Advertisement
E-Paper

ফিরছে সাহস, অন্য চেহারা সিপিএমের

টক্কর দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। কোথাও মারের বদলা মার তো, কোথাও আস্তিনের তাস লুকিয়ে রেখে চুপচাপ হয়ে তৃণমূলের ঘরে সিঁদ কাটা!

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:১৫

টক্কর দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। কোথাও মারের বদলা মার তো, কোথাও আস্তিনের তাস লুকিয়ে রেখে চুপচাপ হয়ে তৃণমূলের ঘরে সিঁদ কাটা!

আর সেই কারণেই বর্ধমানে এসে সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেছেন, “মানুষ মেজাজে ফিরছে।”
এই সেই সিপিএম, গত পুরনির্বাচনের দিন বর্ধমান শহর থেকে যারা প্রার্থী তুলে নিয়েছিল তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসে’র অভিযোগ তুলে। একদা ‘দুর্জয় ঘাঁটি’ তাসের ঘরের মতো ভেঙে গিয়েছিল বলেই বর্ধমান শহরে তৃণমূলকে ওয়াকওভার দিয়েছিল তারা। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কথা। ওই পুরভোটের পরে বর্ধমানে সিপিএমের কোমরটাই কার্যত ভেঙে গিয়েছিল। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও সুবিধা করতে পারেনি তারা। বর্ধমান গ্রামীণের দু’টি লোকসভার অন্তর্গত সব ক’টি বিধানসভা কেন্দ্রেই সিপিএম পিছিয়ে ছিল। সিপিএমের নেতা-কর্মীরাই জানাচ্ছেন, গত বিধানসভা ভোটের পর থেকে জেলার বিভিন্ন জায়গায় লাল পতাকা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। দলীয় দফতরগুলি খোলার ব্যাপারেও জেলা নেতাদের সে রকম উৎসাহ ছিল না। পুরভোট চলাকালীন জেলা নেতৃত্বের ওই সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তকে ভাল চোখে নেননি সিপিএমের উচ্চ নেতৃত্ব। দলের রাজ্য কমিটিও তাদের রিপোর্টে লিখিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছিল, বর্ধমানের ওই সিদ্ধান্তকে আলিমুদ্দিন অনুমোদন করছে না।
বর্ধমানের পুরভোটে ওয়াকওভার দেওয়ার পিছনে বামেদের সাংগঠনিক দুর্বলতাই বড় কারণ বলে দলের নেতাদের একাংশ মনে করেন। কিন্তু বিধানসভা ভোটের সময় সেই ‘দুঃস্বপ্ন’কে পিছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে সিপিএম। পাল্টা লড়াই আসলে শুরু হয়েছে গত বছর পুজোর পর থেকেই। সেই সময় সিপিএম গ্রামে গ্রামে জাঠা বার করেছিল। যাতে সাড়া মিলেছিল বিপুল। সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের কথায়, “তৃণমূল তো বুঝতেই পারেনি জাঠাটা কী? খায় না, মাথায় মাখে! যখন বুঝতে পারল, তত দিনে তৃণমূলের ঘরে সিঁদ কাটা হয়ে গিয়েছে। দলের কর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসটা ফিরে এসেছে।’’
এ সবের জেরেই এ বার বিধানসভা ভোটের সময়ে সরাসরি তৃণমূলের চোখে চোখ রেখে কথা বলার আত্মবিশ্বাস খুঁজে পেয়েছে সিপিএম। তৃণমূল মারলে সিপিএমও পাল্টা প্রতিরোধ শুরু করেছে। তৃণমূল দেওয়াল মুছলে সিপিএমও দেওয়ালে কালি লাগিয়ে দিচ্ছে। এমনকী, প্রশাসনের কর্তাদেরও হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন সিপিএমের নেতারা। বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ যে জন্য বলছেন, “যতই লাল চোখ দেখাক সিপিএম, মানুষ কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এর জবাব দেবেই।”
প্রশাসনের কর্তারাই জানাচ্ছেন, মাসখানেক আগেও বর্ধমানের ভাতার, মঙ্গলকোট থেকে রায়না বিধানসভা এলাকায় লাল পতাকা দূরবীন দিয়ে দেখতে হতো। এখন সেখানে সিপিএম প্রতিরোধ করার রাস্তায় যাচ্ছে। কয়েক দিন আগে সিপিএমের মিছিলে পা মেলানোয় মঙ্গলকোটের আঁতকুল গ্রামে পরিস্রুত পানীয় জল নিতে সিপিএমের ৪০টি পরিবারকে ‘নিষেধ’ করেছিল তৃণমূল। সেই নিষেধকে উপেক্ষা করতেই তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হয় সিপিএম। পাল্টা মার দেয় সিপিএমও। ওই ঘটনার পর গোটা এলাকায় সিপিএম তাণ্ডব চালিয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছিল তৃণমূল। কয়েক দিন আগে আউশগ্রামের বাহাদুরপুরে পতাকা লাগানো নিয়ে বচসার জেরে তৃণমূলের সশস্ত্র লোকজন সিপিএমের উপরে আক্রমণ করে। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে সিপিএম পাল্টা হামলা চালায়। খণ্ডঘোষে তৃণমূল-পুলিশের ‘অত্যাচারে’র অভিযোগ তুলে ঝাটা-বঁটি হাতে রাস্তায় নেমেছিলেন মহিলারা। পুলিশ সূত্রেই বলা হচ্ছে, বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে (যা আদতে বর্ধমান পুর এলাকা) দেওয়াল মোছায় সিপিএম-তৃণমূল সমানে-সমানে রয়েছে!
বর্ধমান জেলা প্রশাসনের এক কর্তার বক্তব্য, “সিপিএমের যে নেতারা গলার স্বর নামিয়ে কথা বলতেন, তাঁরাই এখন আমাদের চোখ রাঙিয়ে বুঝে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। পুলিশ আধিকারিকদেরও ‘নিরপেক্ষ’ থাকতে বলছেন।” দিনকয়েক আগে বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের কাছে দাবিপত্র দিতে গিয়ে বর্ধমান দক্ষিণের সিপিএম প্রার্থী আইনুল হক সরাসরি তাঁকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে অভিযোগ করেন। সিপিএমের কৃষক সভার রাজ্য সভাপতি তথা বর্ধমান জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অমল হালদার বলেন, “টের পাওয়া যাচ্ছে, হাওয়া বদলাচ্ছে। আর তার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরোধের মানসিকতা গড়ে উঠছে।”
দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলছেন, ‘‘বীরভূমে গুলি, বোমা, গুড়-বাতাসা এ বার সে ভাবে কাজ করেনি। বর্ধমান-সহ অন্যান্য জেলাতেও একই ভাবে মানুষ নিজেরা ভোট দিতে বেরোবেন। আর মানুষের সাড়া মিললে দলের চেহারাও অন্য রকম থাকে!’’
এই ‘অন্য রকম চেহারা’রই পরীক্ষা হবে বৃহস্পতিবারের ভোটে!

assembly election 2016 CPM Courage
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy