Advertisement
E-Paper

তৃণমূল নেতাকে ভাঙিয়ে প্রার্থী করে চমক কংগ্রেসের

চমকটা একেবারে শেষ মুহূর্তের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছিল। এমন কিছু করতে হবে যা কপালে ভাঁজ ফেলবে শাসক দলের। আর তাই প্রথম থেকেই ঝেড়ে কাশতে রাজি ছিল না তারা।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৬ ০১:৪৮
সরোজ কাঁড়ার, জোটপ্রার্থী

সরোজ কাঁড়ার, জোটপ্রার্থী

চমকটা একেবারে শেষ মুহূর্তের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছিল। এমন কিছু করতে হবে যা কপালে ভাঁজ ফেলবে শাসক দলের। আর তাই প্রথম থেকেই ঝেড়ে কাশতে রাজি ছিল না তারা। শুধু তাই নয়, কখনও সিপিএমের কাউকে প্রার্থী বেছে প্রচার করা। ফের তাঁর নাম তুলে নিয়ে কংগ্রেস থেকে প্রার্থী করা ও তাঁর নামও তুলে নেওয়া, বার বার শাসক দলকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে গিয়েছে জোট। সে চেষ্টায় যে তারা সফল, তার প্রমাণ খোদ শাসক দলের প্রভাবশালী এক নেতাকে তাদেরই বিরুদ্ধে ভোটে নামিয়ে দিল তারা।

হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে তৃণমূলের প্রার্থী সমীর পাঁজার বিরুদ্ধে জোটের প্রার্থী হিসাবে সম্মুখ সমরে নামিয়ে দেওয়া হল সদ্য তৃণমূল ছাড়া জেলাপরিষদ সদস্য সরোজ কাঁড়ারকে। মাস খানেক আগে যিনি জেলা পরিষদের উপাধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দল থেকে সরোজবাবুকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়ে দেন তৃণমূলের হাওড়া গ্রামীণ জেলা সভাপতি পুলক রায়।

উদয়নারায়ণপুরে সরোজবাবু দলের বর্তমান বিধায়ক সমীর পাঁজার বিরোধী গোষ্ঠী বলে পরিচিত। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সরোজবাবুর বিরুদ্ধে জেলা পরিষদের আসনে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করানোর অভিযোগ ওঠে সমীরবাবুর বিরুদ্ধে। কংগ্রেসের টিকিটে লড়াইয়ে তাঁর সম্মতির কথা জানিয়ে সরোজবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূলের নেতাদের কাছে ক্রমাগত অসম্মানিত হচ্ছিলাম। দলের অনেক নেতার কাছে জানিয়েও প্রতিকার পাইনি।’’ সেই কারণেই দল ছেড়ে কংগ্রেসের টিকিটে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত বলে সরোজবাবু জানান। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি কাজি আব্দুল রেজ্জাকের কথায়, ‘‘তৃণমূলের দুর্নীতি এবং অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করতে না পেরে সরোজবাবু আমাদের দলে চলে এসেছেন।’’

কিন্তু সরোজবাবুকে কেন?

১৯৭২ থেকে ’৭৭ পর্যন্ত সরোজবাবু উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক ছিলেন। পরে একাধিকবার কংগ্রেসের টিকিটে সিপিএমের বিরুদ্ধে বিধানসভা এবং উলুবেড়িয়া লোকসভাকেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দিতাও করেন। বছর ছয়েক আগে তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিনি উদয়নারায়ণপুর থেকে জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। সরোজবাবুকে ফের দলে ফিরিয়ে কংগ্রেস পাল্টা চাল দিল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেসের কার্যত বিপর্যয় ঘটে। জেলার মধ্যে একমাত্র উদয়নারায়ণপুরের পাঁচারুল গ্রাম পঞ্চায়েতটিই তারা দখলে রাখতে পারে। কিন্তু বছরখানেক পরে কংগ্রেসের কিছু সদস্যকে দলবদল করিয়ে তৃণমূল পাঁচারুল পঞ্চায়েত দখল করে। এটা পাঁচারুলের প্রতিশোধ নেওয়া হল বলে দাবি কংগ্রেস নেতৃত্বের।

উদয়নারায়ণপুর এক সময় সিপিএমের গড় হিসাবে পরিচিত ছিল। ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পর এখানে দলে ধস নামে। বন্ধ হয়ে যায় তিনটি দলীয় কার্যালয়। এরপর ২০১১ সালের বিধানসভায় কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের কাছে হেরে যাওয়ায় অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে তারা। যদিও স্থানীয় নেতৃত্বের দাবি, তাঁরা সাংগঠনিক কাজকর্ম চালিয়ে গিয়েছেন। ফলে আগের খারাপ অবস্থা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে দল। বন্ধ তিনটির মধ্যে দু’টি দলীয় কার্যালয় খোলা হয়েছে। তৃণমূলকে এখানে বিপাকে ফেলতে জবরদস্ত প্রার্থীর খোঁজে ছিল সিপিএম-কংগ্রেস জোট। সরোজবাবু প্রার্থী হওয়ায় সেই কাজ অনেক সহজ হল বলে তাঁরা মনে করছেন। সিপিএমের লোকাল কমিটির এক নেতার কথায়, ‘‘নির্বাচনের সব প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি। প্রার্থীও ঠিক হয়ে গিয়েছে। এ বার ঝাঁপিয়ে পড়বে জোট।’’ মঙ্গলবার বিকেলে সরোজবাবু উদয়নারায়ণপুরে সিপিএমের লোকাল কমিটির কার্যালয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।

তবে পরিস্থিতি অনেকটাই তৃণমূলের অনুকূলে। ২০১৪-র লোকসভা ভোটের নিরিখে এগিয়ে তৃণমূল। তারা এখানে ভোট পেয়েছিল ৯৮,২৭৭। সিপিএম পেয়েছিল ৫১, ২৫২ ও কংগ্রেস ৭,২৩৮। সেই হিসাবে কংগ্রেস এবং সিপিএমের ভোট একত্রিত হলেও জোটের লড়াই বেশ কঠিন। যদিও কংগ্রেস এবং সিপিএমের দাবি, কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রতিটি বুথে রেখে যদি ভোট হয় তা হলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

কী বলছে তৃণমূল? এলাকায় দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে প্রভাব থাকা সরোজবাবুর কংগ্রেসের হয়ে লড়াইয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে তৃণমূল প্রার্থী সমীর পাঁজা। যদিও প্রসঙ্গ তুলতেই এ সব নস্যাৎ করে তিনি বলেন, ‘‘সরোজবাবুকে প্রার্থী করে লড়াইকেই গুরুত্বহীন করে দেওয়া হল। উনি এখন জামানত বাঁচাতে পারলে হয়।’’

assembly election 2016 TMC Congress candidate
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy