Advertisement
E-Paper

লাল গড় তছনছ, কারণ খুঁজছে জোট

The average messed up red, the coalition is seekingএকদা লালদুর্গ থেকে মুছে গেল লাল। আসন জেতা তো দূরের কথা, রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় ফের ‘আইসিইউ’-তে বামেরা। পরিবর্তনের প্রবল ঝড়েও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ৯টি আসন বামেদের দখলে ছিল। পরে অবশ্য এক বাম বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দেন। এ বার জোটের আবহে জেলায় ভাল ফলের আশা করেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বাম নেতারা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০১:৪৪
হারের পরে। বৃহস্পতিবার আলিমুদ্দিনে রাজ্য দফতরে সূর্যকান্ত মিশ্র। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

হারের পরে। বৃহস্পতিবার আলিমুদ্দিনে রাজ্য দফতরে সূর্যকান্ত মিশ্র। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

একদা লালদুর্গ থেকে মুছে গেল লাল।

আসন জেতা তো দূরের কথা, রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় ফের ‘আইসিইউ’-তে বামেরা।

পরিবর্তনের প্রবল ঝড়েও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ৯টি আসন বামেদের দখলে ছিল। পরে অবশ্য এক বাম বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দেন। এ বার জোটের আবহে জেলায় ভাল ফলের আশা করেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বাম নেতারা।

সিপিএমের এক সূত্রে খবর, জেলায় অন্তত ৬টি আসনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিল লাল শিবির। এমনকী জোটের সেনাপতি নারায়ণগড়ের বাম প্রার্থী সূর্যকান্ত মিশ্রও জিতবেন বলে আশা ছিল। যদিও জেলায় জোটের শিবঘরের সলতে শুধু সবং। সূর্যকান্তবাবুও তৃণমূল প্রার্থী প্রদ্যোত ঘোষের কাছে পরাজিত হন। জেলায় খাতাই খুলতে পারল না সিপিএ ম।

পরিস্থিতি দেখে দলের এক শীর্ষ নেতার স্বীকারোক্তি, “মানুষ তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন।” অন্য এক নেতার কথায়, “আগামী পাঁচ বছর তৃণমূল রাজ্য শাসন করবে। শাসক দলের ইতিবাচক পদক্ষেপকে বামেরা সমর্থন করবে। তবে নেতিবাচক পদক্ষেপ হলে নিশ্চয়ই বিরোধিতা হবে।” কিন্তু এমন পরাজয়ের ব্যাখ্যা কী? জেলা সিপিএমের ওই শীর্ষ নেতার বক্তব্য, “বুথ ভিত্তিক পর্যালোচনা হবে। তখন ব্যাখ্যা মিলবে। সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হবে!”

যদিও অন্য এক নেতা মানছেন, “দলের বক্তব্য মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়নি। যাঁরা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, তাঁদের সকলকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। এই নির্বাচনে আমরা মানুষের মন বুঝতে পারিনি। এমন ফলাফল সত্যিই অপ্রত্যাশিত।”

দল তো জয় পেয়েছেই। খড়্গপুর গ্রামীণ কেন্দ্র থেকে জিতেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়। দল ফের ক্ষমতায় আসায় মানুষের প্রতি বিশ্বাসের কথাই বলছেন দীনেনবাবু। তিনি বলছেন, ‘‘মানুষের উপর আমাদের বিশ্বাস ছিল। মানুষ দু’হাত তুলে আমাদের ভোট দিয়েছেন। সিপিএমের কুৎসা- অপপ্রচারের জবাব ব্যালটে দিয়েছেন।” এত বড় জয়ে দায়িত্ব কী আরও বেড়ে গেল না? দীনেনবাবুর মন্তব্য, “অবশ্যই বাড়ল। আমাদের সকলকে আরও ভাল ভাবে কাজ করতে হবে।”

শাসক দলের অন্য এক নেতা বলছেন, “মনে রাখতে হবে, মানুষ আমাদের দিকে আরও বেশি নজর রাখবেন।” পাশের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেই পরিবর্তনের হাওয়ায় এলোমেলো হয়ে যায় সিপিএম। পশ্চিমের ‘লালদুর্গে’ অবশ্য সেদিন ফাটল ধরেছিল সামান্যই। পরিস্থিতির খানিক বদল হয় ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে। পালাবদলের ছোঁয়া লাগে জেলায়। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পরিবর্তনের সেই বৃত্তটা সম্পূর্ণ হয়।

জয়োল্লাস। মেদিনীপুরে।

শাসকদলের এক নেতার কথায়, দলের লক্ষ্যই ছিল, লোকসভার আগে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত দখল করে পশ্চিমে পরিবর্তন পরিপূর্ণ করা। আর সিপিএমের লক্ষ্য ছিল, বিভিন্ন এলাকায় সংগঠনের নড়ে যাওয়া ভিত ফের মজবুত করা। যাতে লোকসভা ভোটের আগে দল কিছুটা ভাল জায়গায় থাকে। তবে লক্ষ্যপূরণে সিপিএমকে টেক্কা দেয় তৃণমূলই। বামেদের রক্তক্ষরণ অব্যাহত ছিল গত লোকসভাতেও। এ বারও সিপিএমকে অনেক পিছনে ফেলল শাসকদল।

নির্বাচনের পর দলীয় স্তরে প্রাথমিক যে পর্যালোচনা হয়েছিল, তাতে উঠে এসেছিল, ঝাড়গ্রাম এবং মেদিনীপুরে জোটের ফল ততটা ভাল না হলেও খড়্গপুর মহকুমায় জোটের ফল ভাল হবে। সবমিলিয়ে অন্তত পাঁচ- ছ’টি আসনে দলের প্রার্থীরা জিতবেন। কিন্তু, ভোটের ফল বলছে, জেলায় সিপিএমকে এখন দূরবীন দিয়ে খোঁজার মতো অবস্থা। হা়ড্ডাহাড্ডি লড়াইটাও হয়নি অনেক কেন্দ্রে। বরং শাসকদলের প্রার্থীরা বড় ব্যবধানেই জয়ী হয়েছেন। কোথাও ৩০ হাজার, কোথাও ৬০ হাজার, কোথাও বা ১ লক্ষ! ডেবরার মতো কয়েকটি আসনে বিরোধী ভোট এক জায়গায় এলে শাসকের চিন্তা থাকত। ডেবরায় তৃণমূল যেখানে ১২ হাজার ভোটে জিতেছে, সেখানে বিজেপি পেয়েছে ১৫ হাজার ভোট।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হয়েছে। তবে মানুষ বিভ্রান্ত হননি।” উন্নয়নকে সামনে রেখেই যে তৃণমূল এ বার ভোটে গিয়েছিল, আর তার ফলও মিলেছে বলেই
মত দীনেনবাবুর।

(ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল)

assembly election 2016 CPM TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy