Advertisement
১৮ মে ২০২৪

উন্নয়ন নাকি দুর্নীতি, তাল ঠুকছে শাসক-বিরোধী

পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় বামেরা। পঞ্চায়েত সমিতিতে শাসক বামেরা। স্থানীয় বিধায়ক থেকে সাংসদ সবাই বাম। এক সময় বিরোধীদের কোনও অস্বিত্বই ছিল না এ তল্লাটে। একদা বাম দুর্গ হরিপালে শাসক দলের বিরোধী বলতে যাদের বোঝানো হতো, তারাও ছিল বামই।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:১৯
Share: Save:

পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় বামেরা। পঞ্চায়েত সমিতিতে শাসক বামেরা। স্থানীয় বিধায়ক থেকে সাংসদ সবাই বাম। এক সময় বিরোধীদের কোনও অস্বিত্বই ছিল না এ তল্লাটে। একদা বাম দুর্গ হরিপালে শাসক দলের বিরোধী বলতে যাদের বোঝানো হতো, তারাও ছিল বামই।

হাল আমলে তৃণমূলের গোষ্ঠীবিবাদ ঠেকানোর মতো সেই সময়েও পুলিশকে মাঝেমাঝেই ঢাল-বাহিনী নিয়ে পথে নামতে হত। বিরোধীহীন তল্লাটে নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলায় মেতে উঠত বামেরা। জেলা কমিটি থেকে রাজ্য কমিটি সকলেই ব্যর্থ হতো সেই যুদ্ধ থামাতে। এমনকী গণ্ডগোলের দুই মাথা সাংসদ রূপচাঁদ পাল বা অনিল বসুর হাতেরও বাইরে গোটা বিষয়টা চলে যেত কখনও কখনও। শেষে পুলিশি হস্তক্ষেপে এবং ধরপাকড় করে সে সব মেটাতে হতো।

সিঙ্গুর লাগোয়া হরিপালে বামেদের নিজস্ব লড়াইয়ের ছবিটা ২০০৬ সাল থেকেই কার্যত ভোজবাজির মতো উবে যায়। জমি আন্দোলনের পালে হাওয়া লাগতেই বামেদের খাসতালুকে ধস নামতে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে আন্দোলন যত জোরদার হয়েছে, হরিপালে বামেদের পায়ের তলার মাটি পাল্লা দিয়ে আলগা হয়েছে। বেড়াবেড়ি, খাসেরভেড়ি, বাজেমিলিয়ার তল্লাট ছাড়িয়ে আন্দোলন ছড়াতে থাকে। বিরোধীরা থাবা বসাতে শুরু করে রাজনৈতিক জমি দখলে। জমি আন্দোলনের আবহে এসে পড়ে ২০১১-র বিধানসভা ভোট। সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনের প্রবীণ যোদ্ধা রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকেই ফের প্রার্থী করে তৃণমূল। হরিপাল আসে বেচারাম মান্নার হাতে। প্রাথমিকভাবে বেচারাম কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন সিপিএমকে আদৌ ধরাশায়ী করা যাবে কি না সেই প্রশ্নে। তার উপর সেখানে প্রার্থী করা হয় রাজ্যে বাম মহিলা অন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ ভারতী মুৎসুদ্দীকে। সংশয়ে শুধু বেচারাম নন, ছিল তাঁর দলও। সেই সংশয় থেকেই সিঙ্গুর জমি আন্দোলনের অন্যতম মুখ বেচারাম প্রথম দিন থেকেই জমি আঁকড়ে পড়েছিলেন। ফলও পেয়েছে হাতেহাতে। দলকে অনুকূল পরিস্থিতিতে এনেছেন। দলের সাংগঠনিক নানা সমস্যা ঠান্ডা মাথায় সামলে সব নেতাকে এক ছাতার তলায় এনেছেন। আর এলাকায় রাজনীতির রাশ ক্রমশ আলগা হয়েছে সিপিএমের।


|একই লাঠিতে উড়ছে হাত-কাস্তে। আরামবাগের পুইন এলাকায় জোটের মিছিল। ছবি: মোহন দাস।

এবারও হরিপালে প্রার্থী বেচারাম। তবে পরিস্থিতি ভিন্ন। গত পাঁচ বছরে উন্নয়নের ফিরিস্তি প্রচারে বললেও সিঙ্গুর-অস্বস্তি এড়াতে পারছেন না প্রার্থী। কারণ মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন সিঙ্গুর নিয়ে তাঁর আর কিছু করণীয় নেই। তার উপর রয়েছে সারদা এবং সদ্য সদ্য নারদ স্টিং ও বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভাঙার ঘটনায় ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ। হরিপালে দলের নেতা সমীরণ মিত্রের দাবি, ‘‘এখানে গত পাঁচ বছর যে উন্নয়ন হয়েছে। তা রাজ্যের অন্য কোথাও হয়নি। এলাকায় আর কোথাও কাঁচা রাস্তা নেই।’’

এই উন্নয়নকেই কটাক্ষ করছেন সিপিএমের যুব নেতা যোগীয়ানন্দ মিশ্র বলছেন, ‘‘কাজের আগেও কিন্তু মানুষ চায় শান্তি। চায় বাক স্বাধীনতা। হরিপালে তো সেটাই নেই। তার উপর মানুষ টিভিতে প্রতিদিন তৃণমূলের যে দুর্নীতির খবর দেখছে ও শুনছে, তার সঙ্গে বাস্তবটা মিলিয়ে নিচ্ছে। তাই তফাতটাও তাঁদের বুঝে নিতে সুবিধা হচ্ছে।’’ দুনীর্তি বনাম উন্নয়নের তাল ঠোকাঠুকিতেই ভোটে বাজার গরম হরিপালে। সেই সঙ্গে সিঙ্গুর প্রসঙ্গ তুলে শিল্পের খোঁচাও দিতে ছাড়ছে না বিরোধীরা।

অঙ্ক বলছে, গত বিধানসভায় কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের বেচারাম পেয়েছিলেন ৯৮,১৪৬ ভোট। ভারতী পেয়েছিলেন ৭৬,০৭৩টি ভোট। লোকসভায় তৃণমূলের ভোট ছিল ১,০৩,০৬৬। সিপিএমের ৬২,৭০৬টি। কংগ্রেসের প্রার্থীর পাওয়া ৪,০৪৩টি ভোট এবার সিপিএমের সঙ্গে যোগ হবে। যদিও এরপরও দু’দলের মিলিত ভোটের থেকে অনেকটাই এগিয়ে শাসকেরা। তবে পাটিগণিতের নীরস জটিল অঙ্ক নাকি উন্নয়ন বনাম দুর্নীতি, কোন পথে হাঁটবেন হরিপালের মানুষ তা বোঝা যাবে ১৯ মে-ই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE