Advertisement
১৯ মে ২০২৪

টাকা গেল তবু টিকিট জুটল না, চিঠি দিলীপকে

রাত পোহালেই ভোটের ফল। তার ঠিক আগেই বিজেপির জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে ‘প্রার্থিপদ পাইয়ে দেওয়া’র নাম করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠল পুরুলিয়ায়। এবং অভিযোগকারী নিজেও এক জন বিজেপি কর্মী!

দিলীপ ঘোষ

দিলীপ ঘোষ

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৬ ০৪:৩২
Share: Save:

রাত পোহালেই ভোটের ফল। তার ঠিক আগেই বিজেপির জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে ‘প্রার্থিপদ পাইয়ে দেওয়া’র নাম করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠল পুরুলিয়ায়। এবং অভিযোগকারী নিজেও এক জন বিজেপি কর্মী!

রঘুনাথপুর কেন্দ্রে তাঁকে টিকিট পাইয়ে দেবেন প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর কাছ থেকে নগদ ৬৫ হাজার টাকা নিয়েছেন বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিকাশ মাহাতো—এমনই অভিযোগ করেছেন রঘুনাথপুর শহর লাগোয়া গোপীনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা অজিত বাউরি। তবে, থানা-পুলিশ না করে স্পিড পোস্ট মারফত দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। টাকা যাতে ফেরত পান, তার ব্যবস্থা করার আর্জি রাজ্য সভাপতির কাছে জানিয়েছেন অজিতবাবু। ঘটনাচক্রে দিলীপবাবু রাজ্য সভাপতি হওয়ার পরেই পুরুলিয়ায় জেলা সভাপতি বিকাশবাবু। দিলীপবাবু মঙ্গলবার বলেন, ‘‘অভিযোগপত্র এখনও হাতে আসেনি। এলে আমরা অবশ্যই তদন্ত করব। অভিযোগ প্রমাণিত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’’

ভোট শুরু হওয়ার আগে একই ধরনের ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল বর্ধমানের ভাতারের বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক বনমালী হাজরার। তবে টিকিটের বদলে টাকা নেওয়ার নয়, বরং দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। পুরুলিয়ার ক্ষেত্রে অবশ্য অভিযোগ গুরুতর। কারণ, খোদ জেলা সভাপতির বিরুদ্ধেই টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিকাশবাবু ও তাঁর অনুগামীদের অবশ্য দাবি, দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। বিকাশবাবু বলেন, ‘‘দলে আমার নেতৃত্ব যারা মানতে পারছে না, আমাকে পছন্দ করছে না, তারাই উস্কানি দিয়ে এই ধরনের অভিযোগ করাচ্ছে।’’ তবে অভিযোগকারী তাঁর অপরিচিত নন বলেও তিনি জানিয়েছেন।

এমনিতে অজিতবাবু রঘুনাথপুরে বিজেপি-র দীর্ঘদিনের কর্মী। শাঁকা অঞ্চলের প্রাক্তন সভাপতিও। গ্রামে তাঁর ইমারতি দ্রব্যের কারবার। গত লোকসভা ভোটে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো রঘুনাথপুরেও চমকপ্রদ ফল করেছিল বিজেপি। পুরসভা এলাকায় তারা তৃণমূলের চেয়েও বেশি ভোট পেয়েছিল। গত বছর পুরভোটেও প্রথমবার রঘুনাথপুরে একটি আসন দখল করে বিজেপি। দু’টি আসনে ছিল দ্বিতীয় স্থানে। গত বছরই রঘুনাথপুর কলেজের ছাত্র সংসদের ৪২টি আসনের মধ্যে ১৯টি পেয়ে সবাইকে আরও চমকে দেয় গেরুয়া শিবির। পুরুলিয়ার জেলার শিল্পাঞ্চল হিসাবে পরিচিত রঘুনাথপুর। কাছেই আসানসোল শিল্পাঞ্চল। সঙ্গে রয়েছে অবৈধ কয়লার কারবার। সব মিলিয়ে এখানে টিকিট পাওয়ার দাবিদার ছিলেন অনেকেই। শেষ অবধি শিকে ছেঁড়ে সুভাষ মণ্ডল নামে এক কর্মীর।

এটা ঘটনা যে, বিকাশ মাহাতোকে জেলা সভাপতি করার পর থেকেই পুরুলিয়া বিজেপি-তে কোন্দল চরমে উঠেছে। তাঁকে অপসারণের দাবিতে চলতি ফেব্রুয়ারিতেই পোস্টার পড়েছে জেলা কার্যালয়ে। দলের বড় অংশের কর্মীই তাঁর নেতৃত্ব মেনে নিতে পারছেন না। ফলে, টিকিটের বদলে টাকা নেওয়ার অভিযোগের পিছনে ‘চক্রান্ত’-এর তত্ত্বও পুরোপুরি খারিজ করতে পারছেন না দলের একাংশ।

অজিতবাবু দাবি করছেন, তাঁর অভিযোগ মিথ্যা নয়। বরং রঘুনাথপুর কেন্দ্রে তাঁকে প্রার্থী করার আশ্বাস দিয়ে দুই দফায় মোট ৬৫ হাজার টাকা ও সাড়ে ছ’হাজার টাকা দামের একটি মোবাইল তাঁর কাছ থেকে নিয়েছেন দলের জেলা সভাপতি। তিনি বলেন, ‘‘বিকাশবাবু আমাকে বলেছিলেন, এই টাকা রাজ্য পার্টি অফিসে দিতে হবে।” দলেরই এক কর্মী এই ঘটনার সাক্ষী জানিয়ে তাঁর দাবি, রাজ্য সভাপতির কাছে পাঠানো অভিযোগে ওই কর্মীর নাম উল্লেখ করেছেন।

এত দিন পরে অভিযোগ কেন? অজিতবাবুর জবাব, ‘‘রঘুনাথপুরে অন্য এক জনকে প্রার্থী ঘোষণার পরেই টাকা ফেরত চেয়েছিলাম। বিকাশবাবু অন্তত কুড়ি বার টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আমাকে ঘুরিয়েছেন। বাধ্য হয়ে রাজ্য নেতৃত্বকে সব জানালাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE