Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী, বাইরে জটলা, এ কেমন ভোট লালগড়ে!

বিরোধী বলতে কার্যত কিছুই নেই। বুথের পর বুথ বিরোধীদের পোলিং এজেন্ট বলতেও বিশেষ কাউকে চোখে পড়ছে না। কয়েকটি বুথে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন গোষ্ঠী)-র এজেন্ট চোখে পড়লেও তা বোধহয় বিন্দুতে সিন্ধু। বামফ্রন্টের জমানায় এই লালগড়ে সিপিএমের যে দাপট দেখা যেত, শাসক দল হিসেবে তাদের কথাই যে ভাবে শেষ কথা বলে বিবেচিত হত, এ বারে তা-ও উধাও। সেই দাপট তো দূরের কথা, সিপিএম-কেই প্রায় চোখে দেখা যাচ্ছে না।

রাস্তার পাশে জটলা।—নিজস্ব চিত্র।

রাস্তার পাশে জটলা।—নিজস্ব চিত্র।

সুনন্দ ঘোষ
লালগড় শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৬ ১৬:১১
Share: Save:

বিরোধী বলতে কার্যত কিছুই নেই। বুথের পর বুথ বিরোধীদের পোলিং এজেন্ট বলতেও বিশেষ কাউকে চোখে পড়ছে না। কয়েকটি বুথে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন গোষ্ঠী)-র এজেন্ট চোখে পড়লেও তা বোধহয় বিন্দুতে সিন্ধু। বামফ্রন্টের জমানায় এই লালগড়ে সিপিএমের যে দাপট দেখা যেত, শাসক দল হিসেবে তাদের কথাই যে ভাবে শেষ কথা বলে বিবেচিত হত, এ বারে তা-ও উধাও। সেই দাপট তো দূরের কথা, সিপিএম-কেই প্রায় চোখে দেখা যাচ্ছে না।

ইতিমধ্যেই নানা অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে বিরোধীদের তরফ থেকে। বিরোধী ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয় দেখানো, তাঁদের বলে দেওয়া, এলাকায় থাকতে গেলে জোটের প্রার্থী বা বিরোধী দলকে ভোট দেওয়া চলবে না। সকাল থেকে লালগড়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী স্রেফ বুথের মধ্যেই আটকে। অথচ, বুথের ঠিক বাইরেই ৮-১০ জন, কোথাও ৩৫-৪০ জন, কোথাও আবার ১৫-২০ জনের জটলা চোখে পড়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সে কথা জানানোর পরে উত্তর এসেছে, জটলা সরানোর দায়িত্ব তাদের নয়, রাজ্য পুলিশের।

অথচ, গ্রামের দোতলা বাড়ির ছাদে ট্রাইপড দিয়ে তার উপরে লাইট মেশিনগান বসিয়ে পাহারায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। ওখানে পাহারা বসিয়ে ঠিক কী হবে তা তাঁরাই বলতে পারবেন, কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, বুথের মধ্যে না হলেও ভোটটা যে কার্যত বুথের বাইরেই হয়ে যাচ্ছে, তা ঠেকাতে কার্যকরী কোনও ভূমিকা নিতে দেখা যাচ্ছে না কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আরও একটি তথ্যও এখানে উঠে আসছে। গত পাঁচ-ছ’বছর ধরে সিআরপিএফের যে ১৫ কোম্পানি বাহিনী পশ্চিম মেদিনীপুরে আছে, তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশই বাঙালি। কারণ, এই কেন্দ্রীয় বাহিনীর পোস্টিংয়ের নীতি অনুযায়ী, বেশির ভাগ জওয়ানকেই তাঁদের ‘হোম স্টেট’-এ পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, অনেক জওয়ানের সঙ্গেই স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠেছে। ফলে, ভোটের সময় প্রয়োজনে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা বাহিনীর পক্ষে বেশ অস্বস্তিকর।

এরই পাশাপাশি, ভোটারদের প্রভাবিত করতে এলাকার অনেক জায়গায় রবিবার রাতে শাসক দল মাংস-ভাত খাইয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। কোনও কোনও জায়গায় এই ভোজে সিআরপিএফ জওয়ানদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বলেও অভিযোগ। এত রকম অভিযোগ জানালেও নিজেদের পরিচয় বা নাম বলতে রাজি নন স্থানীয় বিরোধী নেতা বা সমর্থকেরা। তাঁদের বক্তব্য, এখানেই তো থাকতে হবে, নাম বললে শাসক দলের রোষানলে পড়ার ঝুঁকি কে-ই বা নেয়!

কয়েক বছর আগেও লালগড় কার্যত মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছিল। সেই লালগড়েরই অনেক জায়গায় এখন শাসক দলের হয়ে গড় সামলাচ্ছেন একদা মাওবাদী নেতারা। সশস্ত্র বিপ্লবের লাইন ছেড়ে তাঁরা এখন সমাজের মূলস্রোতে ফিরেছেন। শাসক দলের নেতারা তাঁদের প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে জানিয়েছেন, স্রোতের বাইরে হাঁটতে গেলে তাঁদের এলাকাছাড়া হতে হবে। অতএব, অস্তিত্বরক্ষার স্বাভাবিক নিয়ম মেনে তাঁরা আক্ষরিক অর্থেই ‘মূলস্রোত’-এ নিজেদের ভাসিয়ে দিয়েছেন।

সোমবার সকাল থেকে লালগড় যে ভোট দেখছে, তা আসলে ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 junglemahal Sunanda Ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE