্র প্রচার করেছি। রবিবারটা তাই দলের জন্য।’’

assembly election 2016 west bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy