Advertisement
০৭ মে ২০২৪

দিদিই এনে দিলেন জয়, লড়াই শেষে মত সুব্রতের

ব্যাপক বিরোধী প্রচার ছিল। ছিল বিক্ষুব্ধদের দাপট। কিন্তু তারপরেও সাগরদিঘিতে নিজের জয় কার্যত ছিনিয়ে আনলেন তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত সাহা। সাগরদিঘিতে সুব্রতবাবু মনোনয়ন পেলেও তাঁর জয় নিয়ে ভোটের আগে প্রকাশ্য সভায় দাঁড়িয়ে নিজেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

জয়ের আনন্দ। বহরমপুরে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

জয়ের আনন্দ। বহরমপুরে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

বিমান হাজরা
সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০১:২৭
Share: Save:

ব্যাপক বিরোধী প্রচার ছিল। ছিল বিক্ষুব্ধদের দাপট। কিন্তু তারপরেও সাগরদিঘিতে নিজের জয় কার্যত ছিনিয়ে আনলেন তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত সাহা।

সাগরদিঘিতে সুব্রতবাবু মনোনয়ন পেলেও তাঁর জয় নিয়ে ভোটের আগে প্রকাশ্য সভায় দাঁড়িয়ে নিজেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলনেত্রীর সেই নির্বাচনী জনসভায় জমায়েত দেখে ভ্রু কুঁচকেছিলেন দলেরই অনেক নেতা। তবু সেই চ্যালেঞ্জের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত ৫২১৪ ভোটে কংগ্রেস প্রার্থী আমিনুল ইসলামকে হারিয়ে শেষ হাসি হাসলেন সুব্রতই।

কংগ্রেস, সিপিএম ও নিজের দলের বিভীষণদের বিরুদ্ধে লড়াই এ বার সুব্রতবাবুর কাছে যথেষ্টই কঠিন ছিল। সিপিএম ও কংগ্রেসের জোট হলে সুব্রতবাবুকে আটকানো যেত— বিরোধীদের এই যুক্তি এখন অবান্তর। কারণ সুব্রতের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো দলের বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থীও ৩১৯২০ টি ভোট টেনে সুব্রতবাবুর লড়াইকে আরও কঠিন করে দিয়েছিল। সেই লড়াইয়ে সুব্রতবাবুর এই জয় নিঃসন্দেহে মুর্শিদাবাদের রাজনীতিতে তো বটেই, তৃণমূলের কাছেও বড় চমক বইকি! সুব্রতবাবু বলছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিশ্বাস করেছেন সাগরদিঘির মানুষ। ভরসা করেছেন তাঁর আশ্বাসের উপর। অভাবিত জয়ের কারণ সেটাই।”

সুব্রতবাবু যাই বলুন, সাগরদিঘি বলছে অন্য কথা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সুব্রতবাবুর হারা বাজি এ ভাবে জিতলেন তাঁর জনসংযোগ দিয়ে। সাগরদিঘির এমন কোনও গ্রাম নেই যেখানে গত ৫ বছরে সুব্রতবাবু যাননি। যে কোনও অনুষ্ঠানে ডাক পেলেই তিনি সেখানে গিয়েছেন। তাঁর কট্টর বিরোধীরাও তাঁর এই ব্যবহারের প্রশংসা করেন। তাছাড়া এলাকার রাস্তাঘাট থেকে নিকাশি নালারও উন্নতি করেছেন সুব্রতবাবু। এ বারের ভোটে তার সুফলও পেয়েছেন সুব্রতবাবু।

জঙ্গিপুর গণনাকেন্দ্রে সুব্রত সাহা ও মইনুল হক। —নিজস্ব চিত্র

গত তিন চার বছরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বার বার প্রকাশ্যে এসেছে। বিক্ষুব্ধদের সেই আচরণকে সাগরদিঘির মানুষ ভাল ভাবে মেনে নিতে পারেননি। তাদের নিত্যদিনের বিক্ষোভ, পঞ্চায়েতে অচলাবস্থা, মন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়ানোর মতো ঘটনাতে সাধারণ মানুষ তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন। সুব্রতবাবু সেই সব ঘটনাকেই ভোটের আগে বার বার তুলে ধরে গ্রামে গ্রামে গিয়ে সভা করেছেন। আর এ ভাবেই সাধারণ মানুষকে তিনি আরও কাছে টানতে পেরেছেন বলে দাবি করছেন সুব্রতবাবুর অনুগামীরা।

সাগরদিঘি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মতিউর রহমান বলছেন, “সুব্রতবাবুর জনসংযোগ ও উন্নয়নের কাজ সাগরদিঘির মানুষকে প্রভাবিত করেছে। তাই বিরুদ্ধ প্রচারকে তাঁরা গুরুত্ব দেননি। সাগরদিঘিতে সুব্রতবাবুর প্রত্যাবর্তনের চাবিকাঠি সেটাই।” বিরোধী প্রার্থী কংগ্রেসের আমিনুল ইসলাম ও সিপিএমের রজব আলি মল্লিক দু’জনেই অবশ্য সুব্রতবাবুর এই জয়কে সাফল্য বলতে রাজি নন। কংগ্রেসের আমিনুল ইসলাম বলছেন, “গত লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী দুই দলেরই ভোট ছিল ৪৩ হাজার করে। এ বার কংগ্রেস ও সিপিএম দুই দলেরই ভোট কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার। অন্যদিকে লোকসভায় পাওয়া তৃণমূলের ৪৫ হাজার ভোট অক্ষত রয়েছে। তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ প্রার্থী বিরোধীদের ঘরের ভোট কাটলেও তৃণমূলের নিজেদের ভোটে সে ভাবে থাবা বসাতে পারেনি।’’ সিপিএমের প্রার্থী রজব আলি মল্লিক বলছেন, “ভোটের আগে শেষ দু’দিন কিছু এলাকায় অর্থ ছড়িয়ে কার্যত ভোট খরিদ করা হয়েছে। তৃণমূলের জয়ের কারণ সেটাই।”

এ দিন সুব্রতবাবু জয়ের খবর পেয়েই দুপুরের দিকে আসেন গণনা কেন্দ্রে। ঢোকার মুখেই দেখা ফরাক্কার কংগ্রেস প্রার্থী মইনুল হকের সঙ্গে। এ বারেও মইনুল জিতেছেন ২৭৭০১ ভোটে। দু’জনে হাত মেলাতেই সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা ছবি তুলতে শুরু করেন। যা দেখে মইনুলের টিপ্পনি, ‘‘সুব্রতের সঙ্গে আমার অত ছবি তুলবেন না। তাহলে হয়তো ওঁর আর মন্ত্রী হওয়াই হবে না।” অন্যদের সঙ্গে হেসে ওঠেন দুই প্রার্থীও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 TMC CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE