Advertisement
E-Paper

মানুষের স্বপ্নভঙ্গ ও শাসকের দ্বন্দ্বই পুঁজি, হাঁটছেন অসীম

মিল বেশি। অমিল কম। দু’জনেই অর্থনীতির ছাত্র ও অধ্যাপক। দু’জনেরই উচ্চশিক্ষা বিদেশে। মন্ত্রী হিসেবে দফতরও এক। গুণে তো বটেই। খামতির ক্ষেত্রেও মোক্ষম মিল। দু’জনের কেউই মেঠো রাজনীতির লোক নন। দু’জনের সঙ্গেই আমজনতার কোথাও একটা দূরত্ব থেকেই গিয়েছে।

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:০০
খড়দহে নির্বাচনী প্রচারে অসীম দাশগুপ্ত ও অমিত মিত্র। —নিজস্ব চিত্র।

খড়দহে নির্বাচনী প্রচারে অসীম দাশগুপ্ত ও অমিত মিত্র। —নিজস্ব চিত্র।

মিল বেশি। অমিল কম।

দু’জনেই অর্থনীতির ছাত্র ও অধ্যাপক। দু’জনেরই উচ্চশিক্ষা বিদেশে। মন্ত্রী হিসেবে দফতরও এক।

গুণে তো বটেই।

খামতির ক্ষেত্রেও মোক্ষম মিল। দু’জনের কেউই মেঠো রাজনীতির লোক নন। দু’জনের সঙ্গেই আমজনতার কোথাও একটা দূরত্ব থেকেই গিয়েছে।

এ বার সেই দূরত্ব মুছে ফেলতে প্রচারের কৌশলই বদলে ফেলেছেন খড়দহ বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিএমের জোট প্রার্থী অসীম দাশগুপ্ত।
যিনি পাঁচ বার এই কেন্দ্র থেকে জেতার পরে ২০১১ সালে হেরে যান সদ্য রাজনীতিতে পা রাখা অমিত মিত্রের কাছে।

বড় হোর্ডিং নেই বললেই চলে। দলীয় পতাকা-ফেস্টুনও তেমন নেই। পোস্টারও কম। শাসক দলের প্রার্থী অমিতবাবুর তুলনায় নেহাতই নগণ্য প্রচারের আয়োজন। ট্রেডমার্ক সাদা শার্ট-ট্রাউজার্স পরে সকাল থেকেই বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছেন অসীমবাবু। বড় মিছিল নয়। জনা ষাটেক কর্মী-সমর্থক নিয়ে প্রত্যেক বাড়ির দরজায় দাঁড়াচ্ছেন তিনি। স্মিত হেসে বলছেন, ‘‘সকাল সকাল ভোট দেবেন।’’

শুধুই ভোট দেওয়ার কথা? কাস্তে হাতুড়ি তারা চিহ্নে ভোট দিতে বললেন না কেন? বেলা ১১টার গনগনে রোদে খড়দহ পুরসভার কুলিনপাড়ায় হাঁটতে হাঁটতে বললেন, ‘‘ভোটটা দিতে পারাই সব চেয়ে জরুরি। স্বতঃস্ফূর্ত ভোট হলে জিত আমাদেরই হবে।’’

আর খড়দহের ২২৯টা বুথে এই স্বতঃস্ফূর্ত ভোট করানোটাই এখন জোটের প্রধান চ্যালেঞ্জ।

বিশেষ করে এই কেন্দ্রের অন্তর্গত গ্রামাঞ্চলে। বান্দিপুর, পাটুলিয়া এবং বিলকান্দা এক ও দুই পঞ্চায়েত এলাকায় বামেদের যে কার্যত কোনও সংগঠন নেই, তা স্বীকার করে নিয়েছেন অসীমবাবুও। সমস্যা এতটাই যে, বিলকান্দায় বুথে এজেন্ট দিতে পারা যাবে কি না, তা নিয়েও সংশয়ে বামেরা। চোলাই মদ তৈরির জন্য বিলকান্দা বরাবর কুখ্যাত। শাসকদলের হাত ধরে এই বেআইনি ব্যবসার রমরমা গত পাঁচ বছরে আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই টাকা ছড়িয়েই শাসকদল এই অঞ্চলে দলের আধিপত্য ধরে রেখেছে।

খড়দহের শহরাঞ্চলের ছবিটা অবশ্য গ্রামাঞ্চলের থেকে একেবারেই আলাদা। কলকাতা-সহ রাজ্যের বাকি শহরাঞ্চল জুড়ে যে প্রশ্ন উঠে আসছে, সেই একই প্রশ্ন এখানেও। বিটি রোডের দু’ধার ধরে বন্ধ কলকারখানা নিয়ে প্রশ্ন। বন্ধ কারখানার জমিতে গজিয়ে ওঠা বহুতল নিয়ে প্রশ্ন। খড়দহের হিন্দুস্থান হেভি কেমিক্যালস, ক্যালসিল, ইস্যাব, ইলেকট্রোস্টিলের মতো কারখানা এক সময় রুজি-রুটির প্রাণকেন্দ্র ছিল। শুধু স্থানীয়দের জন্য নয়, ভিন্ রাজ্য থেকে কাজ খুঁজতে আসা মানুষের জন্যও। একে একে সব বন্ধ হয়েছে। এই তালিকায় একমাত্র ইলেকট্রোস্টিল টিকে রয়েছে।

পরিবর্তনের আশায় তৃণমূলকে ভোট দিয়েছিলেন সুকান্ত দে। আশা ছিল কলকারখানা খুলবে। মিলবে চাকরি। মধ্য তিরিশের এই যুবক বললেন, ‘‘অমিতবাবু গত নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ক্ষমতায় এলে হিন্দুস্থান হেভি কেমিক্যালস খুলবে। আজ পর্যন্ত কোনও চেষ্টা হয়নি। তা হলে কোথায় পরিবর্তন হল?’’ সুকান্তবাবুর মতো আশাভঙ্গ হয়েছে রহড়ার বাসিন্দা রবীন দাসেরও। পাকা চাকরির আশায় ২৫ বছরের পুরনো বিধায়কের বদলে বেছে নিয়েছিলেন অমিতবাবুকে। অমিতবাবু শিল্পমন্ত্রী হওয়ার পরে সেই আশা অনেকটাই বেড়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে বলে তাঁর অভিযোগ। সংস্থার নাম না করে তিনি জানান, তৃণমূলের প্রচুর সমর্থককে চাকরি দেওয়ার চাপে অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা বাড়াতে বাধ্য হয়েছে সংস্থা। কিন্তু কাজ সেই পরিমাণে না থাকায় আগে যে কর্মী ৩০ দিন কাজ পেতেন, এখন তিনি ১৫ দিন কাজ পান!

খড়দহে এই স্বপ্নভঙ্গকে পুঁজি করেই এগোচ্ছে বামেরা। দেওয়াল লিখন ও পোস্টারে শাসকদলের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারছে না তারা। কিন্তু ছোট ছোট পথসভায় এ সব প্রশ্নই তুলে আনছে সিপিএম। অসীমবাবুর দাবি, কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধার বরাবর ১০০রও বেশি ছোট-মাঝারি সংস্থা তৈরি হয়েছিল বাম আমলে। অভিযোগ, তার ৫০ শতাংশই বন্ধ হয়ে গিয়েছে মূলত তোলাবাজির কারণে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, শাসকদলের মধ্যেও এই তোলাবাজি ঘিরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলর বনাম অমিতবাবুর ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলর দ্বন্দ্ব ভোটেও প্রকাশ্যে এসে পড়ছে। যে দ্বন্দ্ব গত বিধানসভা নির্বাচনে ২৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে হার এবং ২০১৪ সালে পুরসভা হাতছাড়া হওয়ার পরেও বামেদের মনে আশা জাগাচ্ছে।

ভোটের ময়দানে আলোচিত বিষয় বা বিরোধীদের অভিযোগের উত্তর— কোনওটাই অমিতবাবুর কাছে পাওয়া গেল না। খড়দহের অরুণাচল মোড়ের কাছে যে বাড়িতে তিনি ভোটের জন্য থাকছেন, সেখানে যাওয়ার পরে প্রথমে দেখা করতেই রাজি হননি। বারবার অনুরোধের পরে দেখা মিললেও
কোনও বিষয়েই কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। শুধু বলেন, ‘‘আজ মুখ্যমন্ত্রী জনসভা করতে আসছেন এখানে। উনিই যা বলার, বলবেন।’’

মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা অমিতবাবুকে যতটা স্বস্তি দিয়েছে, ততটাই বামেদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। এক বাম কর্মীর সহজ হিসেব, ‘‘জিত নিশ্চিত থাকলে খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে প্রচারে আসতে হয়?’’

assembly election 2016 asim dasgupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy