Advertisement
E-Paper

জোটে ধাক্কা, তৃণমূলে যোগ কংগ্রেস নেতার

শাসকদল বিরোধী জোটের কাঁটা সরাতে মেপে পা ফেলছে বাম-কংগ্রেস দু’পক্ষই। কিন্তু সোমবার ঝালদায় দলনেত্রীর সভামঞ্চ থেকে তাদের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিল তৃণমূল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৬ ০১:২৮
সভামঞ্চে নেত্রীর সঙ্গে তিন নেতা। —নিজস্ব চিত্র

সভামঞ্চে নেত্রীর সঙ্গে তিন নেতা। —নিজস্ব চিত্র

শাসকদল বিরোধী জোটের কাঁটা সরাতে মেপে পা ফেলছে বাম-কংগ্রেস দু’পক্ষই। কিন্তু সোমবার ঝালদায় দলনেত্রীর সভামঞ্চ থেকে তাদের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিল তৃণমূল। এ দিন জয়পুর বিধানসভার ঝালদা ২ ব্লকের বামনিয়া ময়দানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভামঞ্চ থেকে তৃণমূলে যোগ দিলেন পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেসের সহসভাপতি তথা প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক রথীন্দ্রনাথ মাহাতো। সভা শুরুর আগে রথীন্দ্রনাথবাবু-সহ কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের দুই নেতাকে নিয়ে মঞ্চে হাজির হন তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো। রথীন্দ্রনাথবাবুকে তৃণমূলের মঞ্চে দেখে উপস্থিত অনেকেই অবাক হয়ে যান। শান্তিরামবাবু ঘোষণা করেন, সিপিএমের সঙ্গে হাত মেলানোর প্রতিবাদে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন ওই তিন কংগ্রেস নেতা। তিন জনের হাতে দলের পতাকা তুলে দেন শান্তিরামবাবু।

জয়পুরে কংগ্রেসের সংগঠন মজবুত বলেই পরিচিত। গত বিধানসভা নিবার্চনে এই কেন্দ্রটি দাবি করে কংগ্রেস। কিন্তু দর কষাকষির শেষে জয়পুর যায় তাদের সে বারের জোটসঙ্গী তৃণমূলের ভাগে। বর্ষীয়ান নেতা শক্তিপদ মাহাতোকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করিয়ে ময়দানে নামে কংগ্রেস। শেষ পর্যন্ত এই কেন্দ্র থেকে সে বার জয়ী হয় ফরওয়ার্ড ব্লক। কিন্তু, তৃণমূল প্রার্থীর চেয়ে গত বিধানসভা নির্বাচনে শক্তিপদবাবু প্রায় দ্বিগুনেরও বেশি ভোট পেয়েছিলেন। পাশাপাশি গত লোকসভা নিবার্চনেও এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছিলেন প্রায় ৪৮ হাজারেরও বেশি ভোট। অনেকের মতে, বিগত কয়েক বছরে এলাকায় শক্তি বাড়লেও কংগ্রেসের ভোট ব্যাঙ্কে চিড় ধরাতে পারেনি তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের এই পোড়খাওয়া নেতা রথীন্দ্রনাথ বাবুর দলবদল জোটের উপর বড়সড় ধাক্কা বলেই মনে করছেন শাসকদলের নেতারা।

এ দিনের সভায় দলনেত্রীও বর্ষীয়ান এই কংগ্রেস নেতাদের প্রসঙ্গ টেনে এনে জোটকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, ‘‘১৯৯৮ সালে আমরা যখন কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলাম, তখনও এঁরা থেকে গিয়েছিলেন। কিন্তু এখন এই সরাসরি সমঝোতা আর মানতে পারলেন না।’’ কংগ্রেস এবং সিপিএম কর্মীদের উত্তরীয় বদলের কথা বলে জোটকে কটাক্ষও করেন মমতা।

শুক্রবার পুরুলিয়ায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় তৃণমূলে যোগ দেন জেলা যুব কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ ফয়জল কামাল শাহি। কংগ্রেস সূত্রের খবর, সুদীপ মুখোপাধ্যায়কে জোটের প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করার পর থেকেই তাঁর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল রথীন্দ্রনাথবাবু এবং কামাল শাহির। প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে নামতে দেখা যায়নি তাঁদের। এ দিন দলবদল প্রসঙ্গে রথীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘জেলা সভাপতি দলকে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ। তা ছাড়াও সিপিএমের সঙ্গে জোটের বিষয়টি মানতে পারিনি।’’ সৈয়দ ফয়জল কামাল শাহিও বলেন, ‘‘সিপিএমের সঙ্গে আঁতাতের প্রতিবাদেই দল ছেড়েছি আমরা।’’ এই দলবদল প্রসঙ্গে জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘একটি কেন্দ্রে টিকিটের অনেক দাবিদার থাকেন। টিকিট না পেয়ে যদি কেউ দল ছেড়ে দেন তাহলে তাঁর পথ আটকানোর কোনও উপায় খোলা থাকে না।’’ তাঁর দাবি, জোট হওয়ার পরেও টিকিটের দাবিদার ছিলেন রথীন্দ্রনাথবাবু। নেপালবাবুর কটাক্ষ, ‘‘টিকিট পেলে সিপিএমের ভোট নিতে নীতিগত সমস্যা হত না ওঁর?’’

তবে জয়পুরে এই সাফল্যের পর শাসকদল কিছুটা হোঁচট খেলো বান্দোয়ানে। পুরুলিয়ার সভায় যখন দলে যোগ দিচ্ছেন কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা, বান্দোয়ানে তৃণমূলের জয়হিন্দ বাহিনীর পুরুলিয়া জেলা সভাপতি টিকারাম সরেন প্রায় শতাধিক অনুগামী নিয়ে যোগ দিলেন বিজেপিতে। সোমবার বান্দোয়ানে ছিল ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুণ্ডার পদযাত্রা। টিকারাম সরেনের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন অর্জুন মুণ্ডা। পদযাত্রার মাঝে এক জায়গায় কিছুক্ষণ বক্তৃতাও দেন তিনি। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী কাজের চেয়ে কথা বেশি বলেন। তৃণমূলে যোগ্য লোকের স্থান হয় না। তাই দলে দলে কর্মীরা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন।’’ টিকারামবাবু বলেন, ‘‘দলের জন্য আমি প্রচুর শ্রম আর টাকা খরচ করেছি। কিন্তু দল আমাকে যোগ্য সম্মান দেয়নি। তাই বিজেপি দলে যোগ দিলাম।’’ যদিও এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির সদস্য নব্যেন্দু মাহালি বলেন, ‘‘টিকারামবাবু এই নির্বাচনে টিকিট পাবেন বলে আশা করেছিলেন। তা না হওয়ায় আশাহত হয়ে এই কাণ্ড করেছেন। তবে এতে আমাদের সংগঠনে কোনও ক্ষতি হবে না।’’

Assembly Election 2016 Congress Trinamool Congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy