Advertisement
E-Paper

শ’মিটার মতলব ১৩২ কদম, সমঝে দিল বাহিনী

বাজেটে বেলাগাম ঘাটতিকে একশো হাত দূরে রাখতে তাঁদের যতটা তৎপর হওয়ার কথা, প্রায় সেই দৃঢ়তায় দুই জমানার দুই অর্থমন্ত্রীর ভোটের লড়াই সামলাল কেন্দ্রীয় বাহিনী আর পুলিশ।

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৫৩
বাহিনীর সঙ্গে তরজা অমিত মিত্রের। খড়দহে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

বাহিনীর সঙ্গে তরজা অমিত মিত্রের। খড়দহে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

বাজেটে বেলাগাম ঘাটতিকে একশো হাত দূরে রাখতে তাঁদের যতটা তৎপর হওয়ার কথা, প্রায় সেই দৃঢ়তায় দুই জমানার দুই অর্থমন্ত্রীর ভোটের লড়াই সামলাল কেন্দ্রীয় বাহিনী আর পুলিশ। খড়দহে শাসক দলের দিনভর চোখ রাঙানির সামনেও বুথের একশো মিটারের মধ্যে অবাঞ্ছিত কাউকে ঘেঁষতে না দেওয়ার কর্তব্যে অটল থাকল তারা।

ঘটনা ১: ঠাকুর কলোনির একটি বুথে যাওয়ার আগে তৃণমূল প্রার্থী অমিত মিত্রকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক অফিসার সোজাসাপ্টা বললেন, ‘‘শ’মিটার। মতলব ১৩২ কদম। বুথ সে ইতনা দূর রহনা হ্যায়। আপনা আদমিকো সমঝা দিজিয়ে।’’ তার আগেই চোস্ত হিন্দিতে অমিতবাবু ওই অফিসারের কাছে অভিযোগ করেছেন যে, তৃণমূল মহিলা কর্মীদের উপর অকারণে লাঠি চালিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। জনা দশেক মহিলা নালিশ জানাচ্ছেন তখনও। দাবি, নিরাপত্তা কর্মীদের ক্ষমা চাইতে হবে। অফিসার পাল্টা জানালেন, বুথের ১০০ মিটারের মধ্যে ভোটার-স্লিপ বিলি করছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। সুতরাং...

ঘটনা ২: গাড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে পুলিশের দিকে তেড়ে গেলেন হলুদ পঞ্জাবি পরা এক যুবক। সঙ্গে অমিত মিত্র। পুলিশকে ওই যুবক প্রশ্ন ছুড়লেন, ‘‘জানেন আমি কে? আমাকে দেখেও লাঠি চালালেন!’’ পুলিশের উত্তর, ‘‘১৫ দিন আগে এখানে এসেছি। জানি না আপনি কে।’’ ওই যুবকের হয়ে স্বভাবসুলভ পরিশীলিত ভাষায় এ বার সওয়াল করতে গেলেন অমিতবাবু। জানালেন, যে তাঁর সঙ্গী খড়দহ পুরসভার কাউন্সিলর সায়ন। পুলিশের উত্তর অবশ্য বদলালো না। ঠাণ্ডা উত্তর এল, ‘‘উনি কে, জানি না। বুথের ১০০ মিটারের মধ্যে ভিড় জমলে, লাঠি চালাতেই হবে।’’ সায়ন শাসিয়ে গেলেন, ‘‘৩৬৫ দিন কমিশন থাকবে না। তখন কে দেখবে?’’

এ ভাবেই দিনভর ‘ভোট করার’ চেষ্টা চলল খড়দহ বিধানসভায়। সঙ্গে চলল তা নিষ্ফল করার প্রচেষ্টাও।

সোমবার ভোটের দিন সকাল থেকেই দুই প্রার্থীর গন্তব্য খড়দহের গ্রামাঞ্চল। শহরপুর, বোদাই, কামারগাঁথি, মহিষপোঁতা, তালবান্দা অঞ্চল চষে ফেললেন সিপিএম প্রার্থী অসীম দাশগুপ্ত। এই গ্রামাঞ্চলেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বুথে এজেন্ট দিতে পারেনি বাম-কংগ্রেস জোট। তবুও মাটি কামড়ে পড়ে রইলেন অসীমবাবু। শাসক দলের শাসানি ঠেকাতে প্রার্থীর উপস্থিতি খুব জরুরি বলে জানালেন স্থানীয় এক বাম নেতাও। সিপিএম সূত্রে খবর, প্রতিকূলতার মুখেও অন্তত কিছু বাঁধা ভোট নিশ্চিত করতেই এই কৌশল।

অমিতবাবু আবার সকাল থেকে ঘাঁটি গেড়েছিলেন বিলকান্দা (এক ও দুই), বান্দিপুর ও পাতুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে। লক্ষ্য, নিজে দাঁড়িয়ে ভোট করানো। দুপুর গড়িয়ে যাওয়ার পরে রহড়ায় দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছন তিনি। তার আগে শহরাঞ্চল সামাল দেওয়ার ভার ছিল সায়নবাবুদের মতো কাউন্সিলরদের উপরে।

সেই দায়িত্ব পালনে অবশ্য জান কবুল করেছেন খড়দহ ও পানিহাটি পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলররা। দাপিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা করেছেন তাঁদের সঙ্গী-সাথীরা। সকাল সাতটার আগেই খড়দহ পুরসভার কুলিনপাড়া ও সংলগ্ন এলাকায় ভোটারদের ভয় দেখানো, বিরোধী দলের এজেন্টকে মারধর থেকে শুরু করে বাইক বাহিনীর তাণ্ডব— কমিশনের কাছে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়তে থাকে। এই অঞ্চলে সকালের দিকে মহিলারা ভয়ে বাড়ি থেকে ভোট দিতেও বেরোননি। শেষমেশ বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভোটারদের আশ্বস্ত করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ভোটের লাইন থেকে যাঁরা গলাধাক্কা খেয়েছিলেন, তাঁরা ফের লাইনে দাঁড়ান।

স্বাভাবিক ভাবেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর এই হাত বাড়োনোকে সুনজরে দেখেনি শাসক দল। তৃণমূল নেতা, কর্মীদের বক্তব্য, ‘‘বাড়াবাড়ি করছে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশ। যথেষ্ট শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।’’ এই ‘বাড়াবাড়ি’র ছবি তুলতে গিয়েই তৃণমূলের ‘দাদাগিরি’র মুখে পড়েন আনন্দবাজারের চিত্রগ্রাহক স্বাতী চক্রবর্তী। কল্যাণনগরে একটি বুথের থেকে কিছুটা দূরে গোল করে বসেছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। তার আগেই ওই বুথের ১০০ মিটারের মধ্যে ভিড় জমায় লাঠি চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। ভেঙে দিয়েছিল বুথের কাছে তৃণমূল আয়োজিত খাওয়ার ব্যবস্থাও। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ছবি তুলতে গেলে হাত ধরে টেনে সরাতে যান তৃণমূল কর্মী। ক্যামেরায় হাত দিতেও কসুর করেননি এলাকার ‘দাদা’ রাজা দাস। তা-ও আবার নিরাপত্তা কর্মীদের সামনেই।

যদিও কেন্দ্রীয় বাহিনী ও স্থানীয় পুলিশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সিপিএম। বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া ভাল ভোট হয়েছে বলে জানান অসীমবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীর সৌজন্যে ভোট অনেকটাই অবাধ হয়েছে। তাই আমরা আশা রাখছি।’’

assembly election 2016 Amit Mitra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy