Advertisement
১৯ মে ২০২৪

ঠা ঠা রোদে সভা অধীরের, আরও বলুন, দাবি জনতার

ভাষণ শেষ করে তিনি মঞ্চ থেকে নামার তোড়জোড় করছিলেন। শ্রোতারা আওয়াজ তুললেন, থামবেন না। আরও বলুন।

জয়পুরের সভায় অধীর চৌধুরী। — নিজস্ব চিত্র।

জয়পুরের সভায় অধীর চৌধুরী। — নিজস্ব চিত্র।

নুরুল আবসার
জয়পুর শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৫৬
Share: Save:

ভাষণ শেষ করে তিনি মঞ্চ থেকে নামার তোড়জোড় করছিলেন।

শ্রোতারা আওয়াজ তুললেন, থামবেন না। আরও বলুন।

চমকে গিয়েছিলেন বক্তা।

বৈশাখের চাঁদিফাটা রোদ মাথায় নিয়ে নির্বাচনী সভা! বক্তা তড়িঘড়ি বক্তব্য শেষ করলেন। কিন্তু শ্রোতারা নাছোড়!

নরেন্দ্র মোদী নন, সনিয়া বা রাহুল গাঁধী নন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নন। নন কোনও তারকা-বক্তাও। বুধবার হাওড়ার জয়পুরে ওই নির্বাচনী সভায় যিনি বক্তব্য পেশ করছিলেন, সুবক্তা হিসেবেও তাঁর বিশেষ খ্যাতি নেই। তা সত্ত্বেও তাঁর কথা শুনতে যা ভিড় দেখা গেল, তা টেক্কা দেওয়ার জায়গায় চলে গেল মঙ্গলবারের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাকে!

তিনি কে? প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।

জয়পুরের সেহাগড়ি ফুটবল মাঠে আমতার কংগ্রেস প্রার্থী অসিত মিত্রের সমর্থনে ওই সভা শুরু হয় বেলা ৩টে থেকে। আড়াইটে পর্যন্ত মাঠ ছিল প্রায় ফাঁকা। তার কিছু পর থেকেই ভ্যানো, ট্রেকার এবং ছোট গাড়িতে কর্মী-সমর্থকেরা আসতে শুরু
করেন। আধ ঘণ্টার মধ্যে পুরো মাঠ ভরে যায়। বহু সিপিএম কর্মী-সমর্থকও হাজির হন। কংগ্রেসের দাবি, প্রায় ১২ হাজার মানুষ এসেছিলেন। আগের দিন এই জয়পুরেরই অন্য মাঠে দলীয় প্রার্থী তুষার শীলের সমর্থনে জনসভা করেছিলেন মমতা। জেলার নানা প্রান্ত থেকে এসেছিলেন কর্মী-সমর্থকেরা। ওই সভাতেও প্রায় ১২ হাজার মানুষ ভিড় করেন বলে পুলিশ জানিয়েছিল। কিন্তু বুধবার অধীরবাবুর সভায় বাইরে থেকে তেমন কর্মী-সমর্থক আসেননি। শ্রোতারা মূলত জয়পুর থানা এলাকারই বাসিন্দা। তাতেই যে প্রবল উৎসাহ দেখা গিয়েছে, তাতে হাসি ফুটেছে অধীর-সহ কংগ্রেস নেতাদের মুখে।

এ দিন মূলত নারদ-কাণ্ড নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীকে বেঁধেন অধীর। শুরু থেকে এ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর বারবার অবস্থান বদল নিয়ে সমালোচনা করেন তিনি। এমনকী, মমতা যে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন, তা নিয়ে অধীরের কটাক্ষ, ‘‘চোরদের ধরার জন্য চোরদের দিয়ে কমিটি গড়তে চাইছেন দিদি!’’

জেলায় আরও সভা থাকায় এবং আজ, বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদে ভোট থাকায় অধীর দ্রুত বক্তব্য শেষ করতেই দর্শকাসন থেকে আসে ওই অনুরোধ, ‘‘আরও বলুন!’’ অধীর থমকান। ফের মাইক হাতে বলেন, ‘‘দিকে দিকে জনজোয়ার। বাংলা থেকে চোর তাড়াতে হবে।’’

জয়পুরে আসার আগে অধীরবাবু উলুবেড়িয়া উত্তরকেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী অমিয় মণ্ডলের সমর্থনে কাটরা এবং তার আগে উদয়নারায়ণপুরে যান দলীয় প্রার্থী সরোজ কাঁড়ারের সমর্থনে সভা করতে। এই দু’জায়গাতেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। শেষ জনসভা ছিল শ্যামপুরের বারগ্রামে। কিন্তু হেলিকপ্টার দিকনির্ণয় করতে না পারায় অধীরবাবু আসতে পারেননি। এখানেও কয়েক হাজার মানুষ অপেক্ষা করছিলেন বলে জানান প্রার্থী অমিতাভ চক্রবর্তী।

আমতা কেন্দ্র গতবার কংগ্রেসের দখলেই ছিল। কিন্তু বাকি তিন কেন্দ্র তো তৃণমূলের দখলে ছিল! সেখানেও ভিড় হওয়ায় বাড়তি অক্সিজেন পেয়ে গিয়েছে বিরোধী জোট। কংগ্রেসের দাবি, মানুষ যে তৃণমূলের থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন, এ দিনের চার জায়গায় ভিড় সেটাই প্রমাণ করছে। তৃণমূল অবশ্য এই ভিড়কে গুরুত্ব দিতে নারাজ। দলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) পুলক রায়ের দাবি, ‘‘একটা অশুভ জোট হয়েছে। সেটা দেখার জন্য ভিড় হতে পারে। মানুষ তো সার্কাস, মেলা কত কিছু দেখতেই ভিড় জমান! এই ভিড় কিছু প্রমাণ করে না।’’

যা শুনে বিরোধী জোটের এক নেতার কটাক্ষ, ওরা যে ভয় পেয়েছে, তা ওদের কথাতেই ফুটে উঠছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE