Advertisement
১৯ মে ২০২৪

প্রতিরোধের প্রতিশোধ

প্রতিরোধ। প্রতিশোধ। এবং পাল্টা প্রতিবাদ। নদিয়ায় ভোট উত্তর পর্ব চুম্বকে এমনটাই। বাম-কংগ্রেস জোট হওয়ার পরেই তাদের হারানো গড়ে জমি খুঁজে পাচ্ছিল সিপিএম।

আগুনে পুড়ে ছাই সুকুর আলি মণ্ডলের বাড়ি। — নিজস্ব চিত্র

আগুনে পুড়ে ছাই সুকুর আলি মণ্ডলের বাড়ি। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৫৩
Share: Save:

প্রতিরোধ। প্রতিশোধ। এবং পাল্টা প্রতিবাদ।

নদিয়ায় ভোট উত্তর পর্ব চুম্বকে এমনটাই।

বাম-কংগ্রেস জোট হওয়ার পরেই তাদের হারানো গড়ে জমি খুঁজে পাচ্ছিল সিপিএম। যে সিপিএমকে গত পাঁচ বছরে এলাকায় মিটিং-মিছিল দূর অস্ত্, দলীয় কার্যালয়ে তালা খোলার সাহস করতেও দেখা যায়নি, মাস দু’য়েক ধরে তাদেরই শরীরি ভাষা পাল্টে যাচ্ছিল ক্রমশ। তৃণমূলের চোখ রাঙানিতে পাল্টা চোয়াল শক্ত করতে দেখা গিয়েছিল তাদের। ধীরে ধীরে প্রতিরোধের পাঁচিলও ওঠারও খবর আসছিল হরিণঘাটা, গয়েশপুর, কল্যাণীর বিভিন্ন এলাকা থেকে।

ভোটের দু’দিন আগেও সিপিএমের এই ‘জেগে ওঠা’ মেনেও নিয়েছিল শাসক দল। তবে পায়ের তলার জমি হারানোর আশঙ্কা দানা বাঁধতেই ভোটের সকাল থেকেই তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা চেনা সুরে কথা বলতে শুরু করেছিলেন বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শুরু হয়েছিল হুমকি, চাপা শাসানি, মারধরও। তবে, এ বার আর পড়ে পড়ে মার না খেয়ে সিপিএমও পাল্টা প্রতিরোধ, কোথাও বা পাল্টা মারের রাস্তাতে গিয়েছিল বলে জেলা পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ ভাবে দেখতে পারেন, প্রতিরোধ-প্রতিশোধ-এবং পাল্টা প্রতিবাদ!’’

ফল যা হবার তাই হয়েছিল। ভোট মিটলেও গয়েশপুর-কল্যাণী, হরিণঘাটার আনাচকানাচে ভোটের তাপ কমেনি। তারই প্রতিফলন এ দিনের ঘটনা। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ধোঁয়া ও কাশির দমকে ঘুম ভেঙে যায় হরিণঘাটার জোট প্রার্থীর এজেন্ট সুকুর আলি মণ্ডলের। সুকুর জানান, বাড়িতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। কোনও মতে স্ত্রী ও ১৩ বছরের ছেলেকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। তাঁর চিৎকারে পাড়ার বাসিন্দারা ছুটে এলেও তখন আর কিছু করার ছিল না। চোখের সামনেই ছাই হয়ে যায় তাঁর বাড়ি। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের লোক তাঁর বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।

সিপিএম প্রার্থী অজয় দাসের পোলিং এজেন্ট সুকুরের অভিযোগ, এক সময় তিনি তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি ছিলেন। তাঁর স্ত্রী রোকেয়া বিবি মণ্ডল তৃণমূলের টিকিটে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হয়েছিলেন। গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে স্বজন পোষণের অভিযোগ তুলে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন। সেই পঞ্চায়েত হাতছাড়া হয় তৃণমূলের। এ বারে জোট প্রার্থীর হয়ে মিটিং, মিছিল করায় তৃণমূল তাঁকে হুমকি দিচ্ছিল। অজয়বাবুর দাবি, ‘‘বুথে আমি থাকায় ভোটের কোনও গণ্ডগোল করতে পারেনি তৃণমূল। বাড়ি পুড়িয়ে তারই বদলা নিল ওরা।’’'

ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে হরিণঘাটা-হাবড়া রাজ্য সড়ক অবরোধ করা হয়। সিপিএম ও কংগ্রেসের স্থানীয় নেতারা থানার সামনে আসেন। ঠিক সেই সময়েই থানায় এসেছিলেন তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য তথা এলাকার দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা চঞ্চল দেবনাথ। অভিযোগ, জোটের লোকজন তাঁকে মারধর করে। পাল্টা তৃণমূলের লোকজনও জোটের লোকজনকে মারধর করে বলে অভিযোগ।

চঞ্চলবাবুর দাবি, বৃহস্পতিবার রাতে সিপিএমের লোকেরা তাঁর দলের দুই কর্মীকে মারধর করেছে। সেই অভিযোগ জানাতেই তিনি থানায় এসেছিলেন। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। জোটের অভিযোগ, থানায় ঢোকার আগে তাদের কর্মীদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন চঞ্চলবাবু। তারপরেই একটা ধাক্কাধাক্কি হয়। অভিযোগ অস্বীকার করে ক্ষুব্ধ-হতাশ চঞ্চলবাবু বলছেন, ‘‘বামেদের ভরা বাজারেও ওদের হাতে মার খেতে হয়নি। আর আজ মার খেতে হল!’’

ভোটের পরে গণ্ডগোল হয়েছে জেলার অন্য প্রান্তেও। ফতোয়া না মেনে ভোট দিতে যাওয়ায় ‘অপরাধে’ এক আদিবাসী পরিবারের উপরে চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শুক্রবার বিকেলে ভাজনঘাট সর্দারপাড়ার বাসিন্দা সিপিএম কর্মী অভিরাম সর্দারের বাড়িতে ঢুকে তাঁকে মারধর করে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। কিন্তু পুলিশের গাড়ি চলে যেতেই রাত ৮টা নাগাদ তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ফের অভিরামের বাড়িতে হামলা চালায়। অভিরামের ভাই প্রবীর সর্দারকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। সিপিএমের মাজদিয়া লোকাল কমিটির সদস্য নারায়ণ ঘোষ বলেন, ‘‘অভিরাম সর্দার আমাদের দলের সক্রিয় কর্মী। তৃণমূল তাই হামলা করেছে।’’ তৃণমূল প্রার্থী সত্যজিৎ বিশ্বাস অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

হাঁসখালির কৈখালি এলাকায় তৃণমূলের শাসানিতে ভোটের আগে থেকেই চাপে ছিল কংগ্রেস-সিপিএম। বাড়ি ভাঙচুর, সিপিএমের প্রার্থী ও এলাকার কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাতে কৈখালিতে পাল্টা আঘাত করেছে সিপিএম। চাকদহের পালপাড়ায় সম্রাট বিশ্বাস নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ওই যুবককে নিজেদের দলীয় কর্মী বলে দাবি করে তৃণমূল অভিযোগের আঙুল তুলেছে জোটের দিকে। কংগ্রেস-তৃণমূল জোট অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Vote Nadia Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE