Advertisement
E-Paper

এ বার দিতে হবে, শাসকের জন্য কোমর বেঁধেছে ক্লাব

ক্লাবের সঙ্গে ক্লাবের লড়াই সবার জানা। কখনও এই প্রতিযোগিতা হয় দুর্গাপুজোয় মণ্ডপ তৈরি নিয়ে, কখনও বা কালীপুজোর আলোকসজ্জা নিয়ে। কিন্তু এ বার ভোটের মরসুমে ক্লাবগুলির মধ্যে হচ্ছে এক ভিন্ন প্রতিযোগিতা।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৪৯

ক্লাবের সঙ্গে ক্লাবের লড়াই সবার জানা। কখনও এই প্রতিযোগিতা হয় দুর্গাপুজোয় মণ্ডপ তৈরি নিয়ে, কখনও বা কালীপুজোর আলোকসজ্জা নিয়ে। কিন্তু এ বার ভোটের মরসুমে ক্লাবগুলির মধ্যে হচ্ছে এক ভিন্ন প্রতিযোগিতা।

প্রতিদানের প্রতিযোগিতা। কে কতটা প্রতিদান দিতে পারছে, এ নিয়ে এখন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।

কোন রাস্তায় চলতে হবে, বছর দুয়েক আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন নেতা। হাঁটাটা ছিল অপেক্ষামাত্র। সময় হতেই সেই পথে হাঁটা শুরু। তবে হাঁটা বললে কম বলা হবে, বলা যায় দৌড় শুরু হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খেলাধূলার উন্নতির জন্য রাজ্যের ক্লাবগুলিকে অনুদান দিয়েছেন। এ নিয়ে বিরোধী দলের কটাক্ষ ছিল, এই অনুদান ক্লাবগুলিকে হাতে রাখার জন্য। শুধু বিরোধী দলই নয়, তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছিলেন একই কথা। বছর দুয়েক আগে একটি জনসভায় খোলাখুলি ভাবেই তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমরা ক্লাবগুলিকে অনুদান দিয়েছি। আশা রাখছি ভোটের সময়ে তারা আমাদের হয়ে কাজ করবে।’’

শাসক দলের সাংসদের এই কথার পরে বিরোধীদের সমালোচনার তির আরও ধারালো হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, দলের সাংসদের সেই আশা বিফলে যায়নি। আশাপূরণ করেছেন অনুদান পাওয়া ক্লাবের সদস্যেরা।

দক্ষিণ কলকাতার সর্বত্রই ধরা পড়ল সেই ‘প্রতিদান’-এর ছবি।

হাতে আর মাত্র চারদিন বাকি। রাসবিহারী থেকে ভবানীপুর কিংবা যাদবপুর, সর্বত্রই ব্যস্ত স্থানীয় ক্লাবগুলি।

কোথাও শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, কোথাও আবার খোদ মাননীয়া। নিজের দল তো প্রচার করেই, এ বার তাঁদের জন্য ময়দানে নেমে পড়েছে স্থানীয় ক্লাবগুলিও। কে কার থেকে বেশি সক্রিয়তা দেখাতে পারবে, এ নিয়ে যেন অঘোষিত লড়াই চলছে।

রাসবিহারী কেন্দ্রে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের জন্য হোর্ডিং টাঙিয়েছে কালীঘাট কদমতলা ইউনাইটেড ক্লাব। ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশন তো ক্লাবঘরকেই তৃণমূলের কার্যালয় বানিয়ে ফেলেছে। একই ছবি কালীঘাট নতুন সঙ্ঘের। নিজেদের ক্লাব ঘরের উপরে সদস্যেরা টাঙিয়ে রেখেছেন এলাকার তৃণমূল প্রার্থী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে ভোট দেওয়ার আবেদনের হোর্ডিং।

তবে শুধু হোর্ডিং টাঙিয়েই থেমে নেই ক্লাবগুলি। জনসভা করা, পাড়ায় পাড়ায় মানুষকে বোঝানো— তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সবই করছেন ক্লাবের সদস্যেরা।

কালীঘাট ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাজা মজুমদার বলেন, ‘‘এই সংগঠনের সঙ্গে তৃণমূল দলের কোনও ফারাক নেই।’’ তাঁর কথায়, তিনি এলাকার প্রায় কুড়িটি ক্লাবের কর্তা। তিনি জানান, গত পাঁচ বছরে ক্লাবের জন্য অনেক করেছে সরকার। সরকারি অনুদানে ক্লাবের উন্নতিও হয়েছে। তাই, ‘‘দিদির জন্য কাজ করতে হবে।’’

কী কাজ করছেন ক্লাবের সদস্যেরা?

কলকাতার বিভিন্ন ক্লাবের কর্তারা জানাচ্ছেন, রাস্তার মোড়ে মোড়ে জনসভা করা হচ্ছে। ক্লাবের সদস্যেরা যেহেতু পাড়ার লোকজনকে ভালভাবে চেনেন, তাই প্রচারের সময়ে কার বাড়িতে কি বলতে হবে তা ভাল ভাবে বুঝিয়ে দিতে পারছেন তাঁরা। একই বক্তব্য দক্ষিণ শহরতলির একাধিক ক্লাব কর্তাদের।

যাদবপুরের তৃণমূল প্রার্থী মনীশ গুপ্তের সমর্থনে যখনই মিছিল হয়েছে, এগিয়ে এসেছে ক্লাবগুলি। শুধু ক্লাবের সদস্যরাই নন, মিছিলে যোগ দিয়েছেন তাঁদের পরিবারের লোকজনও। এমনটাই জানাচ্ছেন এলাকার ক্লাবগুলির কর্তারা।

গড়িয়া পার্ক স্পোর্টস অ্যান্ড কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক গৌতম পত্রনবীশ বলেন, ‘‘সরকারি অনুদানে আমাদের অনেক সাহায্য হয়েছে। তাই ক্লাবের ছেলেরা চাই, এই সরকার থাকুক।’’ একই মত কেন্দুয়া শান্তি সঙ্ঘ, উপনগরী স্পোর্টিং-সহ একাধিক ক্লাবের সদস্যদেরও। তাঁরা জানাচ্ছেন, মনীশ গুপ্ত প্রস্তাব না করলে তাঁরা ক্লাবের জন্য অনুদান পেতেন না। তাই আবার যেন মনীশ গুপ্ত ফিরে আসেন, সেটাই তাঁরা দেখছেন।

বিরোধী পক্ষ অবশ্য মনে করছে, ক্লাবের উন্নতির জন্য নয়, সরকারি টাকা দেওয়া হয়েছিল তৃণমূলের হয়ে কাজ করার জন্য। তাই ক্লাবের সদস্যেরা মাঠে নেমেছেন। সিপিএম নেতা ও সাংসদ মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘ক্লাবের উন্নতি হয়নি। সরকারি টাকায় কিনে নেওয়া হয়েছিল এঁদের, তৃণমূলের হয়ে কাজ করার জন্য।’’

তবে শুধুই মানুষকে বোঝানো বা মিছিলে লোক জোগান দেওয়াই নয়। হরিদেবপুরের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ৪৭ পল্লি ক্লাবের সদস্যেরা তো এলাকার অটোচালকদের স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, ‘‘এলাকার তৃণমূল প্রার্থী শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ভোট না দিলে সব অটো সাতদিনের জন্য বন্ধ থাকবে।’’ ক্লাব সম্পাদক শুভাশিস চক্রবর্তী অবশ্য এ কথা অস্বীকার করেছেন।

assembly election 2016 Club ruling party
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy