Advertisement
E-Paper

ক্রিজে আছেন, ব্যাটিং অর্ডার নেমেছে দাদার

চোখের দেখায় একই রকম আছে অনেকটা। কিন্তু অন্দর মহলে নিঃশব্দে বদলে গিয়েছে অনেক কিছু!

সঞ্জয় সিংহ

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৬ ০৪:২৯

চোখের দেখায় একই রকম আছে অনেকটা। কিন্তু অন্দর মহলে নিঃশব্দে বদলে গিয়েছে অনেক কিছু!

আগের মতোই তৃণমূল ভবনের ‘ওয়ার রুমে’ বসছেন। আগের মতোই সামনে চালু চার-চারটে টিভি সেট। আগের মতোই একাধিক মোবাইলে কখনও ধরছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের বিপ্লব মিত্রকে, কখনও উত্তর দিনাজপুরের অমল আচার্যকে, কখনও বা মালদহের লেবুবাবুকে। কখনও আবার বিশ্বস্ত ছাত্র-নেতা সুজিত শ্যামকে নির্দেশ দিচ্ছেন আলিপুরদুয়ারের সৌরভ চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা বলতে, কখনও সহকর্মী অর্ক মণ্ডলকে বলছেন ভোটের শতাংশ ল্যাপটপে দেখে জানাতে। আগের মতোই ভোটের দিনে ব্যস্ত তিনি।

কিন্তু ওই পর্যন্তই! মুকুল আর সে মুকুল নাই!

দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দূরত্ব ঘুচিয়ে আগের মতো বৃত্তে ফেরার চেষ্টা করলেও একদা তৃণমূলের অঘোষিত ‘নাম্বার-টু’ মুকুল রায় কি আগের সেই মর্যাদা ফিরে পেয়েছেন? প্রশ্ন তৃণমূলেরই অন্দরে। কারণ, যে ১১ মাস ধরে দিদির সঙ্গে তাঁর দূরত্ব ছিল, সেই সময়টুকু রাহুল গাঁধী থেকে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ— সকলের দরবারে ঘুরেছেন দাদা। তখন তিনি কী করেছেন বা পরে কী করবেন, তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে নানা সন্দেহ আছে। হয়তো আছে দিদিরও। কিন্তু বিধানসভার ভোটের আগে দলের সেরা ভোট-ম্যানেজারকে বাইরে রেখে আর একটি ‘ওয়ার ফ্রন্ট’ খুলতে চাননি দিদি। তাই, মুকুলকে ফের কাছে টেনেছেন। আর তখন থেকেই মুকুলকে ঘিরে নানা প্রশ্ন। মুকুল অবশ্য এ সব নিয়ে প্রশ্নকে আমল দেন না। কিন্তু বুঝতে পারেন, পৃথিবী বদলে গেছে! আগে তাঁর চার পাশে শীর্ষ নেতারা যেমন বলয় তৈরি করতেন, তাঁদের অনেকেই আজ উধাও! দলের এক প্রবীণ নেতার কথায়, ‘‘কাচ ভাঙার পরে জোড়া দিলেও দাগ থেকেই যায়! সব কি আর আগের মতো থাকে?’’

তা যে নেই, বিলক্ষণ বুঝছেন মুকুলের ঘনিষ্ঠেরাও। অনেকেই বলছেন, দিদির সঙ্গে দূরত্বের সময় একটা নতুন দল গড়ে ফেললে এই ভোটে দাদা ‘হিরো’ হতে পারতেন! তাঁর বদলে এখন কী করছেন? না, তারকা-সাংসদ দেবকে নিয়ে এক কেন্দ্র থেকে অন্য কেন্দ্রে ছোটাছুটি!

দাদা অবশ্য এ সবে পাত্তা দিচ্ছেন না। এক সময়ে ক্রিকেট খেলতেন। এখনও ইডেনে ভাল ম্যাচ থাকলে দেখতে যান। অভিজ্ঞতা থেকেই জানেন, স্টেপ আউট করে দুমদাম ছক্কা মারতে গেলে ‘অক্কা’র আশঙ্কা থাকে! ঘনিষ্ঠ মহলে তাই দাদা বলেন, ‘‘ক্রিজে থাকাটা জরুরি। আমি বিশ্বাস করি, ক্রিজে থাকলে রান আসবেই।’’ তাঁর ঘনিষ্ঠেরাও বলছেন, দাদা রাজনীতির খেলা বোঝেন বলেই অনেক কিছু খুইয়েও ক্রিজ কামড়ে পড়ে আছেন!

কিন্তু একা! নন্-প্লেয়িং এন্ডে এক সময়ের সঙ্গীরা
যেন তাঁর সঙ্গে ব্যাট করতেই চাইছেন না! তার একটা ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়েছিল এই সে দিনের ইডেন-সন্ধ্যায় ভারত-পাক দ্বৈরথের আসরে। মাঠের মধ্যে অরূপ-ববি পরিবৃত দিদি, আর ক্লাব হাউসে আমজনতার মধ্যেও একা, নিঃসঙ্গ দাদা!

অথচ দু’বছর আগেও লোকসভা ভোটে দাদাই ছিলেন দিদির প্রধান সেনাপতি। ঠিক তার ন’মাস পরে বনগাঁ ও কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে তিনি দূরে! কলকাতা-সহ ৯২টি পুরসভার ভোটেও
মুকুলকে দূরেই রেখেছিলেন মমতা। পুরভোটের দিন মুকুল কার্যত আত্মগোপন করেছিলেন কলকাতায় তাঁর গোপন ডেরায়।

সেই মুকুল ফিরেছেন তৃণমূল ভবনের ‘ওয়ার রুমে’। কিন্তু দলের রিমোট কন্ট্রোলটা খুইয়ে! মুখে অবশ্য বলছেন, ‘‘একদম আগের মতোই প্রচার থেকে শুরু করে ভোট প্রক্রিয়ার যাবতীয় কাজ করছি!’’ তাঁর ঘনিষ্ঠদের দাবি, ‘‘নারদ-কাণ্ডে দল বেসামাল হওয়ার পরে দিদি মনে করেছেন, মুকুলই এই ঝড়-ঝাপটা সামলাতে পারবেন। তাই এখন তাঁকে নানা জায়গায় প্রচারে পাঠাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগও রাখা হচ্ছে তাঁর মাধ্যমেই।’’ যদিও তৃণমূলের অন্দরে অনেকেই বলছেন, মুকুলের পদাবনতি হয়েছে! ছিলেন সেনাপতি, হয়েছেন সাধারণ ফৌজি।

স্বাভাবিক ভাবেই মুকুল এ কথা মানছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘যুদ্ধের মাঠে দাঁড়িয়ে লড়াই করা এক জন ফৌজিও সৈনিক। একজন ব্রিগেডিয়ারও সৈনিক। আমি নিজেকে তৃণমূলের এক জন সৈনিক বলেই মনে করি। দলে আমার অবস্থানও একই আছে।’’

এক রসিক তৃণমূল নেতার টিপ্পনি, ‘‘আগে যিনি দলনেত্রীর সঙ্গে ওপেনিং পার্টনার থাকতেন, এখন তাঁকে নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে নামতে হচ্ছে। এটাকে কী বলা হবে? প্রোমোশন না ডিমোশন?’’

assembly election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy