Advertisement
E-Paper

সন্ত্রাসের শিকার শিশুরাও, জানেই না সুরক্ষা কমিশন

বড়দের ভোটে বড়রা ছাড়াও সন্ত্রাসের কোপে পড়েছে এ রাজ্যের দু’টি শিশু। তা নিয়ে পুলিশ ও নির্বাচন কমিশন নিজেদের মতো করে নড়েচড়েও বসেছে। তোলপাড় চলছে সংবাদমাধ্যম থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩১

বড়দের ভোটে বড়রা ছাড়াও সন্ত্রাসের কোপে পড়েছে এ রাজ্যের দু’টি শিশু। তা নিয়ে পুলিশ ও নির্বাচন কমিশন নিজেদের মতো করে নড়েচড়েও বসেছে। তোলপাড় চলছে সংবাদমাধ্যম থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু এ রাজ্যে নাবালক-নাবালিকাদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখার মূল দায়িত্ব যে-কমিশনের কাঁধে, সেই শিশু সুরক্ষা কমিশন বুধবার দুপুর পর্যন্ত ওই দু’টি ঘটনার একটির কথাও জানত না!

এটা অসাড়তা না উদাসীনতা?

রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান অশোকেন্দু সেনগুপ্ত আনন্দবাজারের কাছ থেকেই জোড়া শিশু-নিগ্রহের বৃত্তান্ত শোনেন। তার পরে বলেন, ‘‘আমি বাইরে ছিলাম। তাই বিষয়টি জানি না।’’

কিন্তু চেয়ারম্যান ছাড়াও তো কমিশনের অন্য কর্মী-অফিসারেরা আছেন। তাঁরাই বা ঘটনার কথা জানতে পারলেন না কেন? কেন তাঁরা কোনও ব্যবস্থা নিলেন না? তাঁরা তো অশোকেন্দুবাবুকে বিষয়টি জানাতে পারতেন। সেটুকুও করলেন না কেন?

নির্বাচনী ব্যস্ততার দোহাই দিচ্ছেন চেয়ারম্যান। তাঁর জবাব, ‘‘শিশু সুরক্ষা কমিশনে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা এখন ভোটের কাজে ব্যস্ত।’’

উত্তর ২৪ পরগনায় ভোটের আগের দিন অর্থাৎ রবিবার হালিশহরের টিটু সমাজপতির বাড়ি আক্রমণ করে স্থানীয় দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ, টিটুবাবুরা বাম সমর্থক বলেই তাঁর বাড়িতে সমাজবিরোধী পাঠিয়েছিল শাসক দল। সেই হামলায় টিটুবাবু এবং তাঁর মেয়ে দেবশ্রী তো মার খেয়েছিলেনই, রেহাই পায়নি দেবশ্রীর তিন বছরের মেয়ে সায়ন্তিকাও। শিশুটির হাত মুচড়ে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি আক্রমণকারীরা। বাঁশের বাড়িও মারে তার হাতে। আহত মেয়েকে কোলে নিয়েই ভোট দিয়ে প্রতিবাদের মুখ হয়ে উঠেছেন দেবশ্রী। তাঁর শিশুকন্যাও আলোচনার কেন্দ্রে। শুধু শিশু সুরক্ষা কমিশনই সেই খবর রাখার তাগিদ দেখায়নি।

শিশু সুরক্ষা কমিশন উদাসীন ভাঙড়ের স্কুলছাত্র সাহিন মোল্লার উপরে অত্যাচারের ঘটনাতেও। ভাঙড়ের হরিহরপুর-পালপাড়ার বাসিন্দা সাহিন মঙ্গলবার বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিল। ঘুড়ি বানানো হয়েছিল শাসক দলের ফেস্টুন-পতাকা ছিঁড়ে। ‘চাচাদের’ হম্বিতম্বির মুখে সাহিন কবুলও করে নেয়, ফেস্টুন-পতাকা ছেঁড়াটা যে অন্যায়, সেটা তার জানা ছিল না। কিন্তু ‘চাচারা’ তার ভুলস্বীকারে কান দেয়নি। অত্যাচার শুরু হয় ঈশ্বরীপুর মর্জিনা বিদ্যা নিকেতনের পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া সাহিনের উপরে। প্রথমে তাকে মাঠের পাশে একটি গাছে বেঁধে মারধর করা হয়। তার পরে গাছের গুঁড়িতে মাথা ঠুকে দেওয়ায় জ্ঞান হারায় সে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়।

সায়ন্তনীর মতো সাহিন-নিগ্রহ নিয়েও সরব হয়েছে সংবাদমাধ্যম। সোশ্যাল মিডিয়াও। হাত গুটিয়ে বসে আছে শুধু শিশু সুরক্ষা কমিশন। কারণ, তারা নাকি ওই জোড়া শিশু-নিগ্রহের কথা জানতই না! দু’টি ঘটনাতেই থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও শিশু সুরক্ষা কমিশন নড়েচড়ে না-বসায় কিছুটা অবাকই হচ্ছেন শিশু অধিকার ও সুরক্ষা নিয়ে কর্মরত সমাজকর্মীরা।

অনেকে অবশ্য বলছেন, শিশু সুরক্ষা কমিশনের এমন নীরবতা বা নিষ্ক্রিয়তা নতুন নয়। শিশু-নাবালক
নিগ্রহের অভিযোগ উঠুক বা জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির বিরুদ্ধে বিধি ভাঙার অভিযোগ, শিশু সুরক্ষা কমিশনকে বিশেষ সক্রিয় হতে দেখা যায় না। যেমন, কয়েক মাস আগে গাইঘাটায় পাঁচ বছরের একটি শিশুকন্যার উপরে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে প্রতিবেশী এক নাবালকের বিরুদ্ধে। থানায় অভিযোগ করার পরে পুলিশ সেই নাবালককে পাকড়াও করে এবং ছেড়েও দেয়। নিয়ম মেনে তাকে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের সামনে হাজির করানো হয়নি। সেই ঘটনায় রাজ্য মহিলা কমিশন সক্রিয় হলেও শিশু সুরক্ষা কমিশনের তরফে কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি।

সমাজকর্মীদের অনেকে বলছেন, জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট অনুযায়ী শিশু কল্যাণ সমিতিতে পাঁচ জন সদস্য থাকতেই হবে। কিন্তু উত্তর ২৪ পরগনা জেলা শিশু কল্যাণ সমিতি চেয়ারম্যান এবং মাত্র আর এক জন সদস্য নিয়ে কাজ করে গেলেও শিশু সুরক্ষা কমিশন কোনও হস্তক্ষেপ করেনি। ‘‘ভোট-সন্ত্রাসে নিগৃহীত শিশুদের ক্ষেত্রেও কমিশনের চুপ করে থাকা তাই অস্বাভাবিক নয়,’’ মন্তব্য শিশু কল্যাণ সমিতির এক সদস্যের।

সংবাদমাধ্যমের কাছে এ দিন জোড়া শিশু-নিগ্রহের বৃত্তান্ত শুনে শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রধান অশোকেন্দুবাবু অবশ্য নড়েচড়ে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন। কী বলেছেন তিনি?

আজ, বৃহস্পতিবার কমিশনের পক্ষ থেকে দু’টি ঘটনার বিষয়েই থানা থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হবে, জানাচ্ছেন কমিশনের চেয়ারম্যান।

assembly election 2016 Children Terror
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy